কলকাতা: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান চাই। আমরা বাংলাদেশের শান্তি চাই, আমরা চাই সেখানে গণতন্ত্র ফিরে আসুক।
রোববার(১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে এবিসি অডিটোরিয়ামে 'খোলা হাওয়া' নামক সংগঠনের তরফে আয়োজিত 'বাংলাদেশ ইন ক্রাইসিস' শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেছেন বীণা সিক্রি।
এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আগেও সুমধুর ছিল, সেই সম্পর্ক আগামী দিনেও একই থাকবে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে যে পরিস্থিতি চলছে, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো ভারতবিরোধী। তারা চায় না যে ভারতের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। সেদেশের মানুষের অর্থনৈতিক বিষয়টিও খেয়াল করছে না। এমন অবস্থায় আমাদের একটাই বলার আছে, তা হলো অবিলম্বে সেখানে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। যারা কারাগারে বন্দি আছে (আওয়ামী লীগ) তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া উচিত যাতে তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যে সরকার আসবে সেটা গণতান্ত্রিক উপায়ে আসবে এবং আমরা (ভারত) সেই সরকারের সাথে সুসম্পর্ক রাখবো।
অন্যদিকে, ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা, বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। ওই একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজেপি নেতা বলেছেন, আমি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন জানাবো, আওয়ামী লীগের যে সমস্ত নেতা, কর্মী, সমর্থকরা প্রাণ বাঁচাতে ভারতে আসছেন, তাদের কারাগারে না পুরে যেন রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়। তার অভিমত, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের মতো অবিজেপি রাজ্যগুলিতেই সমস্যাটা হচ্ছে।
শুভেন্দুর দাবি, হিন্দু, বৌদ্ধসহ বাংলাদেশে যে সমস্ত সংখ্যালঘু মানুষরা রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এবং আওয়ামী লীগের যারা পরিচিত মানুষ তাদেরকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া উচিত। কারণ এরা কেউ রোহিঙ্গা মুসলিম, উগ্রপন্থী বা সন্ত্রাসী নয়।
এক্ষেত্রে একাধিক উদাহরণ দিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, চার সপ্তাহ আগে ৮৫ বছরের এক হিন্দু নারীকে দু' মাসের কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ মহকুমা আদালত। তার অপরাধ হলো ওই নারীসহ তিনজন প্রাণ বাঁচানোর জন্য অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছিলেন। পরে তাকে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে ৬ জন, নদীয়া জেলার রানাঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে ৫১ জন, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার খড়দহ পুলিশ ছাত্র লীগের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু সকলের তো আর এই দেশ ঘুরে আবার অন্য দেশে যাওয়ার আর্থিক সক্ষমতা নেই।
এই ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে নিশানা করে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, এ রাজ্যে আশ্রয়কারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রেপ্তার করা হয় না। জাভেদ মুন্সী, জাদ সেখের মতো জঙ্গিদের অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আবার সেই রাজ্যে প্রাণ বাঁচাতে অন্য দেশ থেকে রাজনৈতিক কিংবা সাধারণ মানুষ পালিয়ে এসে আশ্রয় নিলে রাজ্য পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে হয়। তাই এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার উভয়েরই দৃষ্টিপাত করা উচিত।
শুভেন্দুর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার সিক্রিও বলেছেন, অতীতে বাংলাদেশ থেকে যেসব শরণার্থী ভারতে এসেছেন তাদের এদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই বর্তমানেও যদি এরকম পরিস্থিতি হয় এবং ভারত সরকারের কাছে তারা আর্জি জানায়, তবে সরকারের সহায়তা করা উচিত। শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছর সেদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কতটা মজবুত ছিল। এটা ভারতের পক্ষেও ভাল ছিল। দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সবকিছু চলছিল। এবং গোটা বিশ্বে ভারত এবং বাংলাদেশের সেই 'সোনালি অধ্যায়' নিয়ে আলোচনা হত।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভিএস/এমএম