ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৭ রমজান ১৪৪৬

ভারত

‘মমতার জন্যে তিস্তা চুক্তি হয়নি, যার পরিণাম বর্তমান বাংলাদেশ’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৫
‘মমতার জন্যে তিস্তা চুক্তি হয়নি, যার পরিণাম বর্তমান বাংলাদেশ’

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের আরএসএস নেতা ড. জিষ্ণু বসু বলেছেন, মমতার সরকার সিদ্ধান্তেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি হয়নি। রাজ্য সরকার বারে বারে তিস্তা চুক্তি আটকে দিয়েছে।

সেই কংগ্রেস আমল (ইউপিএ-টু) থেকে তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবং সেই বিরোধিতা করার জন্যই একটু একটু করে আওয়ামী লীগের পায়ের তলার জমি সরে গেছে। যার পরিণাম বর্তমান বাংলাদেশ।

মূলত, বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। ২০২৬ সালের এপ্রিল বা মে মাসে হতে চলেছে নির্বাচন। তাই কোমর বেধে মাঠে নেমেছে রাজ্যের সবকটি রাজনৈতিক দল। শাসক দল তৃণমূল যখন সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু -দুই সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। তখন রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি’র একমাত্র ফোকাস সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট। সে কারণে বারেবারে তাদের প্রচারে উঠে আসছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। আর তাতেই অনেকক্ষেত্রে হাত সেঁকছে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ। অনেকেই নেতাই বিজেপির মঞ্চ গরম করছে।

রোববার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় কলকাতার এক অডিটোরিয়ামে আরএসএসপন্থী বঙ্গবাসী, একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল  ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস অত্যাচার ও পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা’। যদিও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) সরাসরি অংশ না নিলেও তাদের মতাদর্শ পন্থী ‘নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি’র পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।

সেই অনুষ্ঠানে জিষ্ণু বসু বলেছেন, আমাদের রাজ্য সরকার তিস্তা ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট হতে দেয়নি। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিল যে, তিস্তা প্রজেক্ট হতে দেব না। কেনো হতে দিল না? তার কি কোনো বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। না হয়নি? তাদের মনে হয়েছে তিস্তা প্রজেক্ট এর বিরোধিতা করবো, তাই না দেওয়ার সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি তিস্তা চুক্তি হলে কোন সমস্যা হতো না। রাজ্য সরকার তো ব্যারেজ করেছিল। সেখানেই তো পানি সংরক্ষিত আছে। তাহলে চুক্তি বাস্তবায়িত করতে কোথায় ছিল?

আমি মনে করি রাজনৈতিক স্বার্থের কায়েম করার জন্য তিস্তা প্রজেক্ট হতে দেওয়া হয়নি। বারে বারে তিস্তা চুক্তি আটকে দেওয়া হয়েছে। এবং এই তিস্তা চুক্তি বিরোধিতা করার জন্যই একটু একটু করে আওয়ামী লীগের পায়ের তলার জমি সরে গিয়েছে। এবং সে কারনেই তৎকালীন হাসিনা সরকার চীনের দিকে ঘেঁষতে শুরু করে। আর চীন ওখানে ঘুঘুর বাসা তৈরি করেছে। চীন প্রায় ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে। এর জন্য আমার রাজ্যের অপরিণত রাজনৈতিক (তৃণমূল কংগ্রেস) শক্তি দায়ী। যারা কোনো রকম বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সিংহের ইউপিএ-টু সরকার থেকে তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করেছে।

অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. রাব্বী আলম মঞ্চ থেকে বলেছেন, আমেরিকায় আমরা হিউম্যান রাইটস নিয়ে কাজ করছি। সেখানে আমরা বাংলাদেশের নির্যাতন, সংখ্যালঘু নিপীড়ন বিষয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলেছি। কারণ বর্তমান বাংলাদেশ এখন দুর্বিষহ একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের যিনি এখন ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন, সেই ইউনূসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা মামলা করেছি। তাদের সরকার এই রোজার মাসে ইসলাম নিয়ে খেলছে, ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করছে। আজ তারা মানবতার শত্রু, বাংলাদেশের শত্রু, বাংলাদেশের মুসলমানের শত্রু, বাংলাদেশের হিন্দুদের শত্রু। তাদেরকে আমরা বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করবোই।

তিনি বলেন, আমি জানি এটা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান না। তারপরেও বলবো, ১৯৭১ সালে আমাদের স্লোগান ছিল, তুমি কে আমি কে -বাঙালি বাঙালি। পরবর্তীতে বলা হয়েছিল জয় বাংলা। বাংলাদেশ এখন বিপদমুখী। আমি পশ্চিমবঙ্গের ভাই বোনের কাছে আবেদন রাখব যে, আমাদের পাশে থাকুন। আমাদের পাশে দাঁড়ান। আমি কৃতজ্ঞ যে ভারত সরকার আমাদের জননেত্রীকে আশ্রয় দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি এখান থেকে দিল্লি যাব। সেখানে ৭ দিন থাকার পর আবার আমেরিকা ফিরে যাব। কিন্তু যাওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে বলে যেতে চাই, অতি শীঘ্রই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরবে। তখন এই ইউনূস সরকারের একজনও আর বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। আমি আপনাদের হাতজোড় করে অনূরোধ করতে চাই, তখন যেনো এই ইউনূসপন্থীদের পশ্চিমবাংলায় কোনো প্রকার আশ্রয় দেবেন না। আপনি হিন্দু হোন, মুসলমান হন, ক্রিশ্চিয়া হোন বা বৌদ্ধ হন। আপনার প্রধান দায়িত্ব আপনার সমাজ এবং সোসাইটিকে রক্ষা করা। বাংলাদেশের শুধু যে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে তা নয়, সেখানে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলছে তারাই নির্যাতিত হচ্ছে। বাংলাদেশের যারা এখন সরকার চালাচ্ছে তারা অবৈধ-অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক মৌলবাদ, দখলদার এবং ষড়যন্ত্রকারী।

এদিনের অনুষ্ঠানে মঞ্চ থেকে ২০২৬-এ বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে, ‘আজ বাংলাদেশ কাল, পশ্চিমবঙ্গ’ শিরোনামে বই উদ্বোধন হয়। এ সময় মঞ্চে ছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, উদ্বাস্তু সমিতির আহ্বায়ক, বিজেপি নেতা ড. মোহিত রায়, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা.  ইন্দ্রনীল খাঁ, এবং ভারত সেবাশ্রম এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্তিক মহারাজ, আরএসএস পূর্ব শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. জিষ্ণু বসু ও প্রবাসী ড. রাব্বী আলম। যদিও এদিন ব্যস্ততার কারণ, অনুষ্ঠানে যোগ দেননি, বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, ১৭ মার্চ ২০২৫
ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।