কলকাতা: আবার একবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাকযুদ্ধে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ।
মোদী পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে বলেছেন, পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসীরা যা করেছে, তা শুধু ভারতীয়দের ওপরে হামলা নয়, মানবতার ওপরে হামলা ছিল।
একইসঙ্গে তার বার্তা, অপারেশন সিঁদুর জারি রয়েছে। পাশাপাশি তার রাজনৈতিক বক্তব্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেও নিশানা করেছেন মোদী।
এর বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছেন মমতাও। মোদীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, এত বড় নেতা আপনি, আমেরিকা বললেই চুপ হয়ে যান? এখনও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারেননি কেন? এসব দেখানোর জন্য? আগামীতে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি আবারও মুখ্যমন্ত্রী হবেন? নাকি মোদী বাহিনী থেকে উঠে আসবে অন্য কেউ? এই তরজার মধ্য দিয়ে বাংলা যখন ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হচ্ছে। ঠিক সেই আবহে, অপারেশন সিঁদুরের পর প্রথম পশ্চিমবঙ্গে এলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর এই দুই মহারথির বাকযুদ্ধর মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের এক প্রকার দামামা বেজে গেল।
অপারেশন সিঁদুরের পাশাপাশি মমতার সরকার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রধানমন্ত্রী কি বার্তা দেন সেদিকেই নজর ছিল রাজ্যবাসীর। এদিন আলিপুরদুয়ারের একটি জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পাপ করার পরও দোষ কবুল করে না তৃণমূল। দুর্নীতির প্রভাব গরিব মানুষের ওপর পড়েছে। আর তার উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি। এই সরকার হাজারো শিক্ষককে অসহায় করে দিয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। শুধু তাদের নয়, তাদের পরিবার এবং হাজারো শিক্ষার্থীর। এত বড় পাপ তৃণমূলের নেতারা করলেন। আর অদ্ভুতভাবে এরা নিজেদের দোষ মানছে না। উল্টে আদালতকে দোষী বলছেন?
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের ২৬ হাজার সরকারি স্কুলের শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনাসহ রাজ্য সরকারের একাধিক দুর্নীতি নিয়ে এদিন সরব হতে দেখা যায় মোদীকে। একইভাবে অপারেশন সিঁদুর জারি রয়েছে বলে জানান তিনি।
এরপরই রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন থেকে এদিন সরব হন মমতা। অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে মমতা বলেছেন, এই নাম দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। যে সময় কেন্দ্র সরকারের পাশে থেকে বিরোধীরাও দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছে, সেই সময় নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে এখানে রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মমতা বলেছেন, আমরা সিঁদুরের সম্মান করি। নারীরা তার স্বামীর থেকে সিঁদুর পরেন। আপনি সেই সিঁদুরকে অসম্মান করছেন। আপনি সবার স্বামী নন। নিজের স্ত্রীকে সিঁদুর পরাচ্ছেন না কেন? অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এ কথা বলতে হচ্ছে।
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এত বড় বড় কথা বলেন। ভেবেছিলাম সেনাদের স্যালুট করতে আসবেন। সিকিমে তো গেলেনই না। ভয় পান নাকি? বিদেশে তো এত ঘোরেন। প্রচার হওয়া উচিত সেনার। আমাদের প্রতিনিধিরা বিদেশে তাই করছেন। এরপরই মমতার প্রশ্ন, এখনও জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করতে পারেননি কেন? এই সব (যুদ্ধ) দেখানোর জন্য? এত বড় নেতা আপনি, আর আমেরিকা বলল আর চুপ হয়ে গেলেন? আগে নিজের দোষ দেখুন। আপনাদের দুর্নীতি অনেক বেশি। গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ পাকিস্তানের চরবৃত্তি করার জন্য কেউ ধরা পড়ে, তখন আপনারা কী করেন?
মোদীকে সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে মমতা বলেছেন, উনি আগে নিজেকে চাওয়ালা বলতেন। পরে বললেন, পাহারাদার, আর এখন সিঁদুর বেচতে এসেছেন? উনি বিভাজনের রাজনীতি করছেন। তার ওপর আর মানুষের আর বিশ্বাস নেই। মমতার অভিযোগ, বাংলা আপনার (কেন্দ্র সরকার) কাছে এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি রুপি পায়। আগে সেই অর্থ দিন, তারপর কথা বলুন।
দুদিনের এই সফরে সিকিম থাকলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেখানে যেতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। ভার্চ্যুয়াল বক্তব্য রাখেন সেখানে। এরপর পশ্চিমবঙ্গে আসেন তিনি। আলিপুরদুয়ারে একটি অনুষ্ঠান থেকে কোচবিহার ও আলিপুর জেলায় সিটি গ্যাস বণ্টন (সিজিডি) প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে আলিপুরদুয়ারের একটি জনসভাতে অংশ নেন মোদী।
আলিপুরদুয়ার শেষ করেই তিনি চলে যান বিহারের পাটনায়। শুক্রবার (৩০ মে) বিহারে উন্নয়নমুখী প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পাশাপাশি পাটনায় জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। এরপর উত্তরপ্রদেশে যাবেন তিনি। তবে এই সফরের মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ সফর। কারণ চলতি বছর বিহারে বিধানসভা ভোট আর বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন।
ভিএস/এএটি