ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালের ৫ লিফটের ৩টিই বন্ধ, জনদুর্ভোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৪
ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালের ৫ লিফটের ৩টিই বন্ধ, জনদুর্ভোগ

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভোগান্তির অন্ত নেই। নানা বিড়ম্বনার মধ্যে দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।

হাসপাতালটির নবম তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের পাঁচটি লিফটের মধ্যে একটি মাত্র লিফট চালু রয়েছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন আগত রোগী ও রোগীর স্বজনরা। তবে, বিষয়টি নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা যেন নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের! অথচ, তাদের উদাসীনতায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এই হাসপাতাল।  

দক্ষিণবঙ্গের প্রান্তিক মানুষের অন্যতম চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল এই হাসপাতালটি। প্রতিদিন ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ কয়েকটির জেলার অসংখ্য মানুষ এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। হাসপাতালটি ২৫০ বেড খ্যাত পরিচিতি পেলেও নতুন এই ভবন নির্মাণের পর ৫০০ বেডে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু এই ভবন যেন খড়গ হয়ে ধরা দিয়েছে সেবাপ্রত্যাশীদের। ভবনটিতে একটি মাত্র সরু সিঁড়ি রয়েছে। এছাড়া পাঁচটি লিফট স্থাপন করা হয়। পাঁচটি লিফটের মধ্যে তিনটি লিফট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। অপর দুটি চালু থাকলেও বিদ্যুৎ চলে গেলে একটি লিফট চালু রাখা হয়।  



সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই ভবনের একটি লিফটের সামনে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় রয়েছে। কেউ রোগীকে ট্রলিতে শুইয়ে, কেউ ব্যাগ হাতে অপেক্ষা করছেন। কেউ আবার পাশের টুলে বসে লিফটের অপেক্ষায় রয়েছেন। কেউ কেউ আবার রোগীদের ওই লিফটে ওঠার সুযোগ করে দিচ্ছেন, কিন্তু তাদের অপেক্ষা যেন ফুরাচ্ছে না। আবার অসুস্থ রোগী নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও লিফটে যাচ্ছে। অনেকে আবার একটি মাত্র সরু সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যাচ্ছে। এই সরু সিঁড়ি ব্যবহারে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।  

এই লিফট বিড়ম্বনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগীর স্বজনরা। বোনের সিজার পরবর্তী চিকিৎসার জন্য গত দুই মাস হাসপাতালটিতে অবস্থান করছেন মাদারীপুরের সুমন হাওলাদার।  
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আসার পর থেকে তিনটি লিফট চালু দেখেছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পরে আরেকটি লিফট বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার দেখা যাচ্ছে একটি লিফট চালু রয়েছে। এই একটি লিফটে রোগীর ব্যবহৃত ও খাবারের ট্রলি, হাসপাতালের প্রয়োজনীয় মালামাল নেওয়া হচ্ছে। মানুষ ওঠার সুযোগই পাচ্ছে না। হাসপাতালেতো অসুস্থ মানুষজন আসেন, তারাতো সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে পারেন না। দু-তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে ওঠা যায় কিন্তু তার ওপরে উঠতে মানুষকে চরমভাবে কষ্ট করতে হচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের সিঁড়ি থাকবে চওড়া কিন্তু এটি অনেক সরু। লিফট বন্ধ থাকায় মানুষ ঠেলাঠেলি করে ওপরে উঠছেন ও নিচে নামছেন রোগীর স্বজনরা। এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সব মানুষ নেমে আসতে পারবে না।

হাসপাতালের পঞ্চম তলায় গিয়ে দেখা গেছে, ওই লিফটের সামনে তিনজন রোগীকে ট্রলিতে শুইয়ে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা। এ সময় অন্যদের নামিয়ে দিয়ে রোগী ওঠাতে দেখা যায়। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন হাবিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। তিনি জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার জয়দেবপুর গ্রাম থেকে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চার চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তিনি বলেন, লিফট না থাকার কারণে ওঠা-নামা খুব সমস্যা হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থ রোগী নিয়ে ১০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে লিফটে যাওয়া যাচ্ছে না। এটা কেমন হাসপাতাল!’

এ বিষয়ে হাসপাতালটির উপ-পরিচালক দীপক কুমার বিশ্বাস বলেন, লিফটের সমস্যা নিয়ে আমরাও ভোগান্তির মধ্যে আছি। বিষয়টি নিয়ে গণপূর্তকে চিঠিও দিয়েছি আমরা। তারা জানিয়েছে, পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকায় লিফটের কাজ করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।