স্প্যানিশ মডেল জর্জিনা সেই কঠিন সময় কিভাবে পাড়ি দিয়েছেন এবং ভালবাসার মানুষ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কিভাবে ভাগাভাগি করেন তা নিয়ে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দ্য সান-কে। নিচে তার কিছু চুম্বক অংশ পাঠকদের উদ্দেশে দেওয়া হলো।
সম্প্রতি ইয়ামামে নামের এক অন্তর্বাস কোম্পানির মডেল হয়েছেন রদ্রিগেস। যেখানে অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায় বিভিন্ন ভঙ্গিতে দেখা যায় তাকে। মডেলিংয়ে ফেরা নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে ২৫ বছর বয়সী জর্জিনা বলেন, ‘বিখ্যাত কারো জীবনসঙ্গী হওয়া খুব সহজ নয় কিন্তু আমি এই নিয়ম পরিবর্তন করতে পারব না। যেকোনো চাপের সময় আমি তার (রোনালদো) জন্য যা অনুভব করি তা অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আছে। তবে একজন আরেকজনকে সম্মোহিত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ’
রোনালদো এবং রদ্রিগেসের সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০১৬ সালে, স্পেনে। সিআর সেভেন সেবার রিয়াল মাদ্রিদকে জয় এনে দিয়ে দলের ‘গ্রেটেস্ট অব দ্য গ্যালাকটিকোস’ নামে ভূষিত হোন। দুজনের মধ্যে প্রথমদিকের সাক্ষাৎ ও প্রেমের কথা স্মরণ করেন রদ্রিগেস, ‘আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয় গুচ্চিতে (ফ্যাশন কোম্পানি)। যেখানে আমি সহকারী সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতাম। দিন কয়েক পর আমাদের আবার দেখা হলো আরেকটি বড় ব্র্যান্ড ইভেন্টে। আমার কাজের পরিবেশের বাইরে, এমন একটা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ আবহে আমরা কথা বললাম। প্রথম দর্শনেই আমরা দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে গেলাম। ’
সাক্ষাতের পরের বছরের নভেম্বরে কন্যা সন্তান অ্যালেনাকে জন্ম দেন জর্জিনা। এর ৫ মাস পরই ৩৪ বছর বয়সী রোনালদোর ঘরে আসে দুই যমজ সন্তান- এভা ও মাতেও। অবশ্য তাদের মায়ের নাম কখনো জনসম্মূখে আনেননি পর্তুগিজ উইঙ্গার। রোনালদো-জর্জিনা পরিবারের সন্তানদের মধ্যে সবার বড় ৯ বছর বয়সী রোনালদো জুনিয়র। জুভ ফরোয়ার্ডের প্রথম সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন এক মার্কিন নারী।
গত বছর ১০০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’তে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার পর থেকে তুরিনের এক আট বেডরুমের ম্যানশনে বাস করছেন রোনালদো-জর্জিনা। আর্জেন্টিনায় জন্ম হলেও জর্জিনার জাতীয়তা স্প্যানিশ। অবশ্য ইতালিতেও যে তার দিন খারাপ কাটছে না তাই জানালেন তিনি, ‘আমি তুরিনকে ভালবাসি। আল্পস পর্বতের নিচে এর অবস্থান, মিলানের পাশে এবং স্পেনের কাছাকাছি। ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্প ও ফ্যাশনের মিশেলে ইতালি চমৎকার এক দেশ এবং আমি জুভেন্টাস পছন্দ করি। ’
কয়েক মাস আগে জন্মদাতাকে হারিয়েছেন জর্জিনা। সাক্ষাৎকারে উঠে এলো তার পিতৃবিয়োগের কষ্টও, ‘দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভোগার পর কয়েক মাস আগে আমার বাবা মারা গেছেন। আমি তখন উপলব্ধি করেছি সত্যিকার অর্থে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী। তা হচ্ছে স্বাস্থ্য। এটাই আমার সবচেয়ে বড় বিলাসিতা। স্বাস্থ্য ছাড়া আমরা কিছুই নই। ’
জর্জিনা যে কেবল মডেলিং করেন তা নয়। ২৫ বছর বয়সী তারকাকে সামলাতে হয় রোনালদোর পরিবার, যার মধ্যে আছে ছোট চার বাচ্চা। অর্থই যে সবকিছু নয় তাও ওঠে এলো জর্জিনার কণ্ঠে, ‘অর্থনৈতিক সম্পদ থাকা ভালো। কিন্তু এটা আপনাকে সমস্যাতেও ফেলতে পারে। ভালো আচরণের জন্য আপনার নিজের ওপর প্রচুর নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। মাঝেমধ্যে টাকার সঙ্গে লেনদেন করা খুব সহজ বিষয় নয়। এটা আপনাকে শান্তি দেয় না। টাকা আপনাকে সাহায্য করবে কিন্তু টাকাই জীবনের সবকিছু নয়। ’
আর দশটা সাধারণ গৃহিণীর মতো সন্তানদের ঘুম থেকে জাগানো, তাদের পোশাক পরিধান করানো এবং সকালের নাস্তা প্রস্তুত করতে হয় জর্জিনাকে। দৈনন্দিন রুটিন কিভাবে কাটান, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাইরে থাকার চেয়ে আমি চেষ্টা করি বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকতে। অন্যান্য মায়েদের চেয়ে আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাই। এমন কিছু কাজ রয়েছে যা ঘরে বসে থাকাকে আরো সহজ করে। আমি যখন নিজের ক্যালেন্ডার ঠিক করি, চেষ্টা করি যতটকু সম্ভব পরিবারকে সময় দিতে। পরিবারই আমার কাছে আগে প্রাধান্য পায়। ’
সাম্প্রতিক সময়ে তার অন্তর্বাস ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের অতীত স্মৃতি হাতড়ে বেড়ালেন জর্জিনা। মেয়েদের শারীরিক সৌন্দর্যের বিষয়টাও উঠে এলো তার কণ্ঠে, ‘ছোটবেলায় আমি খুব পাতলা ছিলাম এবং চেষ্টা করতাম মোটা হতে। কিন্তু এখন পাতলা শরীরেই সুন্দর দেখায়। আমি বলি, নিজের আসল শরীর নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন। আমি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে ও ব্যায়াম করতে পছন্দ করি। যেসব মেয়েরা ম্যাগাজিনটি পড়েছে বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তারা হয়তো তেমন চাপ অনুভব করে না। আমি মনে করি তোমার নিজেকেই নিজে বেশি ভালবাসতে হবে। মোটের ওপর নিজের সৌন্দর্যকে নিজেরই তৈরি করতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৯
ইউবি/এমএমএস