ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

খুলনাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ পাটকলে ৪০ কোটি টাকা বকেয়া

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
খুলনাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ পাটকলে ৪০ কোটি টাকা বকেয়া ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টি জুট মিলের ১৬ হাজার ৩শ’ শ্রমিকের চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ৪০ কোটি টাকা বেতন বকেয়া রয়েছে। ধর্মঘট, অবরোধসহ নানা আন্দোলন করে ৭ দিন ধরে শ্রমিকরা বকেয়া আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাটকল শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পহেলা বৈশাখের মধ্যে পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে ৩০০ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ৩০০ কোটি টাকাসহ সর্বমোট এক হাজার কোটি টাকা পাট মন্ত্রণালয়কে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার (১১ এপ্রিল) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। পহেলা বৈশাখের আগে যে ৩০০ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে খুলনার ৭ পাটকলের শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৪০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা আশায় বুক বাঁধছেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেন সোমবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানান, খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টি জুট মিলের ১৬ হাজার ৩শ’ শ্রমিকের প্রায় ৪০ কোটি টাকা বেতন বকেয়া রয়েছে। এগুলো হলো-খালিশপুরের প্লাটিনামে ৪ হাজার শ্রমিকের ১০ সপ্তাহের বেতন, ক্রিসেন্টে ৪৮শ’ শ্রমিকের ৯ সপ্তাহের, দিঘলিয়ার স্টারে ২৬শ’ শ্রমিকের ৮ সপ্তাহের, আটরা শিল্প এলাকার আলীমে ১৫শ’ শ্রমিকের ৩৮ সপ্তাহের, ইস্টারে ১৪শ’ শ্রমিকের ৫ সপ্তাহের, নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই’র ১৪শ’ শ্রমিকের ৫ সপ্তাহের ও কার্পেটিং জুট মিলের ৬শ’ শ্রমিকের ৪ সপ্তাহের বেতন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের বৈঠকের পর চলমান আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  

ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, সরকারের সঙ্গে নেতৃবৃন্দের দাবির বিষয়ে সুষ্ঠু আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।

বিজেএমসি’র খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের ধর্মঘটের ৭ দিনে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিলের প্রায় এক হাজার মেট্রিকটন পাটপণ্য উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিজেএমসি। চলতি অর্থবছরে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি মিল ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দৌলতপুর, খালিশপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলে কাঁচা পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ লাখ ৫৩ হাজার কুইন্টাল। এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার ৪৯৮ কুইন্টাল, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৬ শতাংশ। এসব মিলের মধ্যে ৭টি মিলের শ্রমিকরা রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন।

পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়, পে-কমিশনের মতো অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে শ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশন বোর্ড গঠন, ১ জুলাই ২০১৩ ঘোষিত ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান এবং খালিশপুর, দৌলতপুর, কর্নফুলী জুট মিলের শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও সব পাওনা পরিশোধের দাবি আদায়ে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সাত পাটকলে অনির্দিষ্টালের ধর্মঘট গত ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়। সেই থেকে এসব মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে আন্দোলনে থাকা শ্রমিকরা। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্রবার বিরতির পর  শনিবার ধর্মঘটের পঞ্চম দিনে শ্রমিকরা স্ব-স্ব জুটমিলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

একই দাবিতে রোববার বেলা ১১টায়  স্ব-স্ব শিল্পাঞ্চলে ভুখা মিছিল করেন শ্রমিকরা। রোববারের মধ্যে শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে সুষ্ঠু কোনো সমাধান না হওয়ায় সোমবার  সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা করে লাগাতার রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ সময় : ২০৩৫ ঘণ্টা,  এপ্রিল ১১, ২০১৬
এমআরএম/কেআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।