ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প

নির্ধারিত দামেও চামড়া নিচ্ছেন না ট্যানারি মালিকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
নির্ধারিত দামেও চামড়া নিচ্ছেন না ট্যানারি মালিকরা চামড়ায় লবণ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা (সাভার): আগের নির্ধারিত দামেও চামড়া কিনছেন না ট্যানারি মালিকরা। ফলে অর্থ ও শ্রম সবই জলে চলে যাচ্ছে চামড়া ব্যবসায়ীদের।

বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিনে সাভার চামড়া শিল্পনগরী ঘুরে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী ওসমান মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চামড়া কেনার আগে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতি ফিট চামড়া ৪০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে নেই।

সেই অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া ক্রয় করে তা বিক্রির জন্য সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন ট্যানারি মালিকদের সে কথা উল্টে গেছে। চামড়ায় লবণ দিচ্ছেন শ্রমিকরা।  ছবি: বাংলানিউজআন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না জানিয়ে তারা আগের নির্ধারিত মূল্য দিয়ে কোনো চামড়া ক্রয় করবে না বলে পরিষ্কার বলে দিচ্ছে। এ ঘটনায় নিরুপায় হয়ে আমরা এখন চোখে অন্ধকার দেখছি।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই দূর-দুরান্ত থেকে চামড়া নিয়ে ট্যানারিতে এসেছে দু'টি পয়সার জন্য। কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে ফেলেছে। যে কারণে মৌসুমী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ট্রাক ভাড়া করে চামড়া নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

এখন তারা চামড়া ফেরতও নিয়ে যেতে পারছে না আবার কম দামে বিক্রিও করতে চাইছে না। ফলে এসব ব্যবসায়ীদেরকে চামড়া নিয়ে বিভিন্ন ট্যানারি মালিকদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা যে দামে চামড়া কিনতে চাইছেন তা দিয়ে গাড়ি ভাড়াও উঠবে না অনেক ব্যবসায়ীর। এরইমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী লবণ না দেওয়ায় পচতে শুরু করেছে তাদের সংগ্রহ করা চামড়া।

দুই পয়সা লাভের আসায় চামড়া কিনে যে বিনিয়োগ করেছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন সেই চামড়াই তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে অনেককে আবার ছোট ছোট ট্যানারিতে জায়গা ভাড়া নিয়ে চামড়ায় লবণ লাগিয়ে রাখতে দেখা গেছে।

এদেরই একজন ব্যবসায়ী শহিদুল হক। শহিদুল বলেন, সারাবছর ধরে ট্যানারিতে চামড়া দিয়ে এলেও ঈদের সময় ট্যানারি মালিকরা আমাদেরকে চিনতেই পারছেন না। সিন্ডিকের মাধ্যমে কেনা দামের চেয়ে অর্ধেক দাম দিয়ে চামড়া নিতে চাইছেন। কিন্তু এতো টাকা লোকসান দিলে পথে বসা ছাড়া আমার আর কোনো পথ থাকবে না।

তাই বাধ্য হয়ে একটি ট্যানারিতে জায়াগা ভাড়া নিলাম। নিজেই লোক দিয়ে চামড়ায় লবণ লাগিয়ে রাখলাম। এখন অনায়াশে তিন থেকে চার মাস চামড়া মজুদ করে রাখা যাবে। এর মধ্যে যদি ভালো দাম পাই তাহলে বিক্রি করে দেবো। তা না হলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবো বলেও জানান তিনি। চামড়ায় লবণ দিচ্ছেন শ্রমিকরা।  ছবি: বাংলানিউজএদিকে চামড়া নিয়ে বিভিন্ন ট্যানারিতে ঘুরে ক্লান্ত অনেক ব্যবসায়ীকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। প্রতিটি চামড়া অর্ধেকের চেয়েও বেশি লোকসান হওয়ার তারা যেন চোখে অন্ধকার দেখছেন।

এসবি শাহী ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান ভূঁইয়া সাজু বাংলানিউজকে বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, একটি চামড়া সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে। এরপর থেকে পচতে শুরু করে। এ পচা চামড়া কোনো ট্যানারি মালিকই কিনতে চাইবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পচা চামড়াগুলো যা কিনবে এবং ওয়েন্ট ব্লু করবে তাদের এ শ্রম এবং অর্থ দুটোই বিফলে যাবে। ওয়েন্ট ব্লু করা চামড়াগুলো পরবর্তীতে ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা কোনো বিদেশি ক্রেতাই কিনবে না। তাই চামড়ার ভালো দাম পেতে হলে অবশ্যই চামড়া কেনার সঙ্গে সঙ্গে তাতে লবণ লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।