কলকাতা: গত বছর কলকাতার সরকারি আরজিকর হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় এক নারী চিকিৎসককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছিল। বিচার দাবিতে, এখনও মাঝে মধ্যেই উত্তাল হচ্ছে শহরের রাজপথ।
যার জেরে শুক্রবার (২৭ জুন) রথের দিন উৎসব ভুলে, ফের উত্তাল হয়েছে কলকাতা। এই ঘটনায় সরাসরি নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের এক ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু তাতেও শহরবাসীর ক্ষোভ কমছে না। ধাপে ধাপে পথে নামছে বিভিন্ন রাজনৈতিকসহ একাধিক সংগঠন।
ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার কসবায় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ক্যাম্পাসে। এই ঘটনায় তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে কসবা থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত ওই আইন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী, বাকি দুজন কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী।
কসবা থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা ওই শিক্ষার্থী। ২৪ বছর বয়সী নির্যাতিতার অভিযোগ, কলেজ ভর্তি সম্পর্কিত ফর্ম আবেদনপত্র জমা দিতে বুধবার (২৫ জুন) দুপুর ১২টা নাগাদ তিনি কলেজে যান। ফর্ম দেওয়ার নাম করে তাকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। কলেজের ইউনিয়ন রুমে বসেছিলেন শিক্ষার্থী। একসময় সন্ধ্যার দিকে মূল অভিযুক্ত কলেজের প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর রুমে জোর করে তাকে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামছে পুলিশ।
প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র (৩১) ও তার সহযোগী জাহিব আহমেদ (১৯)-কে। তৃতীয় অভিযুক্ত প্রতিম মুখোপাধ্যায় (২০)-কে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ নাগাদ তার হাওড়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন অভিযুক্ত ব্যক্তিরই মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত মনোজিৎ আবার রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ কলকাতা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে।
নির্যাতিতা ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ পত্রে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। জবাবে ওই প্রস্তাব নাকচ করে, শিক্ষার্থী জানান তার বয়ফ্রেন্ড রয়েছে। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নেয় মনোজিৎ। কলেজ রুমের মধ্যে আটকে রেখে ওই শিক্ষার্থীকে তার পুরুষ বন্ধুকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি তার বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাতে প্রধান অভিযুক্ত মনোজিতের পা ধরে অনুরোধ জানালেও তাতে কাজ হয়নি। এরপর তাকে হকিস্টিক দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করা হয়। একপ্রকার ক্লান্ত হয়ে পড়লে নিরাপত্তারক্ষীর রুমে জোর করে তাকে আটকে রাখা হয়। এরপর বিবস্ত্র করে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। এই কাজে তাকে সহায়তা করে আইন কলেজেরই দুই শিক্ষার্থী জাহিদ এবং প্রতিম।
বৃহস্পতিবার তিন অভিযুক্তকেই কলকাতার আলিপুর আদালতে তোলা হয়েছে। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হলে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই নির্যাতিতার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে। নমুনা সংগ্রহে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে ফরেনসিক টিম। ইতিমধ্যেই কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে।
এদিন ঘটনা সামনে আসতেই বাম, কংগ্রেস, বিজেপি সহ সবকটা রাজনৈতিক দল পথে নেমেছে। স্তদ্ধ হয়ে যায় শহরের রাজপথ। চলে পুলিশের সাথে চরম ধস্তাধস্তি। পুলিশ সাময়িকভাবে পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রণে আনলেও চাপা উত্তেজনা কাজ করছে কলকাতায়।
গত বছরের ৯ আগস্ট কলকাতার সরকারি আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় এক ডাক্তারি ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনা গোটা দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রায় এক বছর হতে চললেও নির্যাতিতার পরিবার এখনো ন্যায় বিচার পায়নি। ওই ঘটনার পরেই কলকাতা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। যদিও সরকারের বক্তব্য, ঘটনাটি অত্যন্ত নক্কারজনক। দোষীদের শাস্তি চায়।
ভিএস/এমএম