ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সহজে যাওয়া যায় না কুর্মিটোলা হাসপাতালে

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫
সহজে যাওয়া যায় না কুর্মিটোলা হাসপাতালে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেড় বছরের শিপলু ৩ তিন ধরে জ্বরে ভুগছে। তাকে কোলে নিয়ে মা ফিরোজা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে।

চিকিৎসক দেখে কিছু ওষুধ দিয়েছেন, যেগুলো হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যেই পেয়েছেন তিনি।

তবে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ফিরোজা বেগম ও তার শাশুড়ি পড়েছেন মহাবিপাকে। বাসায় যাবেন কীভাবে।    ‘রিকশা’ এই রাস্তায় নিষিদ্ধ।

প্রতিষ্ঠার পর বছর ৩ পার হতে চললেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকটের কারণে এভাবেই রোগীদের বিপাকে পড়তে হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে। এ হাসপাতাল থেকে যোগাযোগের জন্য নেই গণপরিবহন। হাসপাতালের বাইরে উত্তর পাশে বাস স্ট্যান্ড থাকলেও সেখানে বাস থামে না। বরং একটু দূরে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গতি নিরোধক থাকায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বাস আস্তে চলে। সমর্থ কেউ বিপদ জেনেই চট করে ঝুলে পড়েন বাসের হাতলে। কিন্তু  এভাবে একজন রোগীর পক্ষে বাসে উঠা দুষ্করই বটে।
 
ফিরোজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, এই হাসপাতালে সেবা ভাল। চিকিৎসকও পাওয়া যায়। তবে যাতায়াত ভাল নয়।
 
kurmitola_Hospital_02তিনি জানান, অসুস্থ শিপলুকে নিয়ে রিকশায় শ্যাওড়া এসেছেন। এরপর ফুট ওভারব্রিজ পার হয়ে আধা কিলোমিটারের মতো হেঁটে যেতে হয়েছে হাসপাতালে।
উত্তর দিক থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করলে কুর্মিটোলায় সেনানিবাস ঘেঁষে এই জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু ভিআইপি রোডে স্থাপিত এ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা খুব সহজ নয়।

সর্বসাধারণের জন্য নির্মিত এ হাসপাতালে কোন রোগী রিকশায় আসতে পারছেন না। বিমানবন্দর সড়কটি ভিআইপি হিসেবে গণ্য হওয়ায় এ রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ।
 
ইমার্জেন্সি সেবা নিতে কুর্মিটোলা, কচুক্ষেত, বনানী, কুড়িল বা খিলক্ষেত থেকে কেউ রিকশায় চড়ে এ হাসপাতালে আসতে পারবেন না। আবার আবাসিক এলাকায় হাসপাতালটির অবস্থান না হওয়ায় ঢাকার উত্তরের কোন অংশের জনগণ সেবা নিতে কুর্মিটোলা হাসপাতালকে অগ্রাধিকার দেয় না।   

হেঁটে যদি যেতে না পারেন, তবে হাসপাতালটিতে যেতে হলে রোগীকে সিএনজি অটোরিকশা বা ট্যাক্সি ক্যাব নিতে হবে। বর্তমানে ঢাকায় এ যান ভাড়া করা কোন গরীব ও নিম্নমধ্যবিত্ত রোগীর জন্যে দু’বেলা থেকে চার বেলার খাবারের খরচের সমান।

টঙ্গী, উত্তরা বা খিলক্ষেত থেকে কোন রোগী ইঞ্জিন চালিত বাহনে এসে হাসপাতালের সামনে মোড় ঘুরতেই পারবেন না। রোগী বহনকারী যানটিকে ডিভাইডারের মাঝখানের ক্রসিং পেরিয়ে যেতে হবে আরো প্রায় ২০০ মিটার দূরে রেডিসন হোটেলের সামনে। তবে এ ক্রসিংয়ে নেই কোন সিগন্যাল বাতি। এর পরের ক্রসিং বনানী ফ্লাই ওভারের নিচ দিয়ে ঘুরে এসেছে।
 
kurmitola_Hospital_01কোনো রোগীকে হাসপাতালে যেতে হলে ডানে বামে তাকিয়ে সতর্কভাবেই রাস্তা পার হতে হবে। কারণ নেই কোন ফুট ওভারব্রিজ। ওভারব্রিজে ওঠার ইচ্ছে হলে রোগীকে যেতে হবে শ্যাওড়া।
 
যোগাযোগের এ বিচ্ছিন্নতায় রোগী পাচ্ছে না ১২তলা বিশিষ্ট এ সুসজ্জিত হাসপাতাল। স্বল্প পরিসরে আউটডোর সেবা ও সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা চালু করলেও রোগীদের সেবা দিতে পারছে না হাতপাতালটি।
 
তবে কুর্মিটোলায় কেন এই হাসপাতাল? স্বাস্থ্যখাতে জড়িত এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা জানালেন, কুর্মিটোলায় রয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)। জরুরি চিকিৎসার জন্যে এখানেই আসতে পারেন রোগীরা। এছাড়াও সিএমএইচ রোগীদের কাছে আস্থাও অর্জন করেছে।
 
তিনি বলেন, এখানে জেনারেল হাসপাতাল স্থাপনের অন্যতম কারণ, একটি বিশেষ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া। তাদের প্র্যাকটিস এর জন্য সাবজেক্ট দরকার ছিল। কিন্তু সিএমএইচ এ সেটি সম্ভব হচ্ছিল না। এটি অন্যতম একটি কারণ। না হলে এ হাসপাতালটি উত্তরা বা কুড়িলে হলে বেশ ভাল হতো। আশপাশের আবাসিক এলাকার মানুষ পায়ে হেঁটে বা রিকশায় এসে সেবা নিতে পারত।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।