ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা বিশ্বে ছড়াতে ‘হিরোজ অব ৭১’

হুসাইন আজাদ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৬
মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা বিশ্বে ছড়াতে ‘হিরোজ অব ৭১’

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের পরিচয়।

জাতি হিসেবে আমরা কতোটা বীর আর সাহসী সে পরিচয় দেয় এই মুক্তিযুদ্ধ। বিশ্ব দরবারে আমাদের পরিচয় ‍উপস্থাপন করতে হলে আগে মহান মুক্তিযুদ্ধকেই তুলে ধরতে হবে। তবেই বিশ্ব আমাদের চিনবে। জানবে আমাদের বীরত্ব ও গৌরবগাথা। এই মুক্তিযুদ্ধকে শিল্প-সাহিত্যে তুলে ধরার পাশাপাশি তুলে ধরতে হবে এই সময়ের জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোতেও। সেজন্য আমরা তরুণ প্রজন্মের পছন্দের মাধ্যম গেমকে বেছে নিয়েছি।

কথাগুলো বলছিলেন স্মার্টফোনে খেলার উপযোগী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গেম ‘হিরোজ অব ৭১’ এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পোর্টব্লিসের প্রতিষ্ঠাতা আবিদ জাহাঙ্গীর রাজিন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ‘হিরোজ অব ৭১’ এর নতুন সংস্করণ ‘হিরোজ অব ৭১: রিট্যালিয়েশন’ মুক্তির আগের দিন শুক্রবার (২৫ মার্চ) বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপ হচ্ছিল তার।

‘হিরোজ অব ৭১: রিট্যালিয়েশন’ নির্মাণের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে রয়েছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। আর সহযোগিতায় আছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।

গুগল অ্যানালিস্ট ডাটা অনুযায়ী, ‘হিরোজ অব ৭১’ অর্থাৎ গেমটির প্রথম পর্ব গত ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত গুগল প্লে-স্টোর থেকে তিন লাখ ৮০ হাজার বার ডাউনলোড হয়েছে, গেমটি খেলছেন ছয় লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ জন। আর গেমটির সেশন সংখ্যা ৪৯ লাখ এবং ইউজার রেটিং ৪ দশমিক ৭।

যে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ জন গেমটি খেলেছেন, তারমধ্যে ২৩ শতাংশই দেশের বাইরের অর্থাৎ বিদেশি। এই তথ্যের সূত্র টেনে আবিদ জাহাঙ্গীর রাজিন বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবগাথা-বীরত্বগাথা, আমাদের পরিচয়। এই পরিচয়, এই বীরত্বগাথা আমরা বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিতে চাই। বিদেশের মাটি থেকে ২৩ শতাংশ গেমার ‘হিরোজ অব ৭১’ খেলেছেন বলে আমাদের স্বপ্নের আকাশটা আরও বড় হচ্ছে।

স্মার্টফোনে সাধারণত প্রযুক্তি-প্রজন্মের কিশোর-কিশোরী-তরুণ-তরুণীরা গেম খেলতে ভালোবাসেন। ‘হিরোজ অব ৭১’ এর গেমারও বেশি এ প্রজন্মের। এই প্রসঙ্গ ধরে রাজিনের বক্তব্য, সময়টাই এখন প্রজন্মের। এই প্রজন্ম আবার কিছু নিজের আঙিনার বাইরে থাকলে তাতে বেশি আগ্রহ দেখায় না। যেহেতু গেমটা তাদের আগ্রহের জায়গা, সেহেতু ‘হিরোজ অব ৭১’ও তাদের টানবে। এই গেম খেলতে খেলতেই আমাদের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন। তারা জানবেন, দেশ স্বাধীন করে দিতে গিয়ে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের কেমন ভয়ানক বিপদের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

পোর্টব্লিস প্রথম দিকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান ছিল। পরবর্তীতে ফ্রিল্যান্স গেম নির্মাতা হিসেবে কাজ করেছে। আর এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘হিরোজ অব ৭১’ এর নির্মাতা হিসেবে।

চলার পথের এই গল্প তুলে ধরে রাজিন বলেন, আমার বন্ধু মাশা মুস্তাকিম ও আমি মিলে প্রথম পোর্টব্লিস প্রতিষ্ঠা করে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করি। পরে মাশা গেম নির্মাণের দিকে ঝুঁকে যায়। একটা সময় আমরা অনেক বিদেশি গেম ফ্রিল্যান্স হিসেবে বানিয়ে। পরে ভাবলাম, নিজেরাই নিজেদের জন্য গেম বানাই। এই চিন্তায় প্রথমে একটা গেম বানালাম ‘লেটার রাশ’ নামে। সেটি ততোটা সাড়া ফেলতে পারেনি হয়তো। এরপর আমরা ভাবলাম বড় কিছু একটা করতে হবে।

