রোজায় শরীরের পরিবর্তন নির্ভর করে কতটা সময় না খেয়ে থাকা হলো তার ওপর। খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু শরীর অনশন (ফাস্টিং স্টেট) অবস্থায় যায় না।
স্বাভাবিক সময়ে লিভার ও মাংসে জমে থাকা গ্লুকোজ ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়। এটাই শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। রোজার সময় প্রথমে জমে থাকা গ্লুকোজ শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। গ্লুকোজ শেষ হয়ে গেলে শরীরে জমে থাকা চর্বি ভেঙে শক্তি তৈরি হয়। আরো কিছু শারীরিক প্রক্রিয়ায় লিভারে সামান্য কিছু গ্লুকোজও এ সময় তৈরি হয় এবং তা থেকে শক্তি উৎপন্ন হয়।
যদি দীর্ঘ সময় (২৪ ঘণ্টার বেশি থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ) না খেয়ে থাকা হয়, তাহলে ধীরে ধীরে শরীরের প্রোটিন ভাঙতে শুরু করে। এভাবে না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে মাংস শুকিয়ে যেতে থাকে, শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কোনোমতেই এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদী অনশন স্বাস্থ্যকর নয়। বরং স্বাস্থ্যহানিকর, কখনো কখনো প্রাণঘাতী।
রোজায় যেহেতু সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হয়, তাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ফাস্টিং বা অনশন অবস্থায় থাকতে হয়, তাই সেহেরি ও ইফতারে যে খাবার গ্রহণ করা হয়, তা থেকেই শরীর প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ জোগাড় করতে পারে। সেহরিতে খাওয়া খাদ্যের গ্লুকোজ যখন আট ঘণ্টা পর শেষ হয়, তখন শরীরে সঞ্চিত চর্বি ভেঙে শক্তি তৈরি হয়। এ কারণেই রোজায় শরীরের ওজন খানিকটা কমে। তাই প্রোটিন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। শরীরের বাড়তি এই চর্বি কমে যাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। একই সঙ্গে শরীরে শরীরে জমে থাকা কিছু ক্ষতিকর পদার্থ প্রস্রাব, পায়খানা, ঘাম ইত্যাদি বডি ফ্লুইডের সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
কয়েক দিন রোজা পালনের পর রক্তে এনডোরফিনসের মতো কয়েকটি হরমোনের মাত্রা বাড়ে। এই হরমোনটি মানুষকে বেশি সচেতন করে, শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখে।