ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প

বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে চায় বসুন্ধরা গ্রুপ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে চায় বসুন্ধরা গ্রুপ ছবি ও ভিডিও: জিএম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশের উন্নয়নে বসুন্ধরা গ্রুপ (বিজি) অংশীদার হতে চায় বলে জানিয়েছেন দেশের অন্যতম প্রথিতযশা শিল্পগোষ্ঠীটির চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। 

তিনি বলেছেন, আজকে বাংলাদেশ যে উন্নয়নের রোল মডেল, বাংলাদেশ যে রকেট গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশা করি বাংলাদেশ রকেট গতিতে এগিয়ে যাবে।

আমরাও আপনাদের সঙ্গে অংশীদার হতে চাই।  

সোমবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর রেডিসন ব্লুতে ব‍াংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন লিমিটেডের মধ্যে জমির ইজারা সংক্রান্ত সমঝোতা (এমওইউ) সই অনুষ্ঠানে বিজি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।  

এমওইউতে সই করছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান  ও বেজা’র নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, আশা করি ২০২১ সালে আমরা মধ্য আয়ের দেশে চলে যাবো। ২০৪১ সালে আমরা অবশ্যই অবশ্যই উন্নত দেশে যাবো। বিশ্বের সব ইকোনোমিস্টরা কিন্তু বলেন, বাংলাদেশ ইজ অ্যা টাইগার নাউ।  

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা প্রায়ই পত্রিকায় দেখি লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে আর কিছু লাগবে না। আমাদের টাকাতেই আমরা দেশের চেহারা বদলে দিতে পারবো। অনেকেই কেবল বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি দেশের যতো লাভজনক কোম্পানি, তার একটাও বাংলাদেশিদের না। দেশি একটি কোম্পানি লাভজনক হলে তারা আরও অনেক শিল্প গড়ে তোলেন। কিন্তু বিদেশিরা লাভের সব টাকা বিদেশে নিয়ে যায়।  

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, যতো ইন্দোনেশিয়ান বিদেশে ছিলো, তাদের প্রচুর অর্থ বিদেশে ছিলো। মালয়েশিয়ায় ছিলো, সিঙ্গাপুরে ছিলো, হংকংয়ে ছিলো। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ান সরকার ঘোষণা করলো তোমাদের সব টাকা দেশে ফিরিয়ে আনো, আমরা দুই শতাংশ জরিমানায় তা সাদা করে দেবো। এতেই সবাই টাকা ফিরিয়ে আনলো।

বাংলাদেশের চেয়ে বড় বিনিয়োগের জায়গা আর নেই 

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, দেশি কোম্পানিগুলোর দেশের প্রতি, নাড়ির প্রতি যে টান আছে, বিদেশিদের এ দেশের প্রতি নেই। তাই দেশীয় ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে হবে। বাংলাদেশের চেয়ে বড় বিনিয়োগের জায়গা আর নেই।  

বক্তব্য দিচ্ছেন বিজি চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।  ছবি: ব‍াংলানিউজ‘তাই যারাই বিদেশে টাকা নিয়ে গেছেন, সবাইকে বিনয়ের সঙ্গে বলি, ভাই দেশের টাকা দেশে নিয়ে আসেন। সরকারকেও বলবো এ টাকা আনতে ন্যূনতম পদক্ষেপ নিন। কয়েক লাখ কোটি টাকা বিদেশে আছে বলে আমরা ধারণা করি। এই টাকা দেশে এনে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিন। ’ 

তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনোমিক জোন মীরসরাইয়ে আমরা আগেই ৬০০ একর জায়গা অ্যালটমেন্ট নিয়েছি। যদিও তা যৌথভাবে সিকদার গ্রুপ, জেসমিন গ্রুপ এবং আমরা। আজ যে চুক্তি হচ্ছে তা কেবল বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য। ৫০০ একর জমির জন্য সব ক্রাইটেরিয়া ফিলআপের পর বেজা আমাদের এ জমির উন্নয়নের অনুমোদন দিয়েছে। আমরা এখন এ জমি ডেভলপমেন্ট করে শিল্পায়ন করতে পারবো।  

‘আপনারা জানেন, ১৯৮৫ সাল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ শিল্পায়ন, হাউজিং, গুডস ট্রেডিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আজকের এই দিনে আমি প্রথমে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। যার জন্ম না হলে এ দেশ স্বাধীন হতো না, আমরা শিল্পপতি হতে পারতাম না, পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ মাথা উ‍ঁচু করে দাঁড়াতে পারতো না। তার অনেক স্বপ্ন ছিলো। তিনি বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে অনেক শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ’ ছবি: বাংলানিউজ অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার পর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বিরাট ধস নেমে আসে। বাংলাদেশের একটি ব্যাড ইমেজ সবখানে ছড়িয়ে পড়ে। যে দেশের জাতির পিতা দেশকে স্বাধীন করেছেন এবং এজন্য ১৪ বছর জেলে কাটিয়েছেন, সংসার ত্যাগ করেছেন। তাকে যারা হত্যা করতে পারে সে দেশে আর উন্নতি করা সম্ভব না।  

‘কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত তার সুযোগ্য কন্যা এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য একে একে সব সঠিক পদক্ষেপ নিতে থাকেন, পরিকল্পনা করতে থাকেন। আজ আমরা সফল জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে হাজির হয়েছি। ’সমঝোতা সই শেষে ‍াতিথিরা।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, এখন ক্রিকেটেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মানুষ জানতে চায় বাংলাদেশ কেনো এতো ভালো করছে ক্রিকেটে। সেটাও কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অবদান। তিনি যখনই কোনো ধনী লোক দেখেন, কোন মিটিং এ যদি ধনী ব্যবসায়ীদের দেখা হয়, তখনই কিন্তু তিনি খেলাধুলায় ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার কথা বলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যতোটা এগিয়েছে, আমি মনে করি তার সম্পূর্ণ দাবিদার আমাদের প্রধানমন্ত্রী।  

মাদককে দেশের প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, বাংলাদেশের এখন একটাই প্রধান সমস্যা, তা হলো মাদক সমস্যা। আমি বেজাকে বলবো দেশের সকল বিভাগীয় শহর, জেলা শহরে একটি করে স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও থিম পার্ক যেনো ইকোনোমিক জোনের আন্ডারে নেওয়া হয়। তাহলে আমরা মানুষকে আনন্দের খোরাক যোগাতে পারবো।  

বেজার চেয়ারমান পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসজিডির মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম। বেজার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠছে। এ সম্পর্ক বাংলাদেশকে অনেক দ‍ূরে নিয়ে যাবে।

বেজার চেয়ারমান পবন চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ সংস্কৃতি বলতে যা বোঝায়, তা এখনও আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। তবে সে সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। আমরা অনেক শিখেছি। আমরা বিজেএমসি, চিনি শিল্প কর্পোরেশন থেকে শিখেছি। আমরা বুঝেছি আমাদের কোন দিকে যেতে হবে। সরকার সে দিকেই যাচ্ছে। কারণ দেশে বিনিয়োগের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা নষ্ট হলে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কষ্ট হবে। সরকারও তা বোঝে। আমরাও এ বিষয়ে অধিক যত্নবান।  


তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির যে ধারা, আমাদের সবাইকে তা মানিয়ে নিতে হবে। তাহলেই বিনিয়োগের সংস্কৃতি তৈরি হবে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের হার মাত্র দুই শতাংশ। দেশীয় ব্যবসায়ীরাই বাকি বিনিয়োগ করছেন। তবু ওই ছোট বিদেশি বিনিয়োগই অনেক দামি। কারণ বিদেশি বিনিয়োগে কেবল পুঁজিরই বিনিয়োগ হয় না, বিনিয়োগ হয় মেধা, চিন্তা আর প্রযুক্তিরও।  

এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপানের বড়বড় কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে জানিয়ে বেজা চেয়ারম্যান বলেন, তারা আলোচনা করছে এবং চুক্তি সই করছে। টেকনাফ থেকে কুতুবদিয়া পর্যন্ত পুরো এলাকাকেই আমরা পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তুলছি।  

আগামী সপ্তাহে সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়া বিশেষ পর্যটন জোন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি পেতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।  

অনুষ্ঠানে বেজা’র নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান নিজ নিজ পক্ষে সমঝোতায় সই করেন।  

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেজার নির্বাহী সদস্য ড. এম এমদাদুল হক, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, বসুন্ধরা গ্রুপ এবং ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭/আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা
আরএম/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।