ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

মোবাইল ফোনে ক্যান্সার-ঝুঁকি?

রানা রায়হান, নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৩ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১১
মোবাইল ফোনে ক্যান্সার-ঝুঁকি?

ঢাকা: ক্যান্সারের কোষ কী কারণে এতো শক্তিধর তা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। হাজার হাজার বছর ধরে বিকাশমান চিকিৎসা সাহিত্যে এসম্পর্কে কোনো উল্লেখই ছিল না।

কারণ আমরা তা দেখতে পেতাম না, শনাক্ত করতেও পারতাম না। অথচ এগুলো আমাদের শরীরের সুস্থ কোষের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করে বসে। এমনকি চিকিৎসকরা কিছু ক্যান্সারের প্রকৃতি জানতে পারলেও (এতে মৃত্যুহারও কমে যায়) এর আবশ্যকীয় রহস্যের সমাধান এখনো হয়নি।

ব্রেন টিউমারের কারণ কী তা এখনো জানা যায়নি। ফুসফুসসহ অন্য সব ধরনের ক্যান্সার জীবনযাপন ও পরিবেশগত নানা বিচ্যুতির কারণে হয় বলে জানা গেছে। তবে ব্রেন ক্যান্সারের কোনো ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কেন একজন ব্যক্তিকে ব্রেন টিউমার আঘাত হানে, আর আরেকজন বেঁচে যায় তার কোনো ব্যাখ্যাই নেই। আপনি অভাগা হলে এই ‘রোগ সম্রাট’ আপনাকে কোনো কারণ ছাড়াই আঘাত করবে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক ও চিকিৎসক সিদ্ধার্থ মুখার্জী ক্যান্সারকে ‘রোগ সম্রাট’ নামেই অভিহিত করেছেন।

চলমান উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা থেকে জানা যায়, কেন মোবাইল ফোনের বিকিরিত রশ্মি ও ব্রেন টিউমারের মধ্যকার সম্পর্ক মুষ্টিমেয় বিজ্ঞানী, মানবাধিকার কর্মী ও আক্রান্ত ব্যক্তি-- সবার কাছে আলোচনার বিষয়। বেশিরভাগ ক্যান্সারবিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা-সংগঠন এটাকে একইসঙ্গে ‘খোলা ও বদ্ধ আলোচনার বিষয়’ বলে  বিবেচনা করে। যদিও তাদের বিবেচনায় মোবাইল ফোন বাদ রাখা হয়েছে।

বিকিরণকে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার (কার্সিনোজেনিক) কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদি তা পরমাণু ও অণুকে আয়নিত করার মতো শক্তিধর হয়। পরমাণু ক্ষয় ও রঞ্জন রশ্মির বিকিরণ অত্যন্ত বেশি মাত্রায় অণু-পরমাণুকে আয়নিত করতে পারে। এগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী প্রভাবক বা কার্সিনোজেন হিসেবেও পরিচিত। এগুলো একটি অণুকে বিভিন্ন অংশে ভেঙে ফেলে। এতে কোষের জিনগত ক্ষতিসাধন  করে, ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। মোবাইল ফোন আয়নায়ন ঘটাতে পারে না, ফলে এতে ক্ষতির সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় যোগাযোগ কমিশন (এফসিসি), ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ও অসংখ্য সংস্থা একযোগে স্বীকার করেছে, মোবাইল ফোন নিরাপদ। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওয়েবসাইটেও বলা আছে, ‘মোবাইল ফোন ব্যবহারে এ পর্যন্ত কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ‘

গত মে মাসের শেষ দিকে, আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থার (আইএআরসি) ৩১ জন বিজ্ঞানী মোবাইল ফোনের  বিকীরণ ও ক্যান্সার বিষয়ে  সপ্তাহদীর্ঘ এক সমীক্ষা পরিচালনা করেন। আইএআরসি সিদ্ধান্ত টানে, মানবদেহে সম্ভাব্য ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম কারণ মোবাইল ফোনের বিকীরণ।

আইএআরসির চেয়ারম্যান ড. জোনাথন স্যামেট জানান, তারবিহীন ফোন ব্যবহার করলে গ্লিওমা ও ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়।

মোবাইল ফোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এতে দ্বিমত পোষণ করেছে। মোবাইল ফোন সংস্থা সিটিআইএর জনসম্পর্ক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জন ওয়ালস বলেন, ‘আইএআরসির এই গবেষণার অর্থ এই নয় যে, সব মোবাইল ফোনেই ক্যান্সার হয়। ’

 তিনি এফসিসি ও এফডিএর উল্লেখ করে মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ধারণা নাকচ করে দেন। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, বিশ্বজুড়ে ৩০০ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। গত দুই দশকে এরকম কোনো নজির দেখা যায়নি।

আইএআরসির গবেষণাটির ফল আগামী ১ জুলাই প্রকাশিত হবে। এর আগে ঠিক জানা যাচ্ছে না, ঠিক কোন যুক্তিতে বিজ্ঞানীরা এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন।

স্যামেট বলেন, ‘বিশ্বের বহু মানুষ এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। আর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ফলে আমরা ধরে নিতে পারি, আরও বেশি মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে ফোন ব্যবহার করছেন। ’
(বিদেশি সংবাদসূত্র অবলম্বনে)

বাংলাদেশ সময় ১৯১২ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।