ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে: পণ্যের চাহিদা বিশ্লেষণ করে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক বাজার খুঁজতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী, যত বেশি ব্যবসা হবে, যত বেশি রপ্তানি হবে, তত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হবে, আমাদের দেশের সম্পদ বাড়বে, অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
রোববার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় করার স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে ১১৩টি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ৫২টি স্বর্ণ, ৩৭ রুপা, ২৪ ব্রোঞ্জ ট্রফি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এসব প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীদের হাতে পদক ও সনদ তুলে দেন।
নতুন বাজার খোঁজা ও পণ্য বহুমুখীকরণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করুন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তাদের চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের নতুন নতুন দেশে ও পণ্যের বাজার খুঁজে বের করতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন বাজার সৃষ্টিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে যা-যা দরকার সরকার তার সব করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ব্যবসায়ের জন্য ক্ষমতায় আসিনি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। আমরা ব্যবসা করবো না। আমাদের লক্ষ্য ব্যবসায়ের সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। ব্যবসায়ীদের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়ার জন্য কাজ করছি, যেন তারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেন।
এসময় দেশজ কাঁচামাল নির্ভর শিল্পের ওপরও গুরুত্ব দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রমঘন শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কর্মক্ষম যুবক আছে। সস্তায় এখানে শ্রম পাওয়া যায়। আমরা এখন বিদেশিদের আমাদের বিশাল তরুণ কর্মশক্তির কথা বলি। এই তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের তরুণদের কাজে লাগাতে পারলে তাদের কেউ আর সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যেতে পারবে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে উদার নীতিমালা গ্রহণ, গত সাত বছরে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা প্রদান, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, ঋণ সুবিধা, মুন্সিগঞ্জ জেলার বাউশিয়াতে প্রায় ৫৩১ একর জমির ওপর একটি অত্যাধুনিক গার্মেন্টস শিল্প পার্ক নির্মাণ, আইটি পার্ক নির্মাণ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্টে অনুস্বাক্ষর, খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের ব্যবহার রোধকল্পে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ফরমালিন কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০১৫ প্রণয়ন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ব্যবস্থাপনায় বিদেশে ১৯৬টি আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নেওয়া, অবকাঠামো উন্নয়নসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ফরেনকারেন্সি অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর বিদেশে টাকা গুজে রাখতে হবে না। বিদেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা আনবেন, ব্যবসার জন্য সে পরিমাণ টাকা নিতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে কেউ যেন হুন্ডি বা জঙ্গি অর্থায়নে টাকা আনা-নেওয়া করতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালকে টার্গেট করে আমরা রোডম্যাপ তৈরি করে সে অনুযায়ী কাজ করছি।
রপ্তানি আয়ে সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দাটা যদি না হতো, ইউরোর দাম যদি না কমতো, আমাদের রপ্তানির টাকার অঙ্কটা আরও বেশি দেখাতে পারতাম। তারপরও রপ্তানি হচ্ছে, সেটা বড় কথা।
দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেছি। খাদ্য ক্রয় করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হতো। এখন তা হয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কোনো ব্যবসায়ী ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা ক্ষমতায় আসার পর সার্বিক পরিকল্পনায় ব্যবসা খাতকে এগিয়ে নিতে থাকি।
তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকতে লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছিলো দেশকে। ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারতো না। হাওয়া ভবনকে কমিশন দিতে হতো। কেবল স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিজেদের জন্য কাজ করেছে। কিন্তু আমরা দেশের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৬/আপডেট ১৩১৩/১৬৩৯ ঘণ্টা
এমইউএম/টিআই/এইচএ/
** দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়াই লক্ষ্য
** দেশের মানুষকে উন্নতি জীবন দিতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু
** বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের কাছে অনুকরণীয়