পঞ্চগড়: সবে মাত্র আড়াই বছর বয়স হয়েছে সবুজের। রোববার (১১ জুন) বিকেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে।
শিশুটির বাবা আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতাল হওয়ার পরেও বেড না পেয়ে সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমার ছেলে।
একই অবস্থা দেখা যায় রোগী সালমার ক্ষেত্রেও। মহিলা ওয়ার্ডের দরজার বাইরে বারান্দায় জায়গা হয়েছে তার।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সালমা বাংলানিউজকে বলেন, জ্বর ও পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছি। বেড সমস্যা দীর্ঘদিনের। কিন্তু তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। দুর্ভোগ নিয়েই মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের এমন চিত্র নিত্যদিনের।
প্রতিদিনই ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ২০০ থেকে ২৫০ রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। এতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে রোগীদের। এদিকে শয্যা সংখ্যার সমস্যা নিরসনে হাসপাতালের পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে ২৫০ শয্যার নতুন ভবন।
জানা যায়, পঞ্চগড়ের প্রায় ১০ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র স্থান পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল। আর এ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তির কারণে দিনের পর দিন খোলা বারান্দায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমান সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে বেড না পেয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। তাই ১০০ শয্যার হাসপাতালে দ্রুত আরও ২৫০ শয্যার ব্যবস্থা করা হলে অনেকটাই দুর্ভোগ লাঘব হবে।
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে গণপূর্ত বিভাগ ২৫০ শয্যার নতুন ভবন হস্তান্তর করবে। এতে শয্যা সংকট দূর হবে, দুর্ভোগ লাঘব হবে রোগীদের।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজিউর করিম রাজু বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে তিনতলা ভবনের এ হাসপাতালে ১০০টি শয্যা রয়েছে। তবে এতে জনবল সংকট রয়েছে। দ্রুত সব সমস্যা সমাধান না হলে পুরোনো হাসপাতালের মতো নতুন ভবনেও সমস্যা দেখা দেবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রত্যাশী সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের ৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় গত ২০১৮ সালে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের ভেতরেই ২৫০ শয্যার নতুন ভবনের কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। কাজটি বাস্তবায়ন করছে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের মে মাসে ভবনের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। তাই অপেক্ষার প্রহর গুণতে হচ্ছে জেলাবাসীকে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১০০ শয্যার হাসপাতালে শিশুদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৩০টি ও দুটি ওয়ার্ডে পুরুষদের জন্য ৬০টি শয্যা বরাদ্দ থাকলেও প্রতিদিন শয্যার চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে সব ওয়ার্ড ও বারান্দায় মিলে প্রায় ২০০ রোগী ভর্তি আছেন।
এদিকে নতুন করে ২৫০ শয্যা ভবন নির্মাণে দীর্ঘ সময় নেওয়ার কারণ জানতে গেলে মহামারি করোনা ভাইরাস ও ডলার সংকটে নতুন এলসি না পাওয়ায় মালামাল আনতে সময় লাগছে বলে বাংলানিউজকে জানান পঞ্চগড় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
এসআই