ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ জুন ২০২৫, ২২ জিলহজ ১৪৪৬

ভারত

মোদী সরকারের ৩ নির্দেশ মানবেন না মমতা, ক্ষোভ ঝাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৫৯, জুন ১৯, ২০২৫
মোদী সরকারের ৩ নির্দেশ মানবেন না মমতা, ক্ষোভ ঝাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী

‘বাংলা দিবস’ একমাত্র ঠিক করবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ; অন্য কেউ নয়। এই নিয়ে ফের সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাছাড়া ২০ জুন দিনটিতে ‘বাংলা দিবস’ পালনের নির্দেশও মানতে রাজি নন তিনি। একই সঙ্গে মমতার প্রশ্ন, ভারতের একাধিক রাজ্য যদি নাম পরিবর্তন করতে পারে তাহলে, কেনো পারবে না পশ্চিমবঙ্গ? পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারের ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পশ্চিমবঙ্গ পালন করবে না বলে স্পষ্ট ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।  

মোদী সরকারের এই তিন বিষয়ে  ফের ক্ষোভ ঝাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

বুধবার (১৮ জুন) রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন থেকে মমতা বলেছেন, উত্তর প্রদেশের রাজভবন থেকে বিশেষ সচিব একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে জানানো হয়েছে আগামী ২০ জুন উত্তর প্রদেশের রাজভবনে ‘বাংলা দিবস’ পালন করা হবে। শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই দিনটি পালন করা হবে। এই চিঠি দেখেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বলেছেন, আমাদের রাজ্যে ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে একটা নির্দিষ্ট দিন আছে। সেটা পহেলা বৈশাখ। কেন স্বাধীনতার আগের একটা দিনকে আমরা ধরব? বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস বাংলা ঠিক করবে না? আপনারা ঠিক করবেন? বিজেপি সবকিছু চাপিয়ে দেবে? ওরা ঠিক করে দেবে বাংলায় কবে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করবে, নজরুল জয়ন্তী পালন করবে, পহেলা বৈশাখ কবে পালন করবে? বাংলা কী খাবে, কী পরবে, আপনারা ঠিক করবেন?

কেন ২০ জুন - সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মমতা বলেছেন, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন পরাধীন ভারতে একটা আইন পাশ হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ) ভারতের সঙ্গে থাকবে এবং বাংলাদেশ যুক্ত হবে পাকিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু, ভারত স্বাধীন হয়েছে ওই বছরের ১৫ আগস্ট। অর্থাৎ তারও দু’মাস পর। এখন এটা বিজেপি (কেন্দ্র সরকার) ইচ্ছামতো চাপিয়ে দেবে? এটা বাংলার চরম অসম্মান বলে আমরা মনে করছি।

উল্লেখ্য, দুই বছর আগে মমতার সরকার ঘোষণা দিয়েছিল ‘বাংলা দিবস’ পালন হবে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ। সেই মোতাবেক আইন পাস হয় রাজ্যে। এরপর থেকে পশ্চিমবঙ্গে পহেলা বৈশাখে পালন হয়ে আসছে বাংলা দিবস। কিন্তু, শুরু থেকেই কেন্দ্রের দাবি ছিল, ২০ জুন দিনটি ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করতে হবে।

এরপর পাশাপাশি রাজ্যের নাম পরিবর্তন নিয়ে আবারও একবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা পাঁচ বছর আগে থেকে দাবি তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ করা হোক। কিন্তু, আজ অবধি সম্মতি দেয়নি কেন্দ্র সরকার। মমতার যুক্তি, ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর হিসেবে রাজ্যকে ভারতের তালিকায় শেষে পড়ে থাকতে হয়। অর্থাৎ ওয়েস্ট বেঙ্গল (west bengal),যার জেরে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয় রাজ্যকে।  

তিনি বলেন, অনেক বছর ধরে নাম বদলানোর কথা বলেছি। যা দিতে বলেছে, দিয়েছি। তিন তিন বার বিল সংশোধন করে পাঠিয়েছি। কিন্তু, কথা কানে উঠছে না। বোম্বে যদি মুম্বাই হয়, উড়িষ্যা হয়েছে ওড়িশা। তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কেন বাংলা হবে না? যা যা করার সব তো করেছি। বাংলা রাজ্য ভারতের মধ্যে পড়ে।  

যদিও এর আগে কেন্দ্র একাধিক যুক্তির মধ্যে অন্যতম যুক্তি ছিল, বাংলা এবং বাংলাদেশ - খুবই কাছাকাছি শব্দ। ফলে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই নিয়ে এদিন মমতা বলেছেন, পাকিস্তানে যদি একটা পাঞ্জাব নামে রাজ্য থাকতে পারে, একই নামে ভারতেও আছে। তাহলে বাংলা নামে আর একটা রাজ্য থাকতে পারে না? আপনারা বাংলাকে চরম অপমান করছেন বলে আমরা মনে করি।  

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গকে ‘বাংলা’ নামের স্বীকৃতি না দিলেও মমতা বাংলা নামটাই ব্যবহার করেন। এর পাশাপাশি ভারতে জরুরি অবস্থার ৫০ বছর উপলক্ষে আগামী ২৫ জুন ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। যা সব রাজ্যকে পালন করতে হবে। সেই মর্মে একটি চিঠি এসেছে পশ্চিমবঙ্গেও।  

মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই দিবস পালনে তার আপত্তি আছে। তাই বাংলায় এই দিবস পালিত হবে না। দেশে এখন প্রতিদিনই সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। তাহলে তো প্রতিদিন সংবিধান হত্যা দিবস পালন করা উচিত।

মমতার অভিমত, তৎকালীন জরুরি অবস্থা দেশবাসী ভালোভাবে নেয়নি। আমিও সেভাবে মানি না। যদিও আমি এক সময় কংগ্রেসে ছিলাম। কিন্তু এর অন্য নাম দেওয়া যেত।  ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ এই নাম আমাদের পছন্দ নয়। ফলে বাংলা কোনোভাবেই দিনটি পালন করবে না।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন  থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত ২১ মাসব্যাপী ভারতের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ। এই জরুরি অবস্থার পরামর্শদাতা ছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। যা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল গোটা ভারতজুড়ে। জনগণ মনে করে ইন্দিরা সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল।

ভিএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।