কলকাতা: গরমকে দোহাই দিয়ে বিশ্বভারতীতে কোনরকমে পালিত হলো রবীন্দ্রজয়ন্তী। অথচ কলকাতায় কবিগুরুকে নিয়ে ব্যস্ত ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সকালবেলায় স্রেফ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ইতি টানা হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। বাতিল করা হয়েছে সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সিংহভাগ সাবেক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষে জমি নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছে, তার জেরেই কি এই সিদ্ধান্ত? যদিও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গরমের জন্যই রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনে আড়ম্বর বাদ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ মে) সকালে শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহে বৈতালিক, উপাসনা ও কবির ব্যবহৃত চেয়ারে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেওয়া হয়েছে বিশ্বভারতীর তরফে। হয়েছে প্রভাতফেরিও। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু, এ বছর কবিপ্রণাম অনুষ্ঠান এখানেই সমাপনী টেনেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছর সন্ধ্যায় যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, তা এবার বাতিল করা হয়েছে। গরমকে অন্যতম কারণ হিসেবে জানিয়েছেন জনসংযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়।
শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ। আর এই বিশেষ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের বক্তব্য, গরমই যদি কারণ হয়, তাহলে দুপুরের অনুষ্ঠান বাতিল হতে পারতো। সন্ধ্যার অনুষ্ঠান বাতিল করা হলো কেন? আশ্রমিকদের অভিমত, বোঝাই যাচ্ছে এর পিছনে সঠিক কারণটা কী। কিছু বলার নেই। বিগত দুই দশক ধরে ২৫ বৈশাখ মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে বিশ্বভারতীতে। কিন্তু, এবার গরমের দোহাই দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল কার্যত রবীন্দ্রনাথকে অবমাননার শামিল বলে বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব সাবেক শিক্ষার্থী থেকে আশ্রমিকরা।
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে কবিগুরুকে শ্রদ্ধা জানান ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ
অপরদিকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ীই রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে কবিগুরুকে শ্রদ্ধা জানালেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সারা দিনের কর্মসূচি নিয়ে বাংলায় রয়েছেন তিনি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনের শুরুটা করেছেন অমিত শাহ।
এ দিন স্থানীয় সময় বেলা ১১টা নাগাদ ঠাকুরবাড়ি পৌঁছান তিনি। সঙ্গে ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণে কবিগুরুর বিশাল মূর্তিতে মাল্যদান করেন অমিত শাহ। তারপর ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন। বাঙালির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরনে ছিল সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির উপর লালমাটি রঙের জ্যাকেট, সঙ্গে বাটিক প্রিন্ট ও কাঁথাস্টিচের উত্তরীয়।
আগেই অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, কবিগুরু যে ঘরে থাকতেন, যেসব আসবাব ব্যবহার করতেন, সেগুলি নিজ চোখে দেখতে চান। সেইমতো কবিগুরুর মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান তিনি। তারপর ঠাকুরবাড়ি ঘুরে দেখেন। গ্যালারিতে থাকা বিভিন্ন ছবি দেখে তার বর্ণনা পড়েন শাহ। জানতে চান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সময় এবং তিথি। সেই মুহূর্তে এই তথ্য রবীন্দ্রভারতী দিতে না পারায় শাহ বলেন, সেসব জেনে যেন তাঁকে জানানো হয়। এরপর ভিজিটর্স বুকে লেখেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অমিত শাহ জানিয়েছেনে, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রতিটি শব্দ দাসত্বের যন্ত্রণার মধ্যেও স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখার জন্য ভারতীয়দের চেতনাকে জাগ্রত করেছিল। তাঁর কালজয়ী রচনা আজও আমাদের আত্মাকে মুগ্ধ করে, দিকদর্শন করে। কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে গুরুদেবের জন্মবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম।
এরপর তিনি বেরিয়ে যান জোড়াসাঁকো থেকে। গন্তব্য পেট্রাপোল সীমান্ত। সেখানে একগুচ্ছ কর্মসূচি রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। পেট্রাপোল সীমান্তে বিএসএফের অনুষ্ঠানে যোগ দেন অমিত শাহ। এরপর সন্ধ্যায় ‘খোলা হাওয়া’ নামে এক সংগঠনের রাবীন্দ্রিক সান্ধ্য অনুষ্ঠানে কলকাতার সায়েন্স সিটিতে যোগ দিয়ে তিনি রাতে ফিরে যাবেন দিল্লি।
অপরদিকে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবসে কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