ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় সাহ্‌রিতে উৎসবের আমেজ, আনন্দে শামিল বাংলাদেশিরাও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
কলকাতায় সাহ্‌রিতে উৎসবের আমেজ, আনন্দে শামিল বাংলাদেশিরাও

কলকাতা: রাতের কলকাতা যেন এক রূপকথার গল্প বলে। রমজানে সেই রূপকথা এক নতুন রূপ পায়।

ব্যস্ত কলকাতা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, শহরের সিংহভাগ নাগরিক যখন বিচরণ করছেন স্বপ্ন নগরীতে, ঠিক তখনই জেগে আছে শহরের কিছু মানুষ। রমজান এলে এক অন্যরকম চিত্রের দেখা মেলে শহরের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে।

রাত জেগে সাহ্‌রি, আর দলবেঁধে খেলায় এ শহরে এখন উৎসবের আমেজ। পার্ক থেকে পথঘাট, যানজটহীন শহরে সাহ্‌রির আগে রাত জাগা যুবকের দল ক্রিকেট, ফুটবলের মধ্যদিয়ে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন একে অপরের সঙ্গে। খেলা চলে সারারাত, সাহ্‌রির আগ পর্যন্ত। এরপর দলবেঁধে ফজরের নামাজ শেষে ঘুমোতে যায় শহরের দুরন্তরা।

কলকাতার খুব কম মানুষই বাসায় সাহ্‌রি করতে অভ্যস্ত। বেশিরভাগই রেস্তোরাঁমুখী। উদ্দেশ্য টাটকা গরম খাবার আর দলবেঁধে স্থানীয় মসজিদে ফজরের নামাজ। এ চিত্রটা পার্ক সার্কাস, রিপন স্ট্রিট, সিআইটি রোড, রফি আহমেদ খিদওয়াই রোডসহ কলকাতার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার সর্বত্র।  

বলা হয়, রমজানে এসব অঞ্চলে চুলা নেভে না। শহরবাসী সাহ্‌রিতে পছন্দ করেন পরোটা, মাংস, পুরি, সবজি, হালুয়া অথবা জিলাপি, ফিরনি বা শুধু এক গ্লাস দুধ আর সঙ্গে পাউরুটি। করো পছন্দ দুধে ভেজানো লাচ্ছা সেমাই। সাহ্‌রিতে এতেই অভ্যস্ত শহরবাসী।

কলকাতাবাসী যখন এভাবেই সাহ্‌রিতে অভ্যস্ত তখন ভিন্ন রূপ ধরা দেয় শহরের পর্যটন এলাকা মার্কুইস্ট্রিটে। বিগত কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চল রাত জাগছে বাংলাদেশিদের সাহ্‌রির জন্য। সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশিদের কথা ভেবেসাহ্‌রিতে রেখেছেন গরম ভাত, মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন বাঙালি খাবার। আর এতেই খুশি বাংলাদেশি পর্যটকরাও।

এ অঞ্চলে চিটাগাং রেস্টুরেন্টের কর্ণধার মীর শামীম বলেন, বাংলাদেশি যারা আসেন। সেসব গেস্টদের সাহ্‌রির একটা বিষয় থাকে। তার জন্য মার্কুইস্ট্রিট চত্বরে যে সমস্ত মুসলিম রেস্টুরেন্ট আছে, প্রত্যেকেই সারারাত সাহ্‌রির জন্য খোলা রাখেন, বাংলাদেশিদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য। এ অঞ্চলে ভাত, মাছ, মাংসসহ বাংলাদেশিরা যেসব আইটেম সাহ্‌রিতে পছন্দ করেন, সেগুলোর প্রায় সবই থাকে।

নিছক শপিং এবং ভ্রমণের জন্য পরিবারসহ ঢাকা থেকে এসেছেন মাসুম। তিনি বলেন, এর আগে কলকাতায় বহুবার এসেছি। এ শহর আমার পছন্দের। এর আগে এতো হোটেল সাহ্‌রির জন্য খোলা থাকত না। বিগত কয়েক বছর ধরে দেখছি, এ অঞ্চলে সাহ্‌রির জন্য সব দোকানপাট খোলা আছে। এ অঞ্চলে আবার বাঙালিও বাড়ছে। যারা আমাদের কথা ভেবে এই উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এত রাতে ভাত, গরম তরিতরকারি চমৎকার একটা আয়োজন। দামও সাধ্যের মধ্যে। যে খাবার আমরা এখানে খাচ্ছি, ঢাকাতে খেতে হলে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হতো। এখানে সর্বোচ্চ ৩০০-৪০০ রুপির মধ্যে পরিবারসহ খাওয়া-দাওয়া সেরে ফেলতে পারছি।

সাভার থেকে এসেছেন রাহাত। তিনি বলেন, কলকাতায় আমার প্রায়ই আসা হয়। তবে রমজান মাসে এই প্রথমবার। এত রাতে এখানে সাহ্‌রি করতে পারব ধারণাও করিনি। আমার কাছে একটা আলাদা অনুভূতি, বলে বোঝাতে পারব না।  

ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা শফিকের বলেন, আমিও রমজানে এই প্রথমবার কলকাতায়। সাধারণত দেশে আমি ভাত বা খিচুড়ি দিয়ে সাহ্‌রি করি। আমি এখানে এসে যে এসব পাব, ভাবতেও পারিনি। ঢাকা আর কলকাতার মধ্যে কোনো পার্থক্য পেলাম না।

একই সঙ্গে সাহ্‌রির আগে ও পরে এ অঞ্চলে বাংলাদেশিদের মধ্যে চাহিদা আছে গরম দুধ এবং মাটির ভাড়ের চা। ফজর পর্যন্ত চলে জমজমাট বেচাবিক্রি। এরকমই নানা চিত্র ধরা পড়ে রমজানের রাতের কলকাতায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, এপিল ১১, ২০২৩
ভিএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।