ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

অ্যাথেন্সে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন শাখতার দোনেৎস্কের

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
অ্যাথেন্সে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন শাখতার দোনেৎস্কের

রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের ক্রীড়াজগত থমকে আছে। বাদ যায়নি ফুটবলও।

দেশটির ফুটবল ক্লাবগুলো এই যুদ্ধাবস্থায় মাঠে নামার কথা চিন্তাও করতে পারছে না। তবে এরমধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম শাখতার দোনেৎস্ক। ইউক্রেনের শীর্ষ পর্যায়ের সফলতম ক্লাবটি সম্প্রতি একটি চ্যারিটি ম্যাচে মাঠে নেমেছিল।

গত ৯ এপ্রিল গ্রীসের রাজধানী অ্যাথেন্সে গ্রিক ক্লাব অলিমিয়াকোসের বিপক্ষে একটি ক্লাব প্রীতি ম্যাচ খেলে শাখতার দোনেৎস্ক। কারাইসকাকিস স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ০-১ গোলে হেরে যায় ইউক্রেনীয় জায়ান্টরা। তবে ম্যাচের জয়-পরাজয় ছাপিয়ে রুশ হামলায় বিপর্যস্ত ইউক্রেনের একটি ক্লাবের ফের মাঠে নামার ঘটনাই বেশি সাড়া ফেলেছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য আরও মহৎ। শান্তির বার্তা নিয়ে শাখতার বিভিন্ন দেশে সফর শুরু করেছে। গ্রীসে তাদের ম্যাচ দেখতে হাজির হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার দর্শক।  অল্প সময়ের নোটিশে আয়োজিত ম্যাচটি থেকে প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ইউরো আয় হয়েছে, যা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনীয়দের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে।

শাখতার দোনেৎস্ক ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের বেশ পরিচিত নাম। ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল আসরগুলোতে প্রায় নিয়মিত দেখা যায় তাদের। কিন্তু ২০১৪ সালে নিজ ভূমি থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয় রুশ-সমর্থিত বাহিনী। পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অ্যারেনা ছিল তাদের ঘরের মাঠ। কিন্তু হামলার পর ঠিকানাহীন হয়ে পড়ার পর ২০২০ সালের আগে তাদের লেভিভ শহর থেকে ১২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে সরে যেতে হয়। এরপর তাদের ঠিকানা হয় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ।

সম্প্রতি রুশ হামলার পর ফের ঘরছাড়া হতে হয়ে শাখতার দোনেৎস্ককে। এবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। কারণ এবারের যুদ্ধে জ্বলছে পুরো ইউক্রেন। যেহেতু ইউক্রেনের ফুটবল এখন বন্দি অবস্থায়, তাই কার্যত ক্লাবগুলোর পক্ষে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অসম্ভব। রুশ হামলার পর দেশটির প্রিমিয়ার লিগ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। খেলোয়াড়রা বাধ্য হচ্ছেন বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকতে। সেখান থেকে তারা যে শহরটিকে তারা ঘর মনে করতো তা ধ্বংস হতে দেখছেন। তারা হয়তো জানেনই না যে, তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কেউ বেঁচে আছেন কি না।

তবে গত শনিবারটা ছিল অন্যরকম। কারণ গহীন অন্ধকারেও আলোর ঝলকানি দেখা মিললো শাখতারের তরফে। সেই মধ্য-ফেব্রুয়ারির পর মাঠে ফিরলো তারা, যা আবার যুদ্ধ শুরুর পর কোনো ইউক্রেনীয় ক্লাব হিসেবে প্রথম। ঘর থেকে ১৫৫০ মাইল দূরে অ্যাথেন্স শহরে ফুটবলীয় প্রত্যাবর্তন হলো তাদের। ম্যাচটি আয়োজন করতে পেরে গর্বিত অলিম্পিয়াকোস ক্লাবও। ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর ক্রিস্টিয়ান কারেমবেউ বলেন, 'আমরা ফুটবলকে শান্তির কাজে লাগাতে চাই। যুদ্ধের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করার উদ্দেশ্যে ম্যাচটি আয়োজন করে আমরা গর্বিত। ' 

শাখতার দোনেৎস্ক ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর দারিজো স্রনা বলেন, "আমরা দলটাকে নিয়ে গর্বিত। গত ১৯ জানুয়ারি দলটি সর্বশেষ ট্রেনিং করা সুযোগ পেয়েছিল। আমি তাদের কাছে আজকের ম্যাচটি খেলার জন্য প্রস্তুত আছে কি না জানতে চাইলে তারা বলে, 'আমরা ইউক্রেনীয়, আমর সবকিছুর জন্য প্রস্তুত। তারা মাত্র একটি সেশন অনুশীলন করেই মাঠে নেমেছে। তাদের কেউ কেউ এই দলটির হয়ে প্রথমবার খেলছে। কারণ ৭-৮ জন খেলোয়াড়কে আমরা ধারে মারিউপোল থেকে এনেছি। 'মারিউপোলের অধিনায়ক দিমিত্রো মাইশনিভ যুদ্ধে নিজের বাড়ি-গাড়ি-এপার্টমেন্ট সব হারিয়েছে। আমরা তাকে আমাদের সঙ্গে খেলার জন্য এনেছি। সে আজ মারিউপোলের প্রতীক। আমরা এটা নিয়ে গর্বিত। "

যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ ইউক্রেনীয়দের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে কারাইসকাকি স্টেডিয়ামের একটি অংশ বন্ধ রাখা হয়। সেখানকার সিটগুলোতে রুশ হামলায় নিহত ইউক্রেনীয় শিশুদের স্মরণে খেলনা সাজিয়ে রাখা হয়। মাঠে খেলার সময় খেলোয়াড়দের জার্সিতে লেখা ছিল 'যুদ্ধ বন্ধ করো'। সেই সঙ্গে জার্সির পেছনের অংশে খেলোয়াড়দের নামের জায়গায় লেখা ছিল যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইউক্রেনীয় শহরগুলোর নাম। শুধু কি তাই, শাখতার দলকে অ্যাথেন্সে দুই মাস থাকার পাশাপাশি অনুশীলন সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অলিম্পিয়াকোসের মালিক ইভানজেলোস মারিনাকিস। তবে শাখতার তাদের এই প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে।

শাখতার দোনেৎস্ক তাদের চ্যারিটি সফরের অংশ হিসেবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রীতি ম্যাচ খেলবে। আগামী ১৪ এপ্রিল পোল্যান্ড, ১৯ এপ্রিল তুরস্ক এবং ১ মে ক্রোয়েশিয়ায় খেলতে যাবে তারা। এরপর তাদের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাদের মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই ফের নিজেদের ঘর দোনেৎস্কে, নিজেদের দর্শকদের সামনে খেলা। এ নিয়ে স্রেনা বলেন, 'বিশ্বে আর কোনো ক্লাব খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা ৮ বছরে দুইবার ঘরছাড়া হয়েছে। ২০১৪ সালে আমরা দোনেৎস্ক, ডনবাস অ্যারেনা, আমাদের দর্শক, আমাদের শহর, আমাদের ঘর হারিয়েছি। আমরা কিয়েভে গেলাম, কিন্তু ৮ বছর পর সেখানেও যুদ্ধ শুরু হলো। আমি বিশ্বকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাই। শুধু কথায় কাজ হবে না, আমাদের অবশ্যই ইউক্রেনের ওপর চলমান আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। কারণ ইউক্রেন শুধু ৪৪ দিনের জন্য নয়, ৮ বছর ধরেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। '

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।