আগরতলা (ত্রিপুরা, ভারত): মার্চ মাসের শেষ ও এপ্রিল মাসের শুরুতে চা বাগানগুলোতে কাজের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। কারণ এই সময় চা পাতার আহরণ শুরু হয়।
তাই একদিকে যেমন চা গাছের ডাল প্রুনিং করে দেওয়া হয় যাতে গাছে বেশি করে কুড়ি আসে, শীতের শেষে গরম পড়তে থাকলে মাকড়াসহ অন্যান্য পোকার উপদ্রপ বাড়ে এসবের হাত থেকে গাছ রক্ষা করতে বালাই নাশক প্রয়োগ করা হয়। পাশাপাশি মেশিনের যন্ত্রপাতি খুলে সার্ভিসিং করে নেওয়া হয়। যাতে সারা বছর ভালোভাবে কারখানা চালু থাকে।
এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল চা বাগানে পানি সেচ। চা চাষে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। কারণ পাতা তোলার মৌসুমে সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন চা গাছের কচি পাতা তুলে নেওয়া হয়। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে ক্রান্তীয় অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় মার্চ মাসের শেষ ভাগ থেকে নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত চা বাগানে সেচের প্রয়োজন হয় না। যদিও ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা হয় না তারপরও গাছগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাগানে কৃত্তিমভাবে পানির সেচ দিতে হয়। যাতে শুকনো মৌসুমেও গাছগুলি পানির সংকটে না পড়ে এবং মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাগান থেকে পাতা আহরণ করা যায়।
তাই এখন একদিকে আগরতলার পার্শ্ববর্তী দূর্গাবাড়ি চা বাগানে একদিকে পানি সেচের কাজ চলছে, অন্যদিকে বাগানের কিছু কিছু জায়গায় গাছের প্রুনিং করছেন শ্রমিকরা। সেই সঙ্গে কারখানায় চলছে মেরামতির কাজ।
পাশের ছোট নদী থেকে পাম্পের সাহায্যে পানি তুলে স্প্রিংকলারের সাহায্যে দেওয়া হচ্ছে চা বাগানে। পাইপ থেকে পানি চারিদিকে ঘুরে ঘুরে বৃষ্টির মতো ছিটে পড়ছে গাছের উপর।
সেচ কাজে যুক্ত শ্রমিক রঞ্জিত তাঁতি ও সুমন মুন্ডা বাংলানিউজকে বলেন, ডিসেম্বর মাস থেকে সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে, বৃষ্টি না নামা পর্যন্ত তা চলবে। বাগানের বেশির ভাগ অংশে প্রথম দফায় সেচ হয়েছে, এখন দ্বিতীয় দফার সেচ চলছে। দ্রুত সেচ দেওয়া জন্য রাত দিন ২৪ঘণ্টা কাজ চলছে।
তারা আরও জানান টানা ২ ঘণ্টা এক একটি জায়গায় এভাবে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার পর পাইপগুলিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। যাতে এই ছিটানো পানি মাটির অনেকটা গভীরে যায়। পাইপ দিয়ে ঢেলে পানি দিলে মাটির ওপরের অংশ ভিজে গড়িয়ে পড়ে যায়, গভীরে প্রবেশ করে না। তাই এভাবে ছিটিয়ে পানি দিতে হয়।
দূর্গাবাড়ি চা বাগান উন্নয়ন সমবায় সমিতির মূখ্য উপদেষ্টা গোপাল চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, কারখানার বার্ষিক সার্ভিসিং শেষ। প্রুনিংয়ের কাজও প্রায় শেষ, সামান্য যেটুকু রয়েছে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। পানি দেওয়ার কাজ চলছে। যে বছর শীতের শেষে বৃষ্টি হয় সে বছর বাগানে পানির সেচ কম দিলেও চলে। কিন্তু এবছর সেপ্টেম্বর মাসের পর আর বৃষ্টি হয়নি, তাই বেশি পরিমাণে পানি সেচ দিতে হচ্ছে। যদি এর মধ্যে বৃষ্টি নেমে যায় তাহলে আর পানি দিতে হবে না, যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে সারা মার্চ মাস ধরে দিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ দেওয়া হচ্ছে, তাই আশা করা যাচ্ছে মৌসুমের শুরুতেই পাতা তোলা শুরু করা সম্ভব হবে। স্বাভাবিক ছন্দে বৃষ্টি হলে বাম্পার উৎপাদন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
এসসিএন/এমএমজেড