ঢাকা, সোমবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে সারাদেশে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি ঘোষণা 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:১৭, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫
৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে সারাদেশে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি ঘোষণা 

৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে স্মারকলিপি দেওয়ার মাধ্যমে এ কর্মবিরতি ঘোষণা দেওয়া হয়।

প্রস্তাববিত দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে আগামী ১ অক্টোবর থেকে টিকাদানবন্ধসহ আসন্ন ১২ অক্টোবর টাইফয়েড টিকার ক‍্যাম্পেইনের কার্যক্রম ও অন‍্যান‍্য রিপোর্ট প্রদান অনির্দিষ্টকালের জন‍্য বন্ধ ঘোষণা দেন তারা।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, মানব শিশু জন্মের পর থেকে ১০টি মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষায় জন‍্য প্রতিশোধক হিসেবে তৃণমূল পর্যায় আমরা স্বাস্থ্য সহকারীরাই টিকা প্রদান করে থাকি। আমাদের এ টিকা প্রদান করা কাজটি সম্পন্ন টেকনিক্যালধর্মী হলেও আমরা টেকনিক্যাল পদমর্যাদা থেকে বঞ্চিত।  

তাছাড়া আমরা দীর্ঘদিন থেকে টেকনিক্যাল পদমর্যাদার দাবি করে এলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ বাস্তবায়ন না করায় স্বাস্থ্য সহকারীরা পদমর্যাদাসহ সরকারের সব কর্মচারী থেকে চরম বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

তারা উল্লেখ করেন, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এমতাবস্থায় ২০১৮ সালে আমরা কর্মসূচিতে গেলে তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব, মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য) সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করে কাজে ফিরে যাই। কিন্তু এবারও দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি।

অতঃপর আবারো ২০২০ সালে আমরা কর্মসূচিতে গেলে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি এবং আমাদের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে উক্ত সবার রেজুলেশনের মাধ্যমে আমাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, কিন্তু তাও কোনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।

সবশেষ চলতি বছর আবারও আমরা দাবি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন গেলে গত ২৫ মে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ৩ মাসের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও দাবি বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।

যার ফলে আবারো গত ২৬ জুলাই অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ১ মাসের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আসন্ন টিসিবি টিকাদান ক্যাম্পেইনকে সামনে রেখে জনস্বার্থে টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন সফলভাবে সম্পন্ন করার সম্মতি জ্ঞাপন করি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় অদ্যবদি আমাদের দাবি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।  

অবশেষে নিরুপায় হয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের এক মতবিনিময় ও আলোচনা সভায় ৬৪ জেলার শীর্ষ নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কমপ্লিট শাটডাউনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।  

গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে ২৮ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি প্রদান এবং ১ অক্টোবর থেকে ইপিআই ও আসন্ন টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনসহ সব প্রকার কার্যক্রম বর্জনসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি।

তারা আরও উল্লেখ করেন, আমরা শুধু আশার বাণীই শুনে যাচ্ছি। তাই আমাদের নিয়োগবিধি সংশোধন শিক্ষাগত যোগ‍্যতা (স্নাতক) সংযোগ ১৪তম গ্রেড প্রদান ও ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকনিক্যাল পদমর্যাদা বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ প্রস্তাবিত ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ কর্মবিরতি পালনে যাচ্ছি।

আমাদের এ কর্মবিরতি পালনের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি ও আবেদন দিয়ে আমাদের দাবি ও কর্মসূচি বিষয়ে অবগত করেছি। কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যদি আমাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না করেন, তাহলে উল্লেখিত তারিখ থেকে ইপিআইসহ সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন বন্ধ থাকবে।

তারা আশা করছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যের শিকার দেশের ২০ হাজার এ স্বাস্থ্য সহকারীদের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে তাদের প্রস্তাবিত ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন করবেন।

আরকেআর/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।