ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

বিরল রোগে আক্রান্ত স্বর্ণালী রামেক হাসপাতালে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৭
বিরল রোগে আক্রান্ত স্বর্ণালী রামেক হাসপাতালে স্বর্ণালী ও তার বাবা-মা। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: বিরল রোগে আক্রান্ত ১২ বছরের শিশু স্বর্ণালীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার (০৮ নভেম্বর) মেডিকেল বোর্ড তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর উন্নত চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) দুপুরে স্বর্ণালীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করান রাজশাহীর জেলা সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাবা আব্দুল মান্নান ও মা রুমা বেগমসহ অসুস্থ স্বর্ণালীকে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সব করা হবে বলে স্বর্ণালীর বাবা-মাকে আশ্বস্ত করেন সিভিল সার্জন। পরে তার নির্দেশে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক স্বর্ণালীকে হাসপাতালে ভর্তি করান।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের তেঘাটা গ্রামের স্বর্ণালীর ডান হাতে জন্মের পর থেকে কালো দাগ থেকে এ রোগের উৎপত্তি। বিরল রোগটির কোনো চিকিৎসা নেই ভেবে এতোদিন ডাক্তার দেখাননি বাবা-মা।

ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বর্ণালীর চিকিৎসায় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রামেক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ড রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। তাদের পরামর্শে সম্ভব হলে এ হাসপাতালে রেখেই স্বর্ণালীর চিকিৎসা শুরু হবে। আর প্রয়োজন হলে ঢাকায় পাঠানো হবে’।

‘স্বর্ণালীর রোগটি সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনির মতো হলে সেভাবেই চিকিৎসা দেওয়া হবে। তার সুস্থ হতে যা যা করা প্রয়োজন, স্বাস্থ্য বিভাগ তা করবে’।

ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক জানান, স্বর্ণালী ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেডে রয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় নোনামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণালীর বাবা আবদুল মান্নান দুর্গাপুরের দাওকান্দি কলেজের অফিস সহকারী ও মা রুমা বেগম গৃহিণী। তাদের বড় ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে।

স্বর্ণালীর বাবা-মা জানান, চার বছর বয়সে তাদের মেয়েকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনকে দেখিয়েছিলেন। সে সময় চিকিৎসক মলম দিয়েছিলেন। কিন্তু তা লাগিয়েও রোগ ভালো হয়নি, বরং বাড়তে থাকে। এরপর অজ্ঞাত বিরল রোগ জেনে চিকিৎসার ব্যাপারে আস্থা হারিয়ে আর চিকিৎসক দেখাননি তারা।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে মুক্তামণির চিকিৎসার খবরে স্বর্ণালীর ব্যাপারে আশাবাদী হন তারা। কারণ, মুক্তামণির মতোই বিরল রোগটি রয়েছে স্বর্ণালীরও ডান হাতে। এরপর রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আফরোজা নাজনীনকে দেখান। তিনিও স্বর্ণালীর হাত দেখে বিরল রোগ হিসেবে আখ্যা দেন।

তবে ডা. আফরোজা নাজনীন পরামর্শ দিয়েছেন, নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে এজন্য মোটা অংকের টাকা লাগবে বলে জানালে আর এগোতে পারেননি মান্নান-রুমা দম্পতি।

আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামণির চিকিৎসায় ভালো হয়ে ওঠার খবর দেখে স্বর্ণালীর জন্যও মনে আশা জেগেছিল। একই ধরনের রোগ মনে হওয়ায় সেরে যেতে পারে- এমন আশায় চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাই। তবে জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য যে অংকের টাকার প্রয়োজন বলে তিনি জানিয়েছিলেন, তার সংকুলান কোনোভাবেই করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। তাই দিশা হারিয়ে ফেলেছিলাম’।

রামেক হাসপাতালে ভর্তি ও সিভিল সার্জন চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেওয়ায় মেয়েকে নিয়ে ফের আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বলেও জানান স্বর্ণালীর বাবা-মা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭
এসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।