ঢাকা, বুধবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

বাবাকে আর রিকশা চালাতে দেব না : সবুজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২২
বাবাকে আর রিকশা চালাতে দেব না : সবুজ

‘বাবাকে আর রিকশা চালাতে দেব না। এখন থেকে আমিই পরিবারের হাল ধরব।

বাবা-মা জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। এবার তাদের মুখে হাসি ফোটানো দায়িত্ব আমার’- কথাগুলো সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সেন্টার ব্যাক মো. সবুজ হোসেনের। গতকাল (৩ জুলাই) মুন্সিগঞ্জ স্টেডিয়ামে আবাহনীর বিপক্ষে দারুণ এক গোল করেন সাইফের এ ফুটবলার। তার গোলেই ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতি যায় সাইফ। ম্যাচটি শেষে ৪-২ গোলের বড় ব্যবধানে জিতে নেয় সবুজরা।

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হাউজিং সি ব্লকের বাসিন্দা নওশের মন্ডল। রিকশা চালিয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্যের আহারের ব্যবস্থা বছরের পর বছর নিয়ম মেনে করে যাচ্ছেন। নওশের মন্ডলের ছোট ছেলে সবুজ। ফুটবলের কল্যাণে যিনি আজ সকলের কাছে পরিচিত, সমাদৃত। আবাহনীর জালে কাল গোল দিয়ে সেই পরিচিতির ব্যপ্তিটা আরো চওড়া করেছেন। সবুজরা দুই ভাই এক বোন। বড় ভাই রংমিস্ত্রির কাজ করলেও বাবা নওশের মন্ডল রিকশার প্যাডেল না ঘুরালে সংসারের চাকাটা অচল থাকে সবুজদের।

সাইফের জার্সিতে গত মৌসুম থেকে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন সবুজ। প্রথম বছর লিগে ১২টার মতো ম্যাচ খেললেও সেখানে কোনো গোল ছিল এ ডিফেন্ডারের। গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন; কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। চলতি লিগে অবশ্য খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। আবাহনীসহ মোট ৪টি ম্যাচ খেলেছেন। সাইফের নিয়মিত অধিনায়ক রিয়াদুল হাসান রাফির অনুপস্থিতিতে সেরা একাদশে জায়গা মেলে সবুজের। আগের ম্যাচে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় আবাহনী ম্যাচে মাঠের বাইরে ছিলেন রাফি।

রাফির অনুপস্থিতির সুযোগটা ভালোই কাজে লাগিয়েছেন সবুজ। প্রথমবারের মতো লিগে গোল করেছেন। প্রতিযোগিতামূলক আসরে এটি তার প্রথম গোল। আবাহনীর মতো দলের বিপক্ষে গোল করতে পেরে দারুণ খুশি কুষ্টিয়ার এ ফুটবলার।

সামনে সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণ করতে চান। দলকে আরো অনেক গোল উপহার দিতে চান সবুজ। তিনি জানান, ‘সাইফের জার্সিতে লিগে এটি আমার প্রথম গোল। এই গোলের অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলটা পায়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটিকে জালে জড়িয়ে দেই। এই গোলটির কথা আমার অনেকদিন মনে থাকবে। ’

২০১৭ সালে কোচ কামাল বাবু, পাপ্পুদের মাধ্যমে সাইফের জুনিয়র দলে সুযোগ মেলে সবুজের। প্রথম ট্রায়ালেই টিকে যান। পেয়ে যান পছন্দের ৫ নম্বর জার্সিটাও। এরপর টানা তিন-চার বছর জুনিয়র দলে খেলেছেন। সাইফের জুনিয়র দলের হয়ে অনেক ম্যাচ, টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। ২০২০-২১ মৌসুমে এসে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগে নিবন্ধন হয় তার। এরপর শুধু এগিয়ে গেছেন এ ফুটবলার। প্রথম মৌসুমে দারুণ খেলে বয়সভিত্তিক জাতীয় দল অনূর্ধ্ব-২৩ দলেও ডাক পান। সেখানে খেলার সুযোগ না পেলেও দলের সঙ্গে ছিলেন।

সবুজের এখন একটাই স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলা। আর সেই স্বপ্নটা পূরণের জন্য প্রিমিয়ার লিগকে পাখির চোখ করেছেন। সামনে সাইফের আরো ৪টা ম্যাচ বাকি। সেই ম্যাচগুলোতে ভালো করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। স্বপ্ন তার পরিবারকে ঘিরেও। বাবা অনেক বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন। হাড়ভাঙা খাটুনি করছেন। এবার বাবাকে বিশ্রামে পাঠাতে চান। সামনে প্রিমিয়ার লিগের দলবদল। আসন্ন লিগ থেকে যে আয়টা হবে সেটা দিয়েই পরিবারের দুঃখ বিশেষ করে বাবার দুঃখ চিরতরে মুছে চান সবুজ।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২২
এআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।