ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা টাকা পায় কোথায়!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৫
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা টাকা পায় কোথায়!

ঢাকা: দুনিয়া জুড়ে মানুষের স্বাস্থ্যের তদারকি করে বেড়াচ্ছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। দিচ্ছে পরামর্শ, উপদেশ, ক্ষেত্র বিশেষে আর্থিক অনুদান দিচ্ছে শর্ত জুড়ে দিয়ে।

এ যেমন, পুষ্টিকর বিস্কুট খাওয়ার পরামর্শ।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এবং এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে। বাংলানিউজের সঙ্গে এক আলাপে তিনি কথা বলেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অর্থের উৎস নিয়ে।
 
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পূর্বে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর চাঁদা দিয়ে চলতো। কেউ গরীব সে দিবে না, এটা ছিল না। এক সময় ছিল প্রত্যেকটা রাষ্ট্রই কিছু পরিমান চাঁদা দিত। এটাকে বলা হয় এসিস্ট কন্ট্রিবিউশন। এ উত্তোলিত অর্থ থেকেই ডব্লিউএইচও সদস্যদের চাঁদা দিত এবং পরামর্শ ও ফান্ড দিত। এই চাঁদা উন্নয়নশীল দেশে প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হত। অর্থের প্রাপ্তি এবং খরচ ছিল সহজ।
 
তিনি বলেন, শুরুতে শতভাগ ফান্ড এভাবে আসত। এখন হয়ে গিয়েছে অনেক দাতা। এখন চরিত্র উল্টো হয়ে গেছে। আশি শতাংশ ফান্ড আসে প্রাইভেট ডোনারদের কাছ থেকে। ওরা যখন দেয়, তাদেরতো একটা ফোকাস থাকে। ফোকাসটা হয় যেমন,  মেটারনাল হেলথ ভালো করতে চায় কেউ, কেউ ম্যালেরিয়া বা যক্ষা রোগ ভাল করতে চায়।
 
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ যখন টাকাটা দেই,  তখন ডব্লিউএইচওকে বলি, টাকাটা দিলাম খরচ কর। এতো রিকোয়েষ্ট করি না। আমরা টাকাটা দিলাম, তোমরা প্ল্যান করে খরচ কর। কিন্তু ডোনার যখন দেয়, তার হিসাব দেখাতে হয়। বলে দেয়া হয় এটা আমি চাই। যে টাকাটা দিয়েছে সেটা খরচ করেছে কিনা।
 
টাকা বেশি আসাতে ডাব্লিউএইচও'র ফোকাসও এখন শর্ত দেওয়া প্রোগ্রামগুলোতে বেশি। রেগুলার প্রোগ্রামের দিকে ফোকাস নষ্ট হয়েছে। কারণ সেখানে অর্থ কম।
 
সবচেয়ে বড় ডোনার বিল গেটস...

আবুল কালাম আজাদ জানান, বর্তমানে বিল গেটস হচ্ছেন বিগ ডোনার অব গাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি)।
 
বিল গেটস এখন কম্পিউটারে সময় দেন না, সময় দেন স্বাস্থ্য খাতে। তার মধ্যে একটা বিশ্বাস জন্মেছে, টিকা দিয়ে প্রায় সমস্ত অসুখ সারানো যায়। কারণ সবকিছুর টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। এটার পেছনে যদি গবেষণা বৃদ্ধি করি, তবে এক্সক্লুসিভ ফল আসবে।
 
দ্বিতীয়টা উনি করেছেন, টিকা শুড বি হিউম্যান রাইটস। ধনী হোক, গরীব হোক টিকা আমাকে পেতে হবে। তারা এখন গাভিতে অনেক বেশি ফান্ড দেন। ডব্লিউএইচওকে আরো প্রেসার দেয়, টিকাকে আরো প্রমোট করা হোক। তারই ইনফ্লুয়েন্সে আরেকটা জিনিস হয়েছে, ডিকেডস অব ভ্যাক্সিন। হিউম্যান রাইটসকে ডিকেড অব ভ্যাক্সিনে ইস্টাবলিস্ট করা হবে। সবাই যেনো টিকা পায় সেটাকে নিশ্চিত করতে বলা হবে। ইউনিভার্সেল এক্সেস, সবার কাছে যেনো যায়।
 
আর টিকায় সফলতা আসলে গাভিকে বিল গেটসের কোম্পানি থেকেই কিনতে হবে সে ওষুধ।
 
ডব্লিউএইচও’তে কর্পোরেটের থাবা..
 
