ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

কাগজ কলমহীন ‘ফিরা বার্সেলোনা’

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৪
কাগজ কলমহীন ‘ফিরা বার্সেলোনা’

বার্সেলোনা, স্পেন থেকে ফিরে: কাগজ কলমহীন একটি দিনও চিন্তা করা যায় না। শুধু একটি কিংবা দুটি নয়, টানা চারদিন কাটলো কাগজ কলমহীন একটি জগতে।

এই জগতের নাম ‘ফিরা বার্সেলোনা’।

সেখানেই বসেছিল প্রযুক্তি এবং মোবাইল বিশ্বের সর্ববৃহৎ আয়োজন মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস ২০১৪। মোবাইল বিশ্বের রাজধানী স্পেনের বার্সেলোনার কনফারেন্স হলের নামই ‘ফিরা বার্সেলোনা’। প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমান এই বিশ্বে অনেক কিছুই গৌণ হয়ে যাচ্ছে। তারই অন্যতম উদাহরণ ফিরা বার্সেলোনা।

২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টায় ৭০ হাজার বর্গফুটের এই বিশাল কনফারেন্স সেন্টারে ঢুকতে হতো এই কংগ্রেসের আয়োজক গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) দেওয়া অত্যাধুনিক কার্ড দিয়ে। কনফারেন্সের প্রবেশ পথে স্বেচ্ছাসেবকরা হাতে মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। অংশগ্রহণকারী কেউ গেলে স্বেচ্ছাসেবক তার হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে কার্ডটির কোড নাম্বারটি স্ক্যান করে নেন। এই কোড নাম্বারে অংশগ্রহণকারীর নাম, ঠিকানা, প্রতিষ্ঠান, দেশসহ বিস্তারিত সব তথ্য রয়েছে।
 
ভূমধ্যসাগর তীরের বার্সেলোনা শহরের এই মেলার দেড় হাজার স্টলে অংশ নেয় বিশ্বের সব নামী দামি প্রযুক্তি কোম্পানি। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জুকারবার্গ, আইবিএম’র সিইও ভার্জিনিয়া রমেটি, জিএসএম মহাপরিচালক অ্যানি বোভারত, টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট জন ফ্রেডরিক বাকসাস, ফোর্ড মোটর কোম্পানির প্রেসিডেন্ট (ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা) স্টিফেন টি ওডেল, হোয়াটসঅ্যাপের সিইও জন কউমসহ প্রযুক্তি বিশ্বের রথী-মহারথীরা এতে অংশ নেন। সবাইকেই কনফারেন্স হলে ঢুকতে হয়েছে আয়োজকদের দেওয়া কার্ডটি মোবাইলে স্ক্যানে করে।  

আবার এসব নামী-দামি প্রতিষ্ঠানের স্টল পরিদর্শনে গেলেও একইভাবে জিএসএমএ-এর কার্ডটি ওই প্রতিষ্ঠান সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যান করে নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো ট্যাবলেট কিংবা স্ম্যার্ট ফোনের মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছে। কোনো কোনো কোম্পানি তাদের কর্মীদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্টল পরিদর্শন শেষে একজন দর্শনার্থীর প্রতিক্রিয়াটিও মোবাইলের মাধ্যমে টুকে নিচ্ছে।

কংগ্রেসে প্রতিদিন একাধিক সেশনে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের অন্তত ২০ থেকে ২৫ গুণের বেশি বড় ফিরা বার্সেলোনার কনফারেন্স সেন্টার। ফিরা বার্সেলোনায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মতো ২৫টি কনফান্সেন্স সেন্টার রয়েছে।  
 
এই কংগ্রেসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিনটি ছিল ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গের আগমন। মেলার প্রথম দিনেই জুকারবার্গের অনুষ্ঠানস্থলে আসন সংখ্যার কয়েকগুন বেশি দর্শনার্থীদের সমাগম হয়েছিল। তবে এতে কোনোই সমস্যা হয়নি। যারা সরাসরি ওই সেন্টারে ঢুকতে পারেননি তাদের জন্য এ ধরনের আরো ২০টি কনফারেন্স সেন্টারে বিশাল স্ক্রিনের মাধ্যমে তার অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয়েছে।

কংগ্রেসে অংশগ্রহণকারী ২২০টি দেশের কয়েক হাজার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন দেশের অপারেটর, মোবাইল হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, কনটেন্ট প্রোভাইডারসহ মোবাইল শিল্প সংশ্লিষ্টরাসহ এই মেলায় অংশ নিয়েছিলেন ৮০ হাজার মানুষ।   

এত বেশি সংখ্যক মানুষের এত সমাবেশ সত্ত্বেও কোথাও শৃঙ্খলা ও নিয়মের ব্যত্যয় হয়নি, পাওয়া যায়নি কারো কোনো অভিযোগ। তবে শুধু ফিরা বার্সেলোনাই নয়, পুরো বার্সেলোনা শহরটিকে মনে হয়েছে প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম সেরা উৎকর্ষতার উদাহরণ। বার্সেলোনা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, মেট্রোরেলসহ সবকিছুই প্রযুক্তি বান্ধব। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণেই।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।