এছাড়া ডাক্তাররা অল্পতেই রেগে যান বা দুর্ব্যবহার করেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা অধিক সময় নেবেন এই চাওয়াটা প্রায় প্রতিটি রোগীর।
ডাক্তাররা ভালো ব্যবহার করলে ও পর্যাপ্ত সময় দিলে রোগীরা মানসিক প্রশান্তি পান। দ্রুত রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও তা সহায়ক। কিন্তু ডাক্তারদের কাছে গিয়ে অনেক সময় রোগীদের বরং মনখারাপই হয়। রোগীরা অনেকক্ষেত্রে ডাক্তারদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন। অথচ মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, আমি আমার আমার ছোট ভাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমেই তিনি জানতে চান কি কি ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। এরপর তিনি নতুন কিছু ঔষধ প্রেসক্রাইব করেই আমাদের বিদায় করতে চাইলেন। তিনি ঠিকমত শুনলেনও না আমার ভাইয়ের মূলত কি সমস্যা। এখন পর্যন্ত আমার ভাই পুরোপুরি সুস্থ হয়নি ওই ঔষধ খেয়ে।
তিনি আরও বলেন, অনেক দিন অপেক্ষা করে সিরিয়াল নিয়ে একেকজন বড় বড় ডাক্তারদের দেখা পাই আমরা। কিন্তু বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা পর্যাপ্ত সময় দেন না। ওই ডাক্তার এক পর্যায়ে রেগে যান এবং আমরা বের হয়ে আসতে বাধ্য হই।
এছাড়া মিরপুর থেকে আগত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা অপেক্ষারত রোগী নাজমুন্নাহার বলেন, আমার সমস্যাটা অনেক জটিল। অনেকদিন ধরে ভুগছি। আমি নিজেও জানি মূল সমস্যাটা কি। কিন্তু ডাক্তার দেখাচ্ছি প্রায় ২ বছর ধরে। যে ডাক্তারের কাছেই যাই, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির এক ঔষধই দেয়। এদিকে আমারও সুস্থতা আসে না। আর এরকম হবার প্রধান কারণ আমার কাছে মনে হয় যে, আমি যে ডাক্তারের কাছেই গিয়েছি কেউই ঠিকমত সময় দিয়ে আমার রোগের বর্ণনা শোনেন না। ডাক্তারের রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই প্রেসক্রিপশনে ঔষধের নাম লেখা শুরু করেন। আমার কথা শেষ হবার আগেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমাকে বিদায় নিতে হয়।
এছাড়া ডাক্তারদের সময় না দেয়া এবং দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে আসা রফিক, শাহিনূরসহ আরও অনেক রোগীই।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বাংলানিউজকে জানান, অভিযোগটা মিথ্যা না। তবে ভালো ডাক্তার বাংলাদেশে অনেক আছেন যারা রোগীদের যত্ন নেন। তাই ঢালাও অভিযোগ করা ঠিক না। আর এসবের জন্য সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা দায়ী, সেটা হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যা। অর্থাৎ রোগীদের বিপুল সংখ্যাধিক্য। সে অনুসারে আমাদের চিকিৎসক সংখ্যা অপ্রতুল। যেমন, এই হাসপাতালে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৮০০০ হাজার রোগী আসেন। এতো রোগী সামাল দেয়া আসলেই কষ্টকর আমাদের জন্য।
এছাড়া গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এইটা আসলে খুব খারাপ একটা বিষয় রোগীদের জন্য। ডাক্তারদের উচিত প্রত্যেকটা রোগীকে গড়ে কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ মিনিট সময় দেয়া। কারণ রোগীর সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক শান্তির বিষয়টা খুবই জরুরি। রোগীর সংখ্যার ওপর দোষ চাপিয়ে আমাদের দেশের ডাক্তাররা পার পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সততার স্থান থেকে তারা সরে দাঁড়াচ্ছেন সে বিষয়ে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
এমএএম/ জেএম