ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

হারানো ফোনের খোঁজ দিচ্ছে প্রযুক্তি

এম মাহবুব আলম, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৩
হারানো ফোনের খোঁজ দিচ্ছে প্রযুক্তি

এখন নাকি দিন বদলেছে। তাও আবার আইসিটির (তথ্যপ্রযুক্তি) কল্যাণে।

নিত্যদিনের ব্যস্ত জীবনে এর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। অনেকে আবার বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেয়েও এ সত্য অনুধাবন করেন।

ঢাকা শহরে প্রতিদিনই অসচেতনতা কিংবা ফাঁদে পড়ে অনেকেই খোয়াচ্ছেন শখের আর প্রয়োজনীয় মোবাইল হ্যান্ডসেট। কিন্তু হারানো এ সেট খুঁজে পাওয়ার মতো ঘটনা নিশ্চয়ই খুব বেশি পাঠকদের জানা নেই।

প্রিয় পাঠক আপনিও ফিরে পেতে পারেন আপনার হারানো সেট। এ জন্য আপনাকে শুধু একটু সচেতন আর সাহসী হতে হবে। প্রতিটি হ্যান্ডসেটেই একটি ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন (আইএমইআই) নম্বর আছে।

আপনার হ্যান্ডসেটের ভেতরের ব্যাটারি তুললেই এ নম্বর আপনি পেয়ে যাবেন। তাই চটজলদি টুকে রাখুন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ নম্বর। কারণ হারানো ফোন খুঁজে পেতে এ নম্বরই আপনার অদৃশ্য গোয়েন্দা হয়ে কাজ করবে।

এরপর হারানো, চুরি কিংবা খোয়া যাওয়া ফোন সম্পর্কে ঘটনার নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। সে সময় পুলিশ আপনার হারানো ফোনের আইএমইআই নম্বর চাইবেন। আর তা দিতে পারলেই হ্যান্ডসেট ফিরে পাওয়ার অর্ধেক কাজ এগিয়ে যাবে। পুলিশ ওই আইএমইআই নম্বর ট্র্যাক করেই ফোনের অবস্থান শনাক্ত করে ফোন উদ্ধার করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য একটি বাস্তব ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এটা নিছক কোনো গল্প নয়। সত্যি। দারুণ সত্যি। এ থেকে পাঠক আপনিও সচেতন হয়ে উঠার কিছু উপায় অন্তত খুঁজে পাবেন। তবে এ ঘটনায় যাওয়ার আগে একটি পরামর্শ আছে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই পুরোনো এবং অনলাইনে বিকিকিনি সাইট থেকে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কিনে থাকি। তাই ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে অন্তত যাচাই করে নেবেন বিক্রেতারা এসব ফোনের প্রকৃত মালিক কি না। কিংবা ফোন ক্রয়ে প্রকৃত (অরিজিনাল) কাগজ আছে কি না। তা না হলে এ ধরনের ফোন কিনে পড়তে পারেন অযাচিত পুলিশি ঝামেলায়। আর কষ্টের অর্থ যাবে পানিতে।

এবার চলে আসি মূল ঘটনায়। ভুক্তাভোগী নিজেই লিখেছেন তার হ্যান্ডসেট ছিনতাই এবং কিভাবে ফোনটি ফিরে পেলেন তার সত্যিকারের ঘটনা। প্রিয় পাঠক একবার পড়েই দেখুন। হয়তো আপনার জন্যও কোনো সতর্ক বার্তা লুকিয়ে থাকতে পারে এখানে।

গল্প-কবিতা লেখার একদম অভ্যাস নেই আমার। মাঝেমধ্যে দু-এক লাইন যে লিখিনি তাও কিন্তু নয়। লিখেছি আবার কেটেছি। লেখাপড়া শেষ করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলায় গবেষণাধর্মী লেখালেখি পড়তে ভালো লাগে। কিছু কিছু নিজেও লিখেছি।

এ সময়ের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সবাই চায় তার একটা ভালো মোবাইল সেট থাকুক। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আগ্রহটা আরও প্রবল হলো যখন  অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ২৪.কম এ যোগ দিলাম।

বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন একজন আগাগোরা তথ্যপ্রযুক্তির মানুষ। তাঁর হাতে যখন দেখি সে সময়ের মোবাইল সেট জগতের ক্রেজ ব্ল্যাকবেরি পরে আইফোন এবং সবশেষ আইফোন ৫। তখন তা কেনার আগ্রহটা দমানো যায় না।

তিনি তার এ স্মার্টফোন দিয়েই নিজেকে আপডেট রাখেন। আমরা এত মানুষ একসঙ্গে কাজ করলেও দেশ-বিদেশের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আমাদের জানিয়ে দেন। এসব দেখতে দেখতে স্মার্টফোনের প্রতি আমার আগ্রহও অনেক বেড়ে যায়।

কিন্তু সাধ আর সাধ্যের মধ্যে খুব কম মানুষেরই মিল থাকে। আমারও তাই সাধ আছে সাধ্য নানা কারণেই একটু কম। যা হোক একটু ঝুঁকি নিয়েই একটা লেটেস্ট মডেলের স্মার্টফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঝুঁকি বলছি এ জন্য যে স্বল্প আয়ের মধ্যবিত্ত মানূষ আমরা, আমাদের অনেক পিছুটান।

এটা হয়তো আবার সেটা হয় না। এ সব কিছুর পরেও সনি ব্র্যান্ডের লেটেস্ট স্মার্টফোন ‘এক্সপেরিয়া জেড’ কিনে ফেললাম। মোটা অঙ্কের টাকাও গেল তাতে। তবে ভালোলাগার বিষয় হলো সব সময় ফেসবুক, ইমেইল ও নিজের কর্মস্থল বাংলানিউজ পোর্টাল যখন ইচ্ছা ব্যবহার করা যাবে এ স্মার্টফোনে।

সঙ্গে সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ বা শখের কোনো ছবি তুলে তা আবার অন্যের সঙ্গে সামাজিক সাইটে শেয়ার করা। অনেক টাকা দিয়ে কেনার পরও ভালোলাগায় টাকার শোক মুছে যাচ্ছিল। এতদামি একটা ফোন হাতে থাকায় অন্যরকম একটা ভালোলাগাও ছিল। কিন্তু হঠাৎ ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনায় বেশ দারুণ কষ্ট পেলাম। বলা যায় জানে বেঁচে গেলাম।

৩০ মে, ২০১৩। আমার এক সহকর্মী ও এক সময়ের ছাত্রীর বিয়ের দাওয়াতে গেলাম রাত নয়টার দিকে। বলে রাখা ভালো আমি আমার বিশ্ববিদ্যালযের কাজ সেরে আড়াইটা তিনটের দিকে বাংলানিউজের অফিস বারিধারাতে নিয়মিত আসি। আর রাত দশটার পর অফিসের গাড়িতেই মিরপুরের বাসায় ফিরি।

দাওয়াত খাবো বলে সেদিন অফিস থেকে একটু আগেই বেড়িয়ে যাই। পরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আর অফিসে না ফিরে আমার সহকর্মীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাজিবাড়ির ইয়াম্মি ইয়াম্মি রেস্তোরা থেকে রিক্সাযোগে শেওড়াবাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা। শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে প্রথমে বাসের জন্য অপেক্ষা।

এরপর সিএনজি চালিত অটোরিক্সা এবং বনিবনা না হওয়ায় আবার বাসের জন্য অপেক্ষা। হঠাৎ একটা ‘প্রাইভেট কার’ এসে মিরপুর-১০ বলে ডাকতেই আমি তাতে মহানন্দে লাফিয়ে উঠে পড়লাম। ভাবছিলাম ভালোই হলো দৈনিক বাসাতে ফিরতে প্রায় ১২টা বাজে, আজ একটু আগেই বাসায় ফেরা যাবে। কিন্তু বিধিবাম।

জীবনে প্রথমবার কোনো ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়লাম। গাড়িতে উঠে বসতেই দুপাশ থেকে দুজন আমাকে শক্ত করে ধরে ফেলল এবং ‘যা আছে দে’ বলেই আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে বেশ কিছু আঘাত করে মানসিকভাবে অনেক দূর্বল করে দেয়।

