এ মুহূর্তে অনলাইন অথনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে অগ্রগামী দেশ আফ্রিকা।
তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারে আফ্রিকার আর্থসামাজিক এবং বিশ্ব বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি পুরোটাই বদলে গেছে।
অনলাইনের মাধ্যমে পুরো দেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তনে আফ্রিকা এখন ইউরোপের চেয়েও অনেক এগিয়ে।
গুগল সূত্র জানিয়েছে, অনলাইন বিজ্ঞাপনে ২০১০ সালের হিসাবে আফ্রিকা থেকে ৫২০ কোটি অ্যাড ক্লিক রেকর্ড করা হয়।
কিন্তু এসময়ে পুরো ইউরোপে ৩৭০ কোটি অ্যাড ক্লিক হয়। গুগলের এ হিসাবে আফ্রিকার ১৫০ কোটি অ্যাড ক্লিকে এগিয়ে আছে।
আফ্রিকার ডাটা সেন্টার অপারেটরের সিইও টিম জানান, গত চার বছরে আফ্রিকার ইন্টারনেট তথ্য সংরক্ষণের জায়গা ৩৪০ গিগাবিট থেকে এ মুহূর্তে ৩৪ হাজার গিগাবিটে পৌঁছে গেছে। শুরুতে মেগাবিট ইন্টারনেট সেবাব্যয়ে যেখানে ৪ হাজার ডলার গুণতে হতো। গত এক বছরে তা ২০০ থেকে কমে ১০০ ডলার নেমে এসেছে।
লন্ডন বিজনেস স্কুল এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের হিসাব মতে, আফ্রিকার শতকরা ১০ জন মোবাইল ফোনের গ্রাহক বাড়লে তা দেশটির জাতীয় রাজস্ব খাতে ০.৬ থেকে ১.২ ভাগ রাজস্ব বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে আফ্রিকায় ইন্টারনেট সেবা দিতে মাত্র একটি ফাইবার কেবল লাইন বরাদ্দ ছিল। কিন্তু গত দু বছরে এ সংখ্যা বাড়িয়ে আরও ছয়টি নতুন লাইন সংযুক্ত করা হয়।
আফ্রিকার টেলিকমভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনফরমা টেলিকম অ্যান্ড মিডিয়া সূত্র মতে, গত এক দশক আগে আফ্রিকায় মোবাইল ফোনের গ্রাহক ছিল প্রায় শূণ্যের কোঠায়। ঠিক দশ বছরে এ সংখ্যা ৫০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি এবং শিল্প বিপ্লবে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের সফল বাণিজ্যিক ব্যবহারে আফ্রিকা এখন বিশ্বের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নে অনুকরণযোগ্য দেশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
এখন আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলজুড়ে এম-শপের (মোবাইল শপ) যত্রতত্র উপস্থিতি। এ সেবাকেন্দ্রগুলো থেকে টেক্সট বার্তা, ইমেইল এবং সামাজিক মিডিয়ার সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়। আফ্রিকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তথ্যভিত্তিক আর্থসামাজিক প্রয়োজনের সবটুকুই মেটাতে সক্ষম এম-শপ।
অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুফল এখন পুরো আফ্রিকাজুড়েই দেখা যায়। দেশটির গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও এখন মানিব্যাগের পরিবর্তে ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবস্থাপনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আফ্রিকার অন্তর্ভূক্ত দেশ কেনিয়ার তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী এনদিমো জানান, এ বছরের শেষভাগে নাইরোবির অদূরে ৭০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত কোনজা টেকনোলজি সিটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরিকল্পনা আছে।
এনদিমো আরও বলেন, বিনামূল্যে আনলিমিটেড মোবাইল কল এবং ইমেইল সুবিধার কারণে আফ্রিকার দেশগুলোতে এ বাণিজ্যিক সুফল সাধারণ মানুষও ঘরে তুলতে পেরেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেয় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে আফ্রিকা। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারে আফ্রিকার শিল্প বিপ্লব সূচিত হয়েছে।
আমদানিকেন্দ্রিক আফ্রিকা এখন রপ্তানিমুখর হয়ে উঠেছে। কৃষক এবং শ্রমজীবীদের জীবনমান দ্রুতই বদলে গেছে। এর ফলে বাড়ছে শিক্ষার মানও। আর ডিজিটাল সংস্কৃতিক চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে দেশটির তরুণ সমাজ।
এ মুহূর্তে কেনিয়ার ৪ কোটি জনগোষ্ঠীর শতকরা ৬০ থেকে ৮০ ভাগ জনগন ইমেইল এবং মোবাইল ফোনে ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন করেন। এছাড়াও সূত্র মতে, এ মুহূর্তে আফ্রিকার অর্ধেক এবং কেনিয়ার শতকরা ৯২ ভাগ জনগোষ্ঠী মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে।
আফ্রিকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অর্থসামাজিক এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা সম্প্রসারণে এম-পেসা (মোবাইলনির্ভর অনলাইন ব্যাংকিং) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উল্লেখ্য, কেনিয়াভিত্তিক টেলিকম অপারেটর সাফারিকম দেশটির গ্রামীণ মোবাইল ফোন ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার অপার দুয়ার অবমুক্ত করে।
এ মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বদলে যেতে থাকে আফ্রিকার পুরো আর্থসামাজিক দৃশ্যপট। অনলাইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে আফ্রিকা দ্রুতই তার অবস্থান জানিয়ে দেয়। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজার অবস্থান তৈরি করে।
আফ্রিকার অনলাইন ব্যবসা সামাল দিতে ডেটা সেন্টার অপারেটর টেরাকো গত দু বছরে তিনটি নতুন ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে। সূত্র মতে, খুব দ্রুত সময়ে অনলাইন ব্যবসাকে কাজে লাগিয়ে শীর্ষ উঠে আসার তালিকায় এখন নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার অবস্থান শীর্ষে।
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে আফ্রিকা এবং বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সরকারি এবং বেসরকারি কাজে ডিজিটাল তথ্য অবাধ করে দেয় কেনিয়া সরকার। এ উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
সব মিলিয় অনেকটা নীরব বিপ্লবেই আফ্রিকা নিজেকে আজ অনলাইন ব্যবসায় শীর্ষতম দেশের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সামনের সময়ে আরও সুফল আফ্রিকার জন্য অপেক্ষা করছে। সার্চগুরু গুগলও আফ্রিকার এ উন্নতিকে স্বমহিমায় স্বীকার করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভুক্ত দেশগুলোরও টনক নড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ সময় ১৮৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১১