বরিশাল: বরিশাল শেরইবাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া এক রোগীর স্বজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এমনকি এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল রাজুকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চার নম্বর ইউনিটে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে হাসপাতাল এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
যদিও পরে এই ঘটনায় জড়িত চিকিৎসকসহ অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে হাসপাতালের পরিচালক এইচএম সাইফুল ইসলাম বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল রাজুর চার সহপাঠী। আর লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টির সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার শুরুতে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা খাবার খাচ্ছিলেন। তখন মৃত রোগীর স্বজন গিয়ে বলেন, ‘আমার রোগী মরে যাচ্ছে। আর আপনাদের ভাত খেতে হবে?’। এরপরই দুইপক্ষের তর্কাতর্কি শুরু হয়। যা নিয়ে হট্টগোল থেকে মারামারির ঘটনা ঘটে।
মৃত রোগীর স্বজন মো. নাসির বলেন, আমার দাদী রিজিয়া বেগম (৫৫) গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত বেশি হওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই এবং সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ইউনিট-৪ এ ভর্তি করি। ভর্তি করার পর চিকিৎসকদের জানানো হলে তারা নাস্তা খেয়ে পরে আসবেন বলে জানান। এসময় আমি চিকিৎসকের দাদীকে একটু দেখার জন্য বারবার অনুরোধ করি, কিন্তু তারা আসেননি। আধঘণ্টা পর আমার দাদী মৃত্যুবরণ করেন।
‘এরপর আমার চাচা ও আমি চিকিৎসকদের বলি, আপনারা কি মানুষ? আপনার মা বা অন্য কারও এমন হলে আপনি কী করতেন? এমন কথা বলায় তারা কয়েকজন মিলে আমাদের এলাপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। এমনকি আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আমাকে আমার মোবাইল ফোনটি ফেরত দেননি। এমনকি আমার দাদীর মরদেহটিও আটকে রাখেন। ’
নাসির বলেন, এ ঘটনার সময় আমার পাশেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ছিলেন। তার সহায়তায় আমি হাসপাতালের পরিচালকের কাছে গেলে তিনি আমার ও ববি শিক্ষার্থীর কথা শুনে আমার মোবাইলের সিম ও দাদীর মরদেহ দাফনের জন্য ছেড়ে দেন। এসময় এক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিচালকের সামনেই ববি শিক্ষার্থীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
হুমকি দেওয়ার ঘটনায় পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল রাজু সহপাঠীদের নিয়ে মেডিসিন বিভাগের সামনে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে পরিচালকের কার্যালয়ে যান এবং হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, শেবাচিমের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন গৌরনদীর রিজিয়া বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন ব্যক্তিগত কাজের অজুহাত দেখিয়ে চিকিৎসা প্রদানে অসম্মতি জানান চিকিৎসকরা। পরে বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে তার স্বজন ৩০ বছর বয়সী এক যুবক ডাক্তারের রুমে কথা বলতে যান। এসময় আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় দায়িত্বরত চিকিৎসকরা হামলা চালান। এই ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক মুহিত। এই ঘটনা দেখতে পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল রাজু ও তার বন্ধু মুজাহিদ প্রতিবাদ করেন। এসময় রাজুকে পাঁচজন চিকিৎসক আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় মারধর করে মোবাইল ছিনিয়ে নেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ জানাতে হাসপাতালের পরিচালকের রুমে গেলে সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসক মুহিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজুকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অনুমতি ছাড়াই ভিডিও ধারণ করেন। এরপর ববির শিক্ষার্থীরা মেডিসিন ওয়ার্ডে গেলে দায়িত্বরত এক ইন্টার্ন নারী চিকিৎসক অশ্রাব্য ভাষা প্রয়োগ করেন। তাই ঘটনার সময় ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে না চাইলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল রাজু বলেন, রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের সঙ্গে যা ঘটেছে তার সাক্ষ্য দেওয়ায় মেডিসিন ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আমাকে জীবননাশের হুমকি দেন। আমি সহপাঠীদের নিয়ে পরিচালকের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করি।
এ বিষয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
এমএস/এইচএ/