কক্সবাজার: কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে। শুধু জুলাই মাসের ১৯ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮৩ জন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য এমনটাই বলছে।
স্বাস্থ্যবিভাগ আরও বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১৭১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৬১ জন, মার্চে ৩৬৭ জন, এপ্রিলে ২১১ জন, মে মাসে ১৯৮ জন, জুনে ৩৩০ জন, এবং জুলাই মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয় ৯৮৩ জন।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপাস খীসা বাংলানিউজকে জানান, ডেঙ্গু প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসন,স্বাস্থ্য বিভাগ ও কক্সবাজার পৌরসভা সচেতনতামূলক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জেলা সদর হাসপাতালে চালু করা হয়েছে সার্বক্ষণিক টেলিমেডিসিন সেবা ও ডেঙ্গু কর্নার।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ডেঙ্গু সচেতনতায় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ৩ লাখ ৫০ হাজার এবং স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে ৫০ হাজার মশারি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া গত জুন ও এ মাসে আরও ৯৮ হাজার মশারি বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করা হচ্ছে। এছাড়া নালা- নর্দমা পরিষ্কার ও ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম নিয়মিত করা হচ্ছে।
ডেঙ্গুর হটস্পট রোহিঙ্গা শিবির
ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে গড়ে তোলা ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবির। বর্তমানে কক্সবাজারের প্রায় ২৩ লাখ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি এসব রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসরত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা।
কিন্তু শিবিরের নালা নর্দমা যথাযথভাবে পরিষ্কার না করা, এবং ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস, অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা, অসচেতনতাসহ নানা কারণে শিবিরগুলো এখন ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে কুতুপালংয়ের তিন নম্বর রোহিঙ্গা শিবির এই একটি ক্যাম্পেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬০০ ছাড়িয়েছে। শিবিরগুলোতে দিন দিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে চিকিৎসাধীন ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের এরশাদ উল্লাহর স্ত্রী তৈয়বা খাতুন বলেন, প্রথমে কেঁপে কেঁপে জ্বর ওঠে। এরপর আমাকে ক্যাম্পের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। গত চারদিন ধরে চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে একটু ভালো বোধ করছি।
শিবিরগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুহার কম। এমনকি দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় রোহিঙ্গা শিবিরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো আছে বলে দাবি কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের চিকিৎসকদের।
উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালে কক্সবাজারে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ২৩১ জন। এদের মধ্যে ১৫ হাজার ৬৩৬ জন রোহিঙ্গা এবং ৩ হাজার ৫৮৫ জন স্থানীয় নাগরিক। মৃত্যু হয়েছিল ৩৯ জন। এর মধ্যে ২৬ জন রোহিঙ্গা ও ১৩ জন বাংলাদেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
এসবি/এসএএইচ