ঢাকা: সেকেলেই থাকছে পরিবার কল্যাণ সহকারী রেজিস্টারের নতুন সংস্করণও। ছকে কিছু নতুন সংযোজন এসেছে বটে, তবে আধুনিকায়নের ছোঁয়া নেই পদ্ধতিতে।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন- ডিজিটালাইজেশনের প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই বলেই এ সেকেলেপনা। আরও বলছেন, এ অভাব পূরণ করে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড হতে ২০১৮ সাল গড়াবে। অর্থাৎ আগামী সংস্করণটি হবে ডিজিটাল পদ্ধতির।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম রেজিস্টারের আধুনিকায়নে জোর দিচ্ছেন বারবার। কিন্তু চাইলেও সহসা সেদিকে যেতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অন্যান্য সব প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন করে এনেছেন। কিন্তু ডিভাইসের অভাব মিটিয়ে সেগুলো জায়গামতো সেট করা, জনবলকে প্রশিক্ষিত করা- এসবে বাকি সময়টি পার হয়ে যাবে।
আশাবাদী কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, পরিবার কল্যাণ সহকারী রেজিস্টারকে ডিজিটাল চেহারা দিতে সহযোগিতা করছে আইসিডিডিআর’বি, প্রক্রিয়া চলছে।
ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল ও হবিগঞ্জ জেলায় মাঠকর্মীদের কার্যক্রমের অন্তর্গত গর্ভবতী মায়েদের রেজিস্ট্রেশন এবং জনসংখ্যা রেজিস্ট্রেশন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব হুমায়ুন কবির এ সংক্রান্ত কাজ তদারকি করছেন।
ডিজিটাল পদ্ধতি এলে ভুল বা অসত্য তথ্য যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে এবং সহজে সংশোধন সম্ভব হবে বলে মন্ত্রী তাগিদ দিচ্ছেন এতোটা।
অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, ডিজিটাল পদ্ধতি এলে এসব কাজ অনেক সহজেই আরও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা যেতো। কারণ, এ মুহূর্তে জনবলের অভাব নেই প্রকল্পে।
এসব কাজে অধিদফতরকে সহযোগিতাকারী ইউএসএইড’র প্রতিনিধি সুকুমার সরকার বলেন, ‘নতুন রেজিস্টারে অনেক কিছু রয়েছে। এটি বেশ সুবিধার। সে সঙ্গে অসুবিধাও রয়েছে। এতো বেশি বিষয় ম্যানুয়ালি ম্যানেজ করা কঠিন। ডিজিটাল পদ্ধতি ক্রমশ জরুরি হয়ে পড়েছে। ’
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন বলেন, এ রেজিস্টারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এর আধুনিকায়নে সবাই চেষ্টা করছেন। আশা করি, শিগগিরই আরও উপযোগী রূপে এটি পাওয়া যাবে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিমান কুমার সাহা বলেন, জনসংখ্যা, সক্ষম দম্পতির সংখ্যা, কে কোন পদ্ধতি নিচ্ছেন, কাকে কোন পদ্ধতি দেওয়া যাবে, নারী-শিশুর অবস্থা- সব কিছুর ধারণা ও তথ্য পাওয়া যায় রেজিস্টারে। তাই এর আধুনিকায়ন জরুরি।
কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রকল্প পরিচালক ডা. মাখদুমা নাসরিন বলেন, যারা মাঠে কাজ করছেন, তাদের কাজের ডুপ্লিকেশন হচ্ছে। এটি ঠেকাতে আধুনিকায়ন জরুরি। ডিজিটাল পদ্ধতি এলে এ বিষয়টি কমে যাবে।
তিনি বলেন, ৮শ’ থানায় সহকারীদের মাঝে কাজগুলো ভাগ করে দিলে কাজের ডুপ্লিকেশন হবে না। জনবল অনুযায়ী কাজও অনেক ভালো হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাসিক প্রতিবেদন ইতোমধ্যে অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান মহাপরিচালক নুর হোসেন তালুকদার। রেজিস্টার ডিজিটাল করার বিষয়ে তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে যখন যা প্রয়োজন, তার সবটুকুই আমরা করছি। রেজিস্টারের আধুনিকায়নেও কার্যকর ব্যবস্থা আসবে। এ বিষয়ে মন্ত্রী আন্তরিক রয়েছেন। তাই খুব দেরি হবে না পুরো কাজে।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) অধিদফতরের সেমিনারেও বেশ কিছু তথ্য জানা যায় নতুন সংস্করণ সম্পর্কে।
অধিদপ্তরের এমআইএস কর্মকর্তা শালিনা আক্তার জানান, ৮ম সংস্করণে নতুনভাবে বিন্যস্ত হয়েছে। ইউনিটের সক্ষম দম্পতি ও তাদের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, ১৮ মাস পর্যন্ত বয়সীদের টিকা, ৫ বছরের কম বয়সীদের সেবা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভবতী মা ও নবজাতক, কর্ম এলাকার সকল মৃত্যু, কর্মীর দৈনিক কাজের হিসেব, সকল ইনেজেকটেবল গ্রহণকারী, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীসহ সকল সামগ্রীর মাসিক মজুদ-বিতরণ, থানার জনসংখ্যার হিসেব (বছরে একবার), সন্তানের সংখ্যানুযায়ী ও বয়সভিত্তিক পদ্ধতি নেওয়া বা না নেওয়া সক্ষম দম্পতিদের তথ্য (বছরে একবার) রাখার সুযোগ আরও স্পষ্টভাবে থাকছে এতে।
১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এটি আগামী তিন বছরের জন্য মাঠে চলবে। এতে ১২১০ দম্পতির তথ্য রাখা যাবে বলেও জানান তিনি।
আইসিডিডিআরবি’র কারিগরি সহযোগিতায় ১৯৮৯ সালে সমগ্র বাংলাদেশকে ২৩ হাজার ৫শ’ ভাগে বিভক্ত করে প্রতি ভাগকে একটি ইউনিট ধরে হিসেব করা হয়। ইউনিয়নগুলো ৩ থেকে ৯ ইউনিটে ভাগ হতে পারে। অধিদফতরের একজন সহকারী একটি ইউনিটের দায়িত্ব পান। নিয়োগের শর্তমতে, নারীরাই কেবল এ পদে কাজ করবেন। সারাদেশে ২৩ হাজার ৫শ’ অনুমোদিত পদে এখন রয়েছেন ২০ হাজার ২৬২ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এসকেএস/এএসআর