ডব্লিউএইচও’তে কর্পোরেটের ছায়া রয়েছে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, আসলে ডব্লিউএইচও ইস অ্যা বিগ গ্লোবাল বডি। এখানে যদি একটা রিকমন্ডেশন পাস করানো হয়।
 
ধরুন ফ্রান্সের একটা কোম্পানি বেবি ফুড তৈরি করেছে। এটা বিস্কুটের মতো। এখানে বেশ কিছু ভিটামিন, মিনারেলস দেওয়া হয়েছে। ওরা বলছে, কেউ যদি এসবের অভাবে ভোগে, এ বিস্কুট খেলে সেটা পূরণ হয়ে যাবে।
 
এখন ডব্লিউএইচওকে সে ভেতর থেকে ম্যানেজ করা শুরু করে বিস্কুটটাকে পাশ করিয়ে নেওয়ার জন্যে। তাহলে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। আর তাহলে ওই কোম্পানির বাজিমাত। কারণ এটার কথা ডব্লিওএইচও বললেই বড় সিল পেয়ে যাবে। সব দেশ তখন এই বিস্কুট নেবে। একটি গ্লোবাল মার্কেট তৈরি হবে। অথচ এটা একটি প্রাইভেট কোম্পানি।
 
সুতরাং ওই কোম্পানি যদি কোনোভাবে ডাব্লিউএইচও’কে দিয়ে ওই পণ্যের নাম লেখাতে পারে সেই চেষ্টায় থাকে। ইনডিভিজ্যুয়াল কোনো কোম্পানি কিন্তু ডব্লিউএইচওকে সরাসরি কিছু বলতে পারে না। কোনো দেশের মাধ্যমে বলতে হয়। যেহেতু ফ্রান্সের কোম্পানি, সে হয়তো তার সরকারকেই যেয়ে বলল, তুমি এটা পাশ করিয়ে দাও। ফ্রান্স হয়তো, তখন তার বন্ধু রাষ্ট্রদের গিয়ে বলে। এই করে করে কর্পোরেট পণ্য চলে আসে।
 
তিনি বলেন, এই যেমন অসংক্রামক ব্যাধিতে (এনসিডি) কিন্তু একটা জিনিস রয়েছে। প্রত্যেক রাষ্ট্রকে এনসিডির ডায়াগনোসিস এবং ওষুধ দিতে হবে। যারা এনসিডিতে ভুগছে তাদের ডায়াগনোসিস করতে হবে এবং তার ওষুধ সরবরাহ করতে হবে বিনামূল্যে। এখন রাষ্ট্রেরতো ডায়াগনোসিসের ক্ষমতা নেই। মেশিনওতো উৎপাদন করে না। এখন এটা যখন পাস হয়ে যাবে, যারা যন্ত্রপাতি উৎপাদন করে, তাদের পেছনে সবাইকে দৌড়াতে হবে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাবসা করবে বিশ্বব্যাপী।
 
ব্যর্থ ডব্লিউএইচও
 
ফান্ড আর শর্ত না দেওয়া প্রোগ্রামে যে ডব্লিউএইচও’র আগ্রহ নেই, তার বড় প্রমাণ পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার বিস্তার রোধে যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আর এ ব্যর্থতার অন্যতম একটি কারণ হলো, শুরুতে বিষয়টি তারা সেভাবে গায়ে লাগায়নি। সম্প্রতি সংস্থাটির ফাঁস হওয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
 
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গিনি থেকে ইবোলা বিষয়ে গত মার্চে ডব্লিউএইচওর কাছে প্রথম প্রতিবেদন পাঠানো হয়। আগাম সতর্কতাসহ প্রতিবেদনটি পাঠায় মেদিসিনস সাঁ ফ্রঁতিয়ার্স (এমএসএফ) নামের একটি দাতব্য সংগঠন। এতে বলা ছিল, অরক্ষিত সীমান্ত ও দুর্বল চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে গিনি, সিয়েরালিওন ও লাইবেরিয়ার মতো দেশে ইবোলার বিস্তার ঠেকানো যাবে না। কিন্তু এ সতর্কতার পরও ডব্লিউএইচও ইবোলা প্রতিরোধে মাঠে নামে কয়েক মাস দেরিতে। এছাড়া মার্চে এমএসএফের সতর্কতার সঙ্গে দ্বিমতও পোষণ করে তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।