ইংল্যান্ডের ফুটবল ভক্তরা চলতি মৌসুমে গর্বিত ও সৌভাগ্যবানই বটে। চ্যাম্পিয়নস লিগ বলুন বা ইউরোপা লিগ, ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের সব জায়গায় ইংলিশ ক্লাবের জয়জয়কার।
তবে ইংলিশ ফুটবলে তার চেয়ে বড় আলোচনা এখন প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে। এমন একটি আশ্চর্য ও নাটকীয় মৌসুম কবে হয়েছিল? অনেকে জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৮-১৯ মৌসুমই প্রিমিয়ার লিগের সেরা মৌসুম।
২০১১-১২ মৌসুমেও শিরোপার জন্য শেষ মুহূর্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ৮৯ পয়েন্ট নিয়ে সেবারও নাটকীয়ভাবে শিরোপা জেতে ম্যানচেস্টার সিটি। সমান পয়েন্ট থাকা সত্ত্বেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল দ্বিতীয় হয়ে।
ইতালিয়ান কোচ রবার্তো ম্যানচিনির হাত ধরে প্রিমিয়ার লিগে সিটির রাজত্ব শুরু। ইতিহাদের সেই রাজত্ব এখন শাসন করছেন পেপ গার্দিওলা। সিটিকে টানা দুইবার প্রিমিয়ার লিগ জেতালেন তিনি।
তবে এবার প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম দাবীদার ছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলও। পুরো মৌসুমটাই সিটির সঙ্গে তাদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলেছে। একবার অল রেডসরা সিংহাসন দখল করে তো আরেকবার সিটিজেনরা। এ যেন, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী। ’
অবশ্য শেষ যাত্রায় শিরোপাটা উঠলো গার্দিওলার শিষ্যদের হাতে। তাও অাবার এক পয়েন্টের ব্যবধানে। ৩৮ ম্যাচের লড়াই শেষে ৩২ জয়, ৪ পরাজয় ও ২ ড্রয়ে সিটির পয়েন্ট ৯৮। আর ৩০ জয় ১ পরাজয় ও ৭ ড্র নিয়ে ৯৭ পয়েন্ট লিভারপুলের।
২৯ বছরের প্রিমিয়ার লিগ খরা কাটানোর শেষ সিঁড়িতে দাঁড়িয়েছিল অল রেডসরা। কিন্তু সেই প্রতীক্ষা আবারও বাড়িয়ে দিল ম্যানসিটি।
রোববার (১২ মে) অ্যানফিল্ডে যখন লিভারপুল খেলতে নেমেছিল উলভসের বিপক্ষে তখন একই সময় ব্রাইটনের মাঠে অতিথি হয়ে গিয়েছিল সিটি। শিরোপার জন্য অলরেডসদের দরকার ছিল জয়। সঙ্গে আর হার বা ড্র করতে হতো গার্দিওলার শিষ্যদের।
লিভারপুল সাদিও মানের জোড়া গোলে জয় পেল ঠিকই। কিন্তু সেই জয় ম্লান করে ব্রাইটনের মাঠে শিরোপা উৎসব করল সিটি। পিছিয়ে পড়েও গার্দিওলার দল জিতল ৪-১ ব্যবধানে। ইতিহাসে প্রথমবার ব্যাক টু ব্যাক প্রিমিয়ার লিগ জিতল সিটি। গত মৌসুমে তারা শিরোপা জিতেছিল রেকর্ড ১০০ পয়েন্ট নিয়ে।
৯৭ পয়েন্ট পেয়েও শিরোপা জেতেনি কোনো ক্লাব এমন ইতিহাস প্রিমিয়ার লিগে নেই। হতাশার ইতিহাস করেও অবশ্য খুশি ক্লপ, ‘আমরা আমাদের ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলাম, তা আমরা পেরেছি। ’
আর গার্দিওলার কণ্ঠে ছিল নিজ দলের প্রশংসা। এই দলটি সিটির ইতিহাসে সেরা কিনা তার উত্তরে স্প্যানিশ কোচ বলেন, ‘যদি লোকজন দলটি নিয়ে ১০, ১৫ বা ২০ বছর কথা বলে তাহলে এটিই সর্বকালের সেরা দল।
তবে লিভারপুল একটা জায়গায় গর্ব করতে পারে। টানা দুই মৌসুমেই যে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তারা। সেখানে গার্দিওলার সাফল্য বলতে গেলে কোয়ার্টার ফাইনাল।
মৌসুমে দুই দলের দ্বৈরথে চাপা পড়ে গেছে টটেনহ্যাম, চেলসি, আর্সেনাল ও ইউনাইটেডের মতো দলগুলোর লড়াই। ইউনাইটেডকে ভুগতে হয়েছে শেষ ম্যাচেও। ওল্ড ট্রাফোর্ডে হার দিয়ে শেষ হয়েছে তাদের মিশন। ষষ্ঠ স্থানে থাকায় রেড ডেভিলসদের চ্যাম্পিয়নস লিগ দূরে থাক, ইউরোপা লিগে খেলতে হবে কোয়ালিফায়ার ম্যাচ।
সিটি-লিভারপুল ছাড়াও আগামী মৌসুমে সরাসরি চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলবে তৃতীয় স্থানে থাকা টটেনহ্যাম ও চতুর্থ দল চেলসি। পঞ্চম স্থানে থাকা আর্সেনাল সরাসরি খেলবে ইউরোপা লিগে, তবে গানারদের চ্যাম্পিয়নস লিগেও খেলার সুযোগ রয়েছে। যদি উনাই এমেরির শিষ্যরা এই মৌসুমে ইউরোপা লিগ জিততে পার তবেই খেলবে ইউরোপ সেরার সর্বোচ্চ আসরে। তালিকার শেষ তিন দল কার্ডিফ সিটি, ফুলহাম ও হাডার্সফিল্ড পড়েছে রেলিগেশনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৯
এমএমএস