বাগেরহাট: বাগেরহাটে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গেল ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩১ জন ডেঙ্গু রোগী।
সরকারি হিসেবে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯শ ছাড়িয়েছে। তবে বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের পরীক্ষা বিবেচনায় নিলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে দাবি সচেতন মহলের। হঠাৎ করে রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় সঠিক সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী- বাগেরহাটের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৬৭০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে সব থেকে বেশি ৩০২ জন। এছাড়া ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০১ জন, রামপালে ৭১, কচুয়ায় ৬২, শরণখোলায় ৫৬, চিতলমারীতে ৩১, মোল্লাহাটে ১৮, মোংলায় ২১ এবং মোরেলগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া জেলা হাসপাতাল থেকে ২৬ জন এবং শরণখোলা থেকে ২ জন ডেঙ্গু রোগীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ৪২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। গেল তিন চারদিন ধরে এই হাসপাতালে ৪০-৪২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। যা গেল সপ্তাহে ছিল ২০-২৫ জন। এছাড়া এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত দুই সহস্রাধিক মানুষের ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫ শতাধিক রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। সেই হিসেবে পরীক্ষার প্রায় ২৫ শতাংশ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন।
অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও বেশকিছু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের পরীক্ষায়ও বেশকিছু ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
সরেজমিনে জেলা হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে প্রবেশের দরজার পাশেই প্লাস্টিকের ডাস্টবিন। তার পাশেই ডাবের খোসা, কাগজ, পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা আবর্জনার স্তূপ। ভেতরে ভেপসা গরম ও গন্ধ। গরম থেকে বাঁচতে রোগীরা মশারি খুলে রেখেছেন। কেউ কেউ গন্ধ সহ্য করতে না পেরে ওয়ার্ডের বাইরে খোলা জায়গায় মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিন তলার মেঝেতে চিকিৎসা নেওয়া মো. ইকবাল বলেন, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু দুর্গন্ধে থাকতে না পেরে মেঝেতে এসে রয়েছি। ওখানে থাকলে, মানুষ আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে।
একই স্থানে চিকিৎসা নেওয়া ডেঙ্গু রোগী হাফিজুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, পাঁচদিন ধরে হাসপাতালে আছি। স্যালাইনসহ কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে দিয়েছে। কিন্তু বমির ইনজেকশন, প্রোল্যাকটো ও ইলেক্ট্রো নামের দুটো ওষুধ নিয়মিত কিনতে হচ্ছে। এগুলো পেলে আমাদের খুব ভালো হত।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেওয়া আলোকদিয়া এলাকার নজরুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতাল এত অপরিষ্কার তা বোঝানো যায় না। শৌচাগারে আলো নেই, ট্যাপ নেই, দরজার সামনে ময়লা। গরিব মানুষ তাই, সরকারি হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু এত অপরিষ্কার জায়গায় থাকলে তো আরও অসুস্থ হয়ে যাব।
এদিকে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইন থাকলেও, খোলা বাজারে সব ধরনের স্যালাইনের চরম সংকট চলছে। শুধু ডেঙ্গু চিকিৎসার স্যালাইন নয়, গেল দুই মাস ধরে কোনো কোম্পানি স্যালাইন সাপ্লাই দিচ্ছে না বলে দাবি ওষুধ ব্যবসায়ীদের। যার কারণে নরমাল স্যালাইন, ডিএমএস, ডিএসহ সব ধরনের স্যালাইন বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে রোগীদের।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, হাসপাতালে ২ হাজারের বেশি মানুষের ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছি আমরা। এর মধ্যে ৫ শতধিক রোগীর ডেঙ্গু পজিটিভ পেয়েছি। ৩০২ জন রোগীকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। ২৬ জনকে আমরা উন্নত চিকিৎসার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। বর্তমানে ৪২ জন রোগী ভর্তি আছে। যা গেল সপ্তাহে ছিল, মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন।
তিনি আরও বলেন, শুধু ডেঙ্গু নয়, হাসপাতালে সব ধরনের রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও, জনবল সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যার কারণে মানুষের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটছে। এর পরেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় হু হু করে ডেঙ্গু বাড়লেও, মশা নিধনে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো কার্যক্রম বাগেরহাটে নেই। বাগেরহাট পৌরসভার পক্ষ থেকে মশা নিধনে ফগার মেশিন দিয়ে কয়েকবার স্প্রে ও মাইকিং করা হলেও অন্যান্য পৌরসভা ও উপজেলায় কোনো কার্যক্রম হয়নি।
এ বিষয়ে বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান বলেন, মশা নিধনে আমরা ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে করেছি। মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া সবাইকে তাদের বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
আরএ