ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ঈদের কেনাকাটা জমেছে অনলাইনেও

জেসমিন পাপড়ি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৪
ঈদের কেনাকাটা জমেছে অনলাইনেও ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: নতুন পোশাকের প্রতি ভীষণ দুর্বলতা চৈতির। বাহারি সব ডিজাইনের পোশাক পরাটাই তার শখ।

নিজের সেই শখ অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মাত্র কয়েকটি ডিজাইনের পোশাকের ছবি দিয়ে ফেসবুকেই খুলেছিলেন ‘ওমেনস ক্লথ শপ’ নামে একটি পেজ। পেজটিতে লাইক পড়তে থাকে, বাড়তে থাকে।

কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই পেজ থেকেই প্রদর্শিত সেসব পোশাকের অর্ডার আসতে থাকে। অনলাইনেই অর্ডার। অর্ডার অনুযায়ীই পণ্য পাঠানো হতে থাকে ক্রেতাদের ঠিকানায়। আসতে থাকে বিনিময় মূল্যও।

এভাবেই শুরু। মাত্র দু’বছরে সে শখের ব্যবসা এখন জমজমাট বলে জানান মিরপুরের বাসিন্দা চৈতি। এবারের ঈদ উপলক্ষে তিনি তার পেজে হাল ফ্যাশনের নানা ডিজাইনের পোশাক তুলে ধরেছেন। অর্ডারও পাচ্ছেন বেশ।

ঈদের কেনাকাটায় মার্কেট পাড়া যেমন সরগরম, তেমনি জমে উঠেছে অনলাইন কেনাকাটাও। রোজা রেখে, গরমে যারা মার্কেটমুখী হতে চান না, তারা বেছে নিচ্ছেন অনলাইনের এই বাজার।

মাত্র দু’এক বছর আগে দেশে অনলাইন কেনাকাটার ততটা প্রচলন ছিল না। কিন্তু অল্পদিনের ব্যবধানে এখন অনলাইন কেনাকাটায় ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। এক শ্রেণীর মানুষ অনলাইন কেনাকাটায়ই বিশ্বাস রাখতে শুরু করেছে।

এমনটি বাংলানিউজকে বলছিলেন চৈতির মত অনলাইন বিক্রির সঙ্গে জড়িত আরও ক’জন বিক্রেতা।

তারা জানান, নির্দিষ্ট কোনো দোকান নেই তাদের। দোকান বলতে অনলাইনে একটি পেজই ভরসা। সেখানে বিজ্ঞাপণ দেওয়া পণ্যগুলোকে দেখেই ক্রেতারা পছন্দ করছে। সে অনুযায়ী অর্ডারও দিচ্ছে। এবারের ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের অর্ডার বেড়েছে। সেসব অর্ডার অনুযায়ী ফ্রি হোম ডেলিভারি দিচ্ছেন তারা।

শুধু ঢাকা শহরে বসে নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এই অনলাইন দোকান চালাচ্ছেন।

টাঙ্গাইলের বাসিন্দা ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থী ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ পেজের কর্ণধার তোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি শিক্ষাজীবন থেকেই এই অনলাইন ব্যবসা শুরু করেছি। শুরুতেই ভাবিনি এত সাড়া পাবো। এখন প্রতিদিন প্রায় দেড়শ’ থেকে দুইশ’ শাড়ির অর্ডার পাচ্ছি। সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আমাদের পেজে কথা বলে।

‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ পেজে ঢুকে দেখা যায়, প্রায় ৫০ হাজারের মত লাইক রয়েছে পেজটিতে। পেজে রয়েছে বাহারি রঙের শাড়ি’র প্রদর্শনী।

তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের শাড়ি বলতেই আসে টাঙ্গাইল শাড়ির নাম। সেই শাড়িকে দেশ এবং দেশের বাইরে পরিচিত করতে এই পেজটি ওপেন করি। এখন আমাদের ক্রেতা দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিদেশ থেকেও প্রতিনিয়ত অর্ডার আসছে। আর এজন্য ২৪ ঘণ্টা আমাদের পরিচালনা টিম অনলাইনে থাকে।

ঈদ উপলক্ষে এ ধরনের অর্ডার বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

মিঠুন গাইন নামের এক ক্রেতা বলেন, প্রতিদিনই অনলাইনে নতুন নতুন পেজে বিভিন্ন পণের বিজ্ঞাপন দেখি। আগ্রহী হয়ে বেশ কিছুদিন আগে পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু পোশাকের অর্ডার দেই। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অর্ডারগুলো হাতে পেয়ে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। আরও অবাক হয়েছিলাম পণ্যের মান দেখে। কারণ, মার্কেটে গিয়েও আমরা মান সম্পন্ন জিনিস আনতে পারি না। কিন্তু লক্ষ্য করলাম অনলাইন বিক্রেতারা সঠিক মানের পণ্যই পাঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে ‘প্রত্যাশা ফ্যাশন’ পেজের কর্ণধার আরিফুর রহমান বলেন, প্রথমত, এদেশের মানুষ এখনও অনলাইন শপিংয়ে বিশ্বাস করতে চায় না। কারণ, আমাদের কাছে শপিং মানেই দোকানে গিয়ে দরদাম করে কেনাকাটা করা। তবে, সেসব চিন্তা কিছুটা হলেও বদলেছে। ঘরে বসে স্বল্প সময়ে মানুষ কেনাকাটার জন্য অনলাইন শপিং করছে।

‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ পেজের অন্যতম কর্ণধার আমজাদ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কর্পোরেট নারীরাই আমাদের প্রধান গ্রাহক। এখনও সবাই অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হতে পারিনি সত্য। কিন্তু সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর থেকেই অনলাইনে কেনাকাটার অর্ডার দেওয়া হবে। কারণ, প্রজন্ম এখন অনেক এগিয়ে।

তবে তিনি  স্বীকার করেন, টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রেও এখনও অনেক অসুবিধা পোহাতে হয়। টাকা পাঠানোর উপায়গুলো আরও স্বচ্ছ হলে অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই বিশ্বাস আরও বাড়তো বলে জানান তিনি।

শুধু পোশাক নয়, অনলাইন কেনাকাটায় গহনা বা বিভিন্ন গিফট আইটেমও পিছিয়ে নেই। পোশাক বা শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে গহনা, ব্যাগ এমনকি জুতাও বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।

তেমনই একটি পেজ ‘অরনামেন্টস হাউস’। পেজটির অ্যাডমিন কেএম আসাদ বলেন, দেড় বছর ধরে আমি এই অনলাইন গহনা বিক্রির সঙ্গে জড়িত। শুরুতে সাড়া না মিললেও এখন ব্যবসা চলছে পুরোদমে। সারাক্ষণই অনলাইনে ক্রেতারা প্রশ্ন করতে থাকেন। তুষ্ট হলে অর্ডার দেন। অনেকে আবার ডিজাইনও পাঠান। সে অনুযায়ী আমরা গহনা তৈরি করে দিচ্ছি।

ঈদ বা যেকোনো অনুষ্ঠানে এসব চাহিদা বাড়ে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।