পোর্টব্লিসের এ প্রতিষ্ঠাতা বলছিলেন,  এজন্য প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারটা মাথায় এলো। ভাবলাম, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র, নাটক, গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস সবই আছে। কিন্তু গেম নেই। সুতরাং প্রজন্মের মধ্যে গেমে গেমে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র বর্ণনা করতে আমরা ‘হিরোজ অব ৭১’ বানাই, যেটা গত ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। এই গেমের চিত্রনাট্যকার ওমর রশিদ চৌধুরী। আইডিয়া শেয়ার করার পর আমার এ বন্ধু গল্প দেয় আমাদের।

রাজিন বলেন, এই গেম মুক্তি পাওয়ার পর ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। প্রথম দিনেই ৫০ হাজার বার ডাউনলোড হয়ে যায়। আমরা আভিভূত হয়ে পড়ি। এরমধ্যে ১৭ ডিসেম্বর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক স্বয়ং ফোন করে এই গেম নির্মাণের জন্য সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি আমাদের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দেন এবং উদ্বুদ্ধ করেন। আমাদের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন আরও বেড়ে যায়। তারপরের খবর তো সবার জানা।

‘হিরোজ অব ৭১’ নির্মাণের এ কুশলী জানান, গেমটি সবার জন্যই ফ্রি। সেজন্য এ প্রকল্পে আইসিটি ইনোভেশন ফান্ড থেকে অর্থায়নের ব্যবস্থা করে দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি আন্তরিকভাবে এই গেমের সিক্যুয়াল আনার ব্যাপারে যোগাযোগ রাখেন। এই গেম খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতেরও দারুণ পছন্দ হয়েছে বলে জেনেছেন নির্মাতারা।

রাজিন বলেন, আমরা এখন আরও বড় স্বপ্ন দেখছি। ‘হিরোজ অব ৭১’ এর রিভিউ ও জন-প্রতিক্রিয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা নতুন সংস্করণ ‘হিরোজ অব ৭১: রিট্যালিয়েশন’ নিয়ে এনেছি। এর রিভিউ ও জন-প্রতিক্রিয়া যদি আরও আশাব্যঞ্জক হয়, তবে আগামী ১৬ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে আমরা সাধ্যের মধ্যে আরও বড় কিছু করবো।

থ্রিডি গ্রাফিক্স এবং অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিবেশ তুলে ধরা এই গেম ‍আপাতত অ্যান্ড্রয়েডে পাওয়া যাচ্ছে। তবে শিগগিরই অন্যান্য ভার্সনেও পাওয়া যাবে।

‘হিরোজ অব ৭১: রিট্যালিয়েশন’ এর গল্প এ রকম, ‘শামসু বাহিনী বরিশালের শনির চরে একটি পাকিস্তানি ক্যাম্প দখল করে এবং শত্রুর আক্রমণের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। যুদ্ধের শেষে তারা জয়লাভ করলেও তাদের সহযোদ্ধা সজল শহীদ হন। শামসু বাহিনীর সদস্যরা প্রতিশোধের শপথ নেয়... এভাবে গেমের কাহিনী এগিয়ে চলে। ’

গল্প প্রসঙ্গে রাজিন বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের যতো চলচ্চিত্র-নাটক নির্মিত হয়েছে, যতো গল্প-উপন্যাস রচিত হয়েছে, তাতে বীরাঙ্গনাদের খুব কমই সামনে আনা হয়েছে। আমাদের এ গেমে বীরাঙ্গনাদের বীরত্বগাথাও তুলে ধরা হয়েছে দারুণভাবে।

পোর্টব্লিসের প্রতিষ্ঠাতা রাজিনের প্রত্যাশা, ‘হিরোজ অব ৭১: রিট্যালিয়েশন’ও তাদের প্রত্যাশার মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে। আর এই ছাড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ছড়িয়ে যাবে বিশ্বজুড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৬
এইচএ/

** অ্যাপ স্টো‌রে পাকব‌ধের মোবাইল গেম ‘হিরোজ অব ৭১:রিট্যালিয়েশন’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।