আমাকে আর কিছু দিতে হলো না। বরং তারাই আমার পকেট থেকে দুটি মোবাইল ফোনসেট, মানিব্যাগ, ঘড়ি, চশমা ও আরও কিছু দরকারি কাগজপত্র নিয়ে নিল। সঙ্গে থাকা ব্যাংক এশিয়ার এটিএম কার্ড এবং পিনকার্ডটাও ছিনিয়ে নেয়।

এরপর এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরির পর ছিনতাইকারীরা আমাকে খিলক্ষেতে নামিয়ে দেয়। প্রাইভেট কারটি থেকে নেমে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছিলাম। কারণ গাড়িতে আমার দুপাশে দুজন রিভলভার ও চাকু ধরে থাকলেও নামানোর সময় তারা আমার ওপর কোনো ধরনের আঘাত করেনি। এদিন নিজের বারোটা একটু আগেই বেজে গেলো।

পরদিন এ দুর্ঘটনার কথা কাছের সবাইকে জানালাম। আমার এক বন্ধু আমাকে পরামর্শ দিল থানায় একটা জিডি করে মোখলেছুর ভাইকে দিতে। মোখলেছুর ভাই মানে আমার ঐ বন্ধুর স্বামী, একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

কুমিল্লা জেলার সাবেক এসপি। বর্তমানে এডিশনাল ডিআইজি (সিআইডি)। আমি তার কথামতো ক্যান্টনমেন্ট থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করে মালিবাগ সিআইডি অফিসে গিয়ে মোখলেছুর ভাইকে দিলাম। তিনি আমার সামনেই একজন অফিসারকে ডেকে ফোন দুটি উদ্ধারের জন্য নির্দেন দেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ‘স্যার কোনো সমস্যা নেই, করে দেব স্যার’ বলে চলে গেলেন।

আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের ধারণা পুলিশ মানেই ঝামেলা। তাদের কাছ থেকে ভালো কোনো সেবা পাওয়া যায় না। আমারও সে রকমই ধারণা। যদিও এ ঘটনার আগে আমার আদালত-পুলিশ সম্পর্কে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। মানে কোনো আইনি জালে জড়ানো হয়নি।

কিন্তু হঠাৎ করেই মাস দেড়েক পরে মোখলেছুর ভাই ফোন দিয়ে জানালেন, একটা ফোন পাওয়া গেছে আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোনটা পাওয়া গেছে? উনি বললেন, স্যামসাংটা মানে কম দামিটা। খুশি না হলেও মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানালাম।

ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, আপনার কাছে রেখেদিন সময়ে করে এসে নিয়ে যাব। কদিন পরে গিয়ে নিয়েও এলাম। মোখলেছুর ভাইকে আবার একটু অনুরোধ করে বললাম, একটু মনিটর করবেন যাতে দামি সনি সেটটাও উদ্ধার করা যায়।

এরপর ৩১ জুলাই, ২০১৩। মোখলেছুর ভাই আবার ফোন দিয়ে বললেন, দ্বিতীয় ফোনটাও পাওয়া গেছে। তাই আর দেরি করলাম না সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে ফোনটা নিয়ে এলাম। এবার আমি অনেক খুশি হলাম।

মোখলেছুর ভাইয়ের কাছে হ্যান্ডসেট উদ্ধার করার কাহিনী জানতে চাইলে বললেন, ফোনটা নাকি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা নগদ ২৮ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। বেচারার অনেকগুলো টাকা এ ঈদের সামনে ক্ষতি হয়ে গেল। আমি হতভম্ব হলাম। হারানো ফোন ফিরে পেলাম! আমার বিস্ময়ের শেষ নেই। বাংলাদেশে এও কী সম্ভব!

এখন আমার পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে অনুধাবন হলো পুলিশ ইচ্ছা করলে এ দেশের অসহায় মানুষকে যে কোনো উপায়ে ভালো সেবা দিতে পারেন।

যদি পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যবহার না করতাম এবং এ বাহিনীকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে পারতাম, তাহলে মানুষ তাদের কাছ থেকে সঠিক সেবাই পেত বলে আমার বিশ্বাস।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।