প্লাস্টিক, মেলামাইন আর স্টিলের পণ্যের ভিড়ে সারাবছর মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর না থাকলেও বর্ষবরণ উৎসবের কদর বেড়ে যায় অনেক।
কুড়িগ্রামের জেলা সদর, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায় কুমোর সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার বংশানুক্রমে মৃৎশিল্পের এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে কুড়িগ্রাম শহরতলীর কুমোরপাড়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, সবাই ব্যস্ত নিজেদের কাজে। কেউ মাটির তৈরি খেলনা মুছে পরিষ্কার করছে। আবার কেউ তাতে রঙ তুলির শেষ আঁচড় বুলিয়ে রোদে শুকাচ্ছে।
মাটির তৈরি খেলনা, পুতুল, টেপা পুতুল, মাটির ব্যাংক, সানকি, গ্লাস সহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী বৈশাখী মেলায় সরবরাহের জন্য সাজিয়ে রাখছেন তারা।
রাত পোহালেই ছুটবেন দূরদূরান্তের বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত বৈশাখীমেলা বা হাটের উদ্দেশ্যে। কাজ ছাড়া কথা বলারও ফুরসৎ নেই তাদের।
মৃৎশিল্পী মালতী রানি (৩৫)। তার সাথে বাংলানিউজের এই প্রতিনিধির কথা হয়। তিনি বললেন, চৈত্র-বৈশাখ মাস এলেই আমাদের ধরে যেন প্রাণ ফিরে আসে। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে মাটির জিনসিপত্রের চাহিদা বেড়ে যায়। ব্যস্ত থাকতে হয় কুমোরপাড়ার নারী-পুরুষ-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষদের।
কুমোরপাড়ার বৃদ্ধা চন্দ্রভান বালা (৬০) বাংলানিউজকে বলেন, এরকম সারাবছর চাহিদা থাকলে আমরা আরো অনেক ভালোভাবে বাপ-দাদার এ পেশা আঁড়েঁ ধরে থাকতে পারতাম। মৃৎশিল্পের আরো বিকাশ ঘটতো।
কুমোরপাড়ার অধিবাসী নরেশ চন্দ্র পাল (৬৫) বাংলানিউজকে বললেন, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়েও আমরা বাপ-দাদার এই পেশাকে কোনো রকমে ধরে আছি। বছরের অন্য সময় মাটির জিনিসের তেমন চাহিদা না থাকলেও নববর্ষ উপলক্ষে বেড়ে যায় চাহিদা। পৈত্রিক এই পেশায় জীবন চালানো সম্ভব না হওয়ায় অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাচ্ছে। আবার অনেকে এই পেশার পাশাপাশি অন্য পেশা বেছে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।
মৃৎশিল্পী মহেশ্বর রায় (৭০) বাংলানিউজকে বলেন, মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মাটির জিনিসপত্র তৈরি ও রঙ করা গেলে এখনো মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এ ব্যাপারে কুটিরশিল্প দপ্তর ও সরকারের সহায়তা পেলে আমাদের তৈরি মাটির জিনিসপত্র আধুনিক মানের হতো। ঘুরে দাঁড়াতো কুড়িগ্রামের মৃৎশিল্প।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
জেএম