ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

মমতার কি শেষের হলো শুরু?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪
মমতার কি শেষের হলো শুরু?

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের আর জি কর হাসপাতালকাণ্ডে শুনানি মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর)। ঠিক এর ৩৬ ঘণ্টা আগে নানা পরিবর্তন বাংলায়।

ইতোমধ্যে ভিডিও বিভ্রাটের কারণে দুবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বৈঠক হয়নি জুনিয়র চিকিৎসকদের। সেই বৈঠক হলে আন্দোলনের ধারা নিজের আয়ত্তে করে ফেলতে পারতেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, ভুল সিদ্ধান্তে হোঁচট।

এর মধ্যে আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ হত্যার ঘটনায়, ভারতের তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) এ প্রথম দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রথম জন সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। যিনি ইতোমধ্যে হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছেন। একইসঙ্গে হত্যায় জড়িত থাকায় উত্তর কলকাতার টালা থানার অফিসার ইনচার্জ অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই।

রোববার তাদের দুজনকে তোলা হয়েছিল আদালতে। সেখান থেকে সিবিআই দুজনকে তিনদিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। আর তাতেই যেন রোববার আরও গতি পেল শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের আন্দোলন। তাদের সমর্থনে রাজপথে সামিল হন ভারতের সাবেক সেনাকর্তারা। গোটা ভারত থেকে একত্রিত হন কলকাতার রাজপথে।

একইসঙ্গে রাজপথে পা মেলালেন প্রবাসীরা। শুধুমাত্র রোববারের মিছিলে সামিল হবেন বলেই বিদেশ থেকে কলকাতায় আসেন তারা। পাশাপাশি রাজপথ সরগরম করে তোলে বাংলার নাগরিক সমাজ। রাজনৈতিক পতাকাহীন এ জমায়েত যেন প্রশাসনের বুকে বড় ধাক্কা! অনেকেই ব্যঙ্গ করে বলছেন, দিদি তো ফাঁসির দাবিতে মিছিল করেছিলেন। নিজে পুলিশ মন্ত্রী, অথচ কলকাতা পুলিশ এখন সিবিআইয়ের হেফাজতে। দিদি তাদের ফাঁসির দাবিতে কবে পথে নামবেন?

এমনকি যে সন্দীপের নামে চীনে যৌন মামলা চলেছিল, ফিরে আসার পর তাকে কী করে ২০১৮ সালে আর জি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি গোটা ডাক্তার সমাজ ৯ আগস্ট নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পর যখন সন্দ্বীপের দিকে আঙুল তুলছিল, তখন তাকে বহিষ্কার না করে কেন আরও উচ্চপদে, কলকাতা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলো? সন্দ্বীপ এখন জেলে। কেন মুখ্যমন্ত্রী তাকে এত খাতির করতেন, প্রশ্ন রাজ্যবাসীর।

আবার অনেকে ব্যাঙ্গ করে বলছেন, ৫৮ হাজার ভোটে জেতা যতটা সহজ, ততটাই কঠিন ৩০ জন শিক্ষিতের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। তাই সরাসরি সম্প্রচার ভয় পাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, ২১ সালের বিধানসভা ভোটে প্রথমে নন্দীগ্রাম আসনে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে ১৯শ ভোটে পরাজিত হন মমতা। পরে ভবানীপুর আসনে উপ-নির্বাচনে ৫৮ হাজার ভোটে জয় পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি।  

গত বৃহস্পতিবার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা ছিল মমতার। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার হবে না শোনার পরই চিকিৎসকরা সেই বৈঠক করতে রাজি হননি। এরপর শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন কালীঘাটে বৈঠক প্রসঙ্গ ওঠে।  

সেই অনুযায়ী পৌঁছে যান চিকিৎসকরা। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তাদের সরাসরি সম্প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। তারা ভিডিওগ্রাফির দাবি তোলেন। তাও খারিজ করে দেন পুলিশ। এরপর চিকিৎসকরা দাবি তোলেন, পুলিশ যে ভিডিও করছে, তা থেকে এক অংশ তাদের দিতে হবে। তাও নাকচ হয়ে যায়।

তাদের এ দাবির কারণ, ভবিষ্যতে রাজ্য সরকার ভিডিও এডিট করে যাতে কোনো ভুল বার্তা না ছড়াতে পারে। এ সামান্য বিষয় থেকেই ধারণা করা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর ওপর ন্যূনতম ভরসা রাখতে পারছে না বঙ্গবাসী। যে দুজনকে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে, তাদের নামে তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, ঘটনার পর তারা তথ্য-প্রমাণ লোপাট করেন।  

রাজ্যবাসীর দাবি, শিক্ষা দুর্নীতির কারণে শিক্ষামন্ত্রীর জেল হতে পারে, রেশন দুর্নীতির কারণে খাদ্যমন্ত্রীর জেল হতে পারে, সেখানে রাজ্যের স্বাস্থ্য দুর্নীতিতে কেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জেল হবে না? ঘটনাক্রমে রাজ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে এখন দেখার বিষয়, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আস্থা হারানো বঙ্গবাসীর আন্দোলন কোন পথে সামাল দেন রাজ্য সরকার।

এ নিয়ে মমতার দল তৃণমূলের অন্দরেই ক্ষোভ বাড়ছে। দলের একাংশ বলছে, ভুল যখন হয়েছে, তখন চুপ থাকাই শ্রেয়। এক্ষেত্রে মোদী সবচেয়ে বড় উদাহরণ। মণিপুর যখন জ্বলছে তখন ভারত আর্তনাদ করছে। অথচ মোদী ও তার দল একবারে নিশ্চুপ ছিল। বাংলায় এখন সেই পরিস্থিতি, সেখানে নেত্রীর চুপ থাকাই শ্রেয়। ভালো-মন্দ কোনো মন্তব্যই এখন করা উচিত নয়।

তবে মমতা একটি বিষয়ে নিশ্চিত, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী, কোনো নির্বাচিত সরকারকে রাতারাতি ফেলা যায় না। কিন্তু ২০২৬ সালেই বিধানসভা ভোট। অর্থাৎ দেড় বছর। তার আগে বঙ্গবাসীর ক্ষোভ প্রশমিত করতে না পারলে, নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, নেত্রীর শেষের শুরুটা হয়ে গেছে।    

বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।