কলকাতা: ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ২৮ জনের মধ্যে তিনজন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি। তারা হলেন - কলকাতা বেহালার সখের বাজারের সমীর গুহ, বৈষ্ণবঘাটার বিতান অধিকারী এবং পুরুলিয়ার মণীশরঞ্জন মিশ্র।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৮টা নাগাদ দমদমে নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় সমীর গুহ ও বিতান অধিকারীর মরদেহ। মণীশরঞ্জন মিশ্রের দেহ রাঁচী বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
এদিকে কাশ্মীরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ত্রাসীদের আধাঘণ্টা ধরে চলা হত্যাকাণ্ডের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা কেন সেখানে পৌঁছাতে পারল না? - প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সন্ত্রাসবাদীদের কোনো জাত হয় না, এদের ক্ষমা করা যায় না। কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না, এতক্ষণ সময় লেগেছে, বেছে বেছে ওরা হত্যা করেছে। ওখানে তো অনেক আর্মি ছিল, সীমান্ত এলাকা তো এমনিতেই সেনসেটিভ।
স্থানীয় তথ্য মতে, আধাঘণ্টা ধরে বন্দুকধারীরা তাদের মুভমেন্ট চালায়। রীতিমতো পরিচয় জেনে পুরুষ পর্যটকদের হত্যা করে। এরপর এলাকা ছাড়ে বন্দুকধারীরা।
এই প্রেক্ষিতেই মমতার প্রশ্ন, সেনা কেন সেখানে সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছতে পারল না? পাশাপাশি মমতার মন্তব্য, এলাকাটি পাকিস্তান সীমান্তঘেঁষা। সেখানে কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা থাকবে?
মমতা এরপর বলেন, তবে এসব নিয়ে এখন কিছু বলব না, আমরা চাই যারা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা করা হোক। সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে বরদাস্ত করার প্রশ্নই ওঠে না।
এ সময় মুখ্যমন্ত্রী জানান, নিহত পর্যটকদের সৎকারে সব ধরনের ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। বাকি পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে বেহালার সখের বাজারের বাসিন্দা সমীর গুহ কয়েক দিন আগে সপরিবারে কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়েছিলেন। বুধবারই ফেরার কথা ছিল তাদের, ফিরলেনও। কিন্তু স্বামীকে কফিনবন্দি অবস্থায় নিয়ে ফিরতে হলো তার স্ত্রী শবরীকে। মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের জনপ্রিয় বৈসরন এলাকায় পর্যটকদের ওপরে নৃশংস হামলায় প্রাণ হারালেন সমীর।
স্ত্রী সোহিনী এবং সন্তানকে নিয়ে কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়েছিলেন পাটুলির বিতান অধিকারী। মঙ্গলবার দুপুরেও বাড়িতে ফোন করেছিলেন। তখনও পরিবারের সঙ্গে আনন্দে ঘুরছিলেন, প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করছিলেন বিতান। কিন্তু তার কিছু সময় পরেই সোহিনীর সামনেই বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন বিতান।
বুধবার সন্ধ্যায় তার দেহও ফিরেছে কলকাতায়। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরে বিতানের স্ত্রী সোহিনী সন্তানকে দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘ওর চোখের সামনে ওর বাবাকে মেরেছে। ’
পুরুলিয়ার ঝালদার মণীশরঞ্জন কর্মসূত্রে হায়দরাবাদে থাকতেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবিতে কাজ করতেন। আগে থাকতেন রাঁচীতে। সেখান থেকেই সম্প্রতি বদলি হয়ে যান হায়দরাবাদে। সেখান থেকেই গত ১৫ এপ্রিল পরিবারকে নিয়ে ভ্রমণে বেরোন মণীশ। অযোধ্যা, হরিদ্বার ঘুরে কাশ্মীরে যান। মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তারও।
এদিকে ভারতের পক্ষ থেকে এখনও এ নিয়ে সরকারি বিবৃতি দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পতাকায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায় রাজ্য বিজেপি।
বুধবার সন্ধ্যায় বণঁগা লাগোয়া হাবরা স্টেশন সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিজেপিকর্মীরা জড়ো হয়ে হাবরা স্টেশন মোড়ে যশোর রোডে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভের ফলে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয় ।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির অভিযোগ, পাকিস্তানের মদতে কাশ্মীরে হামলা হয়েছে। সেই অভিযোগে পাকিস্তানের পতাকায় আগুন জ্বালিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে পা দিয়ে পাড়াতে দেখা যায় বিজেপি কর্মীদের।
এদিকে কাশ্মীরে মঙ্গলবারে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হওয়ার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, ইরান, ইসরায়েল – সকলেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ভারতের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন।
ঘটনার সময়ে সৌদি আরব সফরে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সফর কাটছাঁট করে বুধবার ভোরে তিনি ভারতে ফিরে আসেন।
আগের নিউজ লিংক>> কাশ্মীরে নিহত ৩ বাঙালির দেহ ফিরল কলকাতায়
বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৫
ভিএস/এসএএইচ