সাভার থেকে ফিরে: বিয়ের দশ বছর পর আলোকিত হয় আলম ও মর্জিনা আক্তারের ঘর। ছেলে আলিফের বয়স যখন আড়াই বছর, তখন ঘটে দুর্ঘটনা।
সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় স্ত্রী হারানো আলম এখন দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই দিয়েছেন মেয়েদের চুরি-ফিতাসহ অন্যান্য সামগ্রীর দোকান। সেই দোকানে স্মৃতি হিসেবে ঝুলছে স্ত্রী মর্জিনার একটি ছবি।
দোকান খুলতে খুলতে সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেন আলম। বলেন, মর্জিনা চারতলায় ফ্যানটম কারখানায় কাজ করতো। আমি কাজ করতাম পাকিজা গার্মেন্টসে।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে গার্মেন্টস থেকে সকাল ৯টায় উপস্থিত হই, এসে দেখি নয়তলা ভবন দুই তলা হইছে। রাস্তার ওই পাড় থেকে দেখে চিৎকার পাড়ি। উদ্ধার কাজে যোগ দেই। আর স্ত্রীকে খুঁজি। এর দুই দিন পর বাসায় যাই।
‘আড়াই বছরের ছেলে আলিফ বলে- আব্বু, আম্মুকে পাওনি। আম্মুকে আনোনি কেন? এই কথায় বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে।
তিনি বলেন, তৎক্ষণাৎ আবার ছুটে গিয়ে উদ্ধারকাজে যোগ দেই। ১৮ দিনের মাথায় অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে লাশ পাওয়া যায়, পরে সাভার কবরস্থানে দাফন করি।
কথা বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাঃস ছাড়েন আলম।
সাভারের বক্তারপুরের আলমের সাথে ২০০১ সালে বিয়ে হয় ফরিদপুরের রাজবাড়ী বেলগাছি এলাকার মর্জিনার। ১০ বছর পর তাদের ঘরে আসা আলিফ এখন সাভার ব্যাংক কলোনিতে ড্যাফোডিল স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সাত মাস আগে করেছেন দ্বিতীয় বিয়ে।
স্ত্রী এবং ছেলের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে ১২ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন আলম। ছেলের জন্য ব্যাংকে জমা ৬ লাখ, প্রথম স্ত্রীর শাশুড়ীর কাছে তিন লাখ এবং নিজে তিন লাখ টাকা পেয়েছেন। এই টাকা দিয়ে দোকান দিয়েছেন আলম।
দোকানে বেচাকেনা খুব ভালো না হলেও রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবার এখানে এলে শান্তনা পান আলম।
দুর্ঘটনার দিনের কথা তুলে বলেন, আগের দিন ফাটল দেখা দিলেও শ্রমিকদের বুঝতে দেওয়া হয়নি। না ঢুকলে সময় মত বেতন দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়।
‘এটা গণহত্যা বলা চলে। ওই দিন শ্রমিকদের ভেতরে প্রবেশের বিষয়ে রানার দাপট কাজ করেছে। লোকগুলোকে ঢুকতে না দিলে দুর্ঘটনা ঘটতো না, এতো লোক মরতো না। ’
গত ১৮ এপ্রিল দুর্ঘটনার স্থলটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পানিতে ভাসছে তাজা কচুরিপানা। আশপাশের ধ্বংসস্তূপে ঘাস-ঝোপ গজিয়েছে।
তিন বছর আগে ইতিহাসের ভয়াবহতম দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোদের চেখের জলে এখনও ভাসে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার স্থল।
‘এই জায়গাটা ২০তলা ভবন করে নিহতদের স্বজন ও আহত শ্রমিকদের নামে বরাদ্দ দিলে উত্তম কাজ হবে। আর এখানে একটা বড় বেদি তৈরি করা উচিত। যাতে সারা দুনিয়ার মানুষ জানতে পারে, সাবধান হয়।
আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এখনও হাড়গোড় পাওয়া যায় বলে জানান স্থানীয়রা।
মোস্তফা খান নামে স্থানীয় একজন ডেকে নিয়ে দেখান, ধ্বংসস্তূপের আবর্জনার মধ্যে একটি হাড় খণ্ড। তাদের দাবি, বুলডোজার দিয়ে যখন ভবন ভাঙে তখন লাশ চলে যায়। কয়েক দিন আগে টোকাইরা রড কাটার সময় নাকের স্বর্ণের ফুলও পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএম