কিন্তু লোক চক্ষুর আড়ালে চালানো এই অপকর্ম সম্পর্কে অনেকটাই অসচেতন আমজনতা। তাই না জেনেই শরীরে নিচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর-১, মিরপুর-৬ ও মিরপুর-১১ নম্বর কাঁচাবাজারে মাছের আড়তসহ কয়েকটি সুপার শপ ঘুরলে চিংড়িতে ভেজাল মেশানো নেই দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে চিংড়িতে যে বাসায়নিক পদার্থ বা ভেজাল দ্রব্য মেশানো নেই তা পরীক্ষা করে দেখার কোনো যন্ত্রও দেখা যায়নি আড়তগুলোতে। এমনকি এমন কোনো ব্যবস্থা আদৌ আছে বলেই প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এসব বাজারে চিংড়ি আসে খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, নরসিংদী, ভৈরব এলাকা থেকে।
চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশের দায়ে মাস ছয়েক আগে কয়েক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি ভাটা পড়েছে ভেজাল বিষয়ক নজরদারিতে। শেষ করে এখানকার চিংড়ির মান পরীক্ষা করা হয়েছে সে তথ্য কারো কাছেই নেই। ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা সচেতন, তারপরও বিশেষ করে যেখানে চিংড়ি উৎপাদন হয় বা ডিপো সেখান থেকে এমন রাসায়নিক পদার্থ মেশানো চিংড়ি বাজারে মাঝে মাঝে আসছে।
ফলে অজ্ঞতাবশতঃ এরারুট, লোহা বা সীসার গুলি, জেলিসহ বিভিন্ন বাসায়নিক দ্রব্য মেশানো চিংড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
তাজা মাছের জন্য মিরপুর-১ নম্বর বাজার বাসিন্দাদের পছন্দ। সকাল সকাল বাজারে এলে জ্যান্ত, লাফানো ও তাজা মাছ পাওয়া যায়। পাইকারি ও খুচরা দু’ভাবেই মাছ কেনা যায় এখানে। মাছের আড়ৎ চালু হয় সকাল সাড়ে ৬টায়। ৭টার মধ্যে বাজারে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন। সদ্য ট্রাক থেকে নামানো ফরিদপুর থেকে আসা চার কেজি গলদা চিংড়ি কেনেন তিনি।
চিংড়ি মাছে রাসায়নিক মেশানোর বিষয়ে জানেন কি-না –জানতে চাইলে আকরাম হোসেন বলেন, একবারেই জানি না। আর জেনেই বা হবে কি, যা খাই তাতেই তো ভেজাল। তাছাড়া ভেজাল মেশালে বুঝবো কিভাবে? বিক্রেতারা এই অসৎ কাজ করলে আমাদের তো জানার উপায় নেই।
মিরপুর ১১ নম্বর বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা টুটুল। চিংড়িতে অপদ্রব্য মেশানোর বিষয়টি তার কিছুটা জানা। তবে কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি জানি, দেশের ভেতরে যে চিংড়ি বিক্রি হয় তাতে ভেজাল মেশানো হয় না। বাইরে যেসব রপ্তানি হয়, সেগুলোতেই বাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে ওজন ভারি করানো হয়। তবে চিংড়িতে ভেজাল মেশানো হলে তা ধরার কোনো উপায় নেই আমার। ভেজাল জিনিসে কিনে খেতে হবে।
এই বাজারে চিংড়ি কিনতে এসেছেন মারুফ আহসান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি এখনকার নিয়মিত ক্রেতা। ভেজাল জিনিস দিয়ে পার পাবে না। চিংড়ির কোথায় জেলি মেশানো থাকে সেটা আমি জানি-বলে একটা চিংড়ি ধরে এর কানশা ও পিঠের দিকটা টেনে দেখান এই ক্রেতা।
তবে অনেকেরই এ বিষয়ে একবারেই অভিজ্ঞতা নেই জানিয়ে মারুফ বলন, এ কারণে প্রতিনিয়তি অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে।
মিরপুর ১১ নিউ সোসাইটি মার্কেটের মৎস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীর অনেক বাজারে এখনও ভেজাল চিংড়ি বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। তবে আমাদের এখানে জেলি মেশানো কোনো চিংড়ি আসে না। একটা সময় ডিপো থেকে জেলি মেশানো মাছ আসত। ওই চিংড়ি বিক্রিতে জড়িত অনেককেই জরিমানা করা হয়েছে।
** ‘৬শ’র মাল সাড়ে ৩শ’তে লইবেন, জেলি তো থাকবোই’
** বাইছা লন, ক্যানসার ছাড়া লন
** সব বাজারেই জেলি চিংড়ি!
** কাপড়ের বিষাক্ত নীলে চকচকে চিংড়ি
** শক্ত খোলসেই পোয়াবারো চিংড়ি ভেজালিদের
** চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!
** চিংড়িতে জেলি আতঙ্কে মাছ ব্যবসায়ীরাও
** কিভাবে কী মেশে চিংড়িতে
** এ যেন টাকা দিয়ে মৃত্যু কেনা !
** মোসলেম চেনালেন ভেজাল চিংড়ি
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এমসি/জেডএম