ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

রাজধানীর হাসপাতাল-ক্লিনিকে প্রতারণার ফাঁদ

কাজী নাজমুল হক ফয়সাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
রাজধানীর হাসপাতাল-ক্লিনিকে প্রতারণার ফাঁদ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: চিকিৎসা সেবার নামের রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতারণার ফাঁদে ফেলে রোগী ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।



ফলে মানবিক সেবার নামে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা হচ্ছে কলঙ্কিত। সেই সঙ্গে এই পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্দোষ ব্যক্তিরাও পড়ছেন নানা বিপাকে।

এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব অবৈধ, অনৈতিক ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড। এ নিয়ে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারীরা।

এ বিষয়ে র‌্যাব-২’র উপ-পরিচালক ড. দিদারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর ডা. সামিউল ইসলাম সাদীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে রাজধানীতে যতো অবৈধ, নিয়মবর্হিভূত ও প্রতারণাকারী চিকিৎসা সেবার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে সেগুলো আইনের আওতায় আনা হবে।

ইতোধ্যে কিছু কিছু চিকিংসা সেবার প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধ ও অনিয়মের দায়ে বেশ কিছু চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় এনেছে র‌্যাব-২।

এর মধ্যে ছয় কর্ম দিবসে হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ব্লাড ব্যাংকে অভিযান চালিয়ে মোট ২৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে মোট ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

নভেম্বর ০৫, ২০১৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিডিএম জেনারেল হাসপাতাল, কাশমী জেনারেল হাসপাতাল, নর্থ সাউথ হাসপাতাল ও নিউ ওয়েল কেয়ার হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব-২। ওই দিন অভিযানে ১০ জনকে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং নিউ ওয়েল কেয়ার হাসপাতাল সিলগালা করা হয়।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের পরিচালনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর ডা. সামিউল ইসলাম সাদীকে সঙ্গে নিয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

অক্টোবর ২৮, ২০১৫

এ দিন রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় এলিফ্যান্ট রোডে জেনারেল হাসপাতাল, ডা. এ জি ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ তিনটি ব্লাড ব্যাংক, দুইটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং একটি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ব্লাড ব্যাংকের ভেজাল রক্ত জব্দ করা হয়। পরে তা নষ্টও করা হয়।

অনিয়মের দায়ে দু’জনকে কারাদণ্ড ও ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় সিলগালা করা হয়েছে দু’টি প্রতিষ্ঠান।

নিউমার্কেট এলাকায় এলিফ্যান্ট রোডে হলি ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন ও রিদম ব্লাড ব্যাংকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অপরীক্ষিত রক্ত জব্দ করা হয়।

অভিযান সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে নিউমার্কেট এলাকায় এলিফ্যান্ট রোডের হলি ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন ও রিদম ব্লাড ব্যাংক স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছিলো। এসব প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বাড়তি মুনাফার লোভে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মাদকাসক্ত ব্যক্তিকের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ চালিয়ে আসছিলো।

অক্টোবর ১৬, ২০১৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা মানসিক ও মাদকাসক্তি বিষয়ক হাসপাতালসহ চারটি হাসপাতালে বিভিন্ন অপরাধে র‌্যাবের অভিযানে সংশ্লিষ্ট পাঁচ জনের ছয় লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এর মধ্যে এক জনের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা মানসিক ও মাদকাসক্তি নামে হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়েছে।

অক্টোবর ১৫, ২০১৫

কেরানীগঞ্জের ল্যাব ফোর জেনারেল হসপিটাল, নিউ ক্রিসেন্ট ডায়গনিস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টার ও রাফিয়া হাসপাতালের পাঁচজনকে আটক করে র‌্যাব-২। এ সময় মোট চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয় তাদের। এর মধ্যে এক জনের ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং নিউ ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টার সিলগালা করা হয়।

অক্টোবর ৮, ২০১৫

রাজধানীর রামপুরায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং স্নেহনীড় মাদকাসক্তি নিরাময় ও দেশ ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তিন জনকে জেল-জরিমানা করে র‌্যাব-২’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই সময় তাদের দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫

র‌্যাবের একই ব্যাটেলিয়ন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে লাইফ কেয়ার নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও এলিট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের দুই মালিককে করাদণ্ড দেওয়া হয়। এ সময় ওই দু’জনকে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

র‌্যাব-২ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকা, নার্সের কাউন্সিলিং সার্টিফিকেট না থাকা, ড্রাগ লাইসেন্স না থাকা, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হাসপাতাল পরিচালনা করা, বিভিন্ন রোগের টেষ্টের অত্যন্ত নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার, রেডিওলজিস্ট ও সনোলজিস্ট না থাকা, লাইসেন্সবিহীন অপারেশন থিয়েটার (ওটি) পরিচালনা করা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ল্যাব টেকনিশিয়ান না থাকা, অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে গাদাগাদি করে রোগী রাখা এবং হালনাগাদ লাইসেন্স ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় করায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন মেয়াদে জরিমানা, অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৫
এনএইচএফ/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।