ঢাকা: আগামী ৪ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত দুই সপ্তাহব্যাপী ধাপে ধাপে সারা দেশে জাতীয় ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাম্পেইন শুরু হবে। গ্রাম এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ভিটামিন 'এ' বিতরণের জন্য ব্যবহার করা হবে অস্থায়ী নিয়মিত টিকাদান কেন্দ্রে।
প্রতি বছরই ভ্রমণে থাকা শিশুরা যেন বাদ না পড়ে, সে জন্য প্রতি উপজেলায় একটি করে এবং সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেন্দ্রে (রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট ইত্যাদি) টিকা দানের ব্যবস্থা থাকত। তবে এবার আর থাকছে না এসব ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র।
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের লাইন ডিরেক্টর (এনএনএস) ডা. এসএম মুস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, যেসব শিশু ভ্রমণে থাকবে, তাদের চার থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে আট দিন ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময় নিকটবর্তী ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র থেকে নিজ দায়িত্বে ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, সারাদেশে এক লাখ ২০ হাজার ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র আছে। প্রতিবছর ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাম্পেইনে সময় আরও ২০ হাজার ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। তবে এবার ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রগুলো থাকছে না। প্রতিটি কেন্দ্রে স্বাস্থ্য কর্মী ছাড়াও অতিরিক্ত দুজন করে মোট দুই লাখ ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।
এসএম মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সারা দেশে ছয় থেকে ১১ মাস বয়সী শিশু আছে ৩৪ লাখ এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশু আছে এক কোটি ৯৬ লাখ। সে হিসাব ধরে দুই কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন 'এ' প্লাস খাওয়ানো জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে ৯০ শতাংশ শিশু ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল পাবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ছয় থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের এক লাখ মাত্রার একটি নীল রঙের ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল ও ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুকে দুই লাখ মাত্রার একটি লাল রঙের ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
এক লাখ মাত্রার নীল রংয়ের ক্যাপসুল সংগ্রহ করা হয়েছে জার্মানি থেকে। এবং দুই লাখ মাত্রার লাল রঙ্গের ক্যাপসুল সংগ্রহ করা হয়েছে দেশীয় কোম্পানি রেনেটা ও গ্লোবাল ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড থেকে।
তিনি আরো জানান, ক্যাম্পেইন সে দিন ছয় মাসের কম বয়সী শিশু, পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশু, চার মাসের মধ্যে ভিটামিন এ প্রাপ্ত শিশু ও অসুস্থ শিশুকে ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না।
তিনি জানান, প্রথম সপ্তাহ ৪ অক্টোবর (রোববার) থেকে শুরু হবে। তবে প্রতি সপ্তাহে যে সকল কেন্দ্রে ইপিআই টিকার কার্যক্রম থাকবে, সে সকল কেন্দ্রে ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাম্পেইন বন্ধ থাকবে। প্রতি সপ্তাহে বাকি চার দিন সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাম্পেইন চলবে।
ক্যাম্পেইনের আগের দিনে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন সমূহের ওয়ার্ডে মাইকিং করা হবে। পাশাপাশি ক্যাম্পেইনের পূর্ববর্তী শুক্রবারে জুমার নামাজের পূর্বে মসজিদের ইমাম/খতিব ভিটামিন 'এ'-এর প্রয়োজনীয়তা মুসল্লিগণ কে অবহিত করবেন। এছাড়া অন্যান্য উপাসনালয়ের মাধ্যমেও একটি বার্তা প্রেরণ করা হবে। এছাড়া বাদপড়া শিশুদের মধ্যে দুর্গম এলাকায় ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর শিশুদের প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়ে টিকা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনাকালে ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাম্পেইনে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরিচালিত হবে। তবে নিজ নিজ এলাকার কেন্দ্রে আসা শিশুর অভিভাবকদের অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করে আসতে হবে।
জানা যায়, ভিটামিন 'এ' শুধুমাত্র অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব থেকে শিশুদের রক্ষাই করে না, ভিটামিন 'এ' শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল ও জটিলতা কমায় এবং শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়।
বাংলাদেশে ভিটামিন 'এ'-এর অভাবজনিত সমস্যা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় পুষ্টি সেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বছরের দুইবার অর্থাৎ ছয় মাস অন্তর অন্তর জাতীয় ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাম্পেইন করে থাকে। তবে এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে তিন মাস পিছিয়ে নয় মাস পর ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাম্পেইন শুরু হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
পিএস/জেআইএম