বিশ্বে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝড়ে যাচ্ছে মূল্যবান প্রাণ। প্রতিদিনের বাংলাদেশেও সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিত্যনৈমত্তিক দৃশ্য।
এ অবস্থা থেকে কিছুটা রেহাই পেতে ‘টকিং’ সিস্টেম প্রবর্তনের কথা ভাবছেন বিদেশি পরামর্শকেরা।
এ নিয়ে গবেষণা আর কাজ দুটোই সম্পন্ন হয়েছে। এখন চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছেন এ পদ্ধতির নির্মাতার।
ইতালির বোলগনা ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী এমন এক সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেছেন যার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। এমনকি গাড়িকে সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে সতর্ক করা যাবে।
এ সফটওয়্যারের নাম ‘কমিউনিকেট’। অর্থাৎ রাস্তায় চলার সময় এ পদ্ধতির নিয়ন্ত্রণে একটি চলন্ত গাড়ি অন্য গাড়িকে বিপদ সংকেতসহ প্রয়োজনীয় বার্তা এবং রোডম্যাপ জানিয়ে দেবে নিজে থেকেই। গবেষণা সূত্র মতে, এ কমিউনিকেট সফটওয়্যারের সফল প্রয়োগে বিশ্বের ৪০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিখ্যাত প্রকাশনা ‘কমপিউটার নেটওয়ার্কস’ প্রতিবেদনে প্রকাশ, এ কমিউনিকেট সফটওয়্যার মূলত ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করবে। আর এর মাধ্যমে ন্যূনতম এক কিলোমিটার আগে থেকেই গাড়ির চালককে সতর্কবাতা নির্দেশ করা হবে।
অর্থাৎ এ সিস্টেমের সিগন্যাল নির্দেশনায় গাড়ির মুভিং রেডিয়েশন যদি কোনো কারণে অতিরিক্ত কম্পন প্রদর্শন করে তাহলে বুঝতে হবে কোনো গাড়ির অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওই পথে এগোচ্ছে। তখন চালককে তাৎক্ষণিকভাবেই সতর্কভাবে গাড়ি চালাতে হবে।
এ কমিউনিকেট সিস্টেম কমপিউটার সিম্যুলেশন পদ্ধতিকে অনুসরণ করে আগাম সতর্কবার্তা প্রেরণ করবে। উল্লেখ্য, আগামী আগস্ট মাসে বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা টয়োটা এবং এ সফটওয়্যার উদ্ভাবক যৌথ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে এ পদ্ধতির কার্যকারিতা পরীক্ষা করবেন।
উল্লেখ্য, এ কমিউনিকেট টেলিমেটিস পদ্ধতি অনুসরণে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ গাড়ি চালককে টেলিযোগাযোগ এবং দূরবার্তা (ইনফরমেটিস) এ দুটি মাধ্যমের দ্রুত সমন্বয়ে সম্ভাব্য দূর্ঘটনায় এড়িয়ে চলতে তাৎক্ষণিক দিকনিদের্শনা দেবে। ফলে এ পদ্ধতিভুক্ত উভয় দিক থেকে আগত গাড়ি একে অন্যের অনিয়ন্ত্রিত অবস্থান আগে থেকেই জানিয়ে দেবে।
এ কমিউনিকেট পদ্ধতি ব্যবহারে ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই সিস্টেম অপরিহার্য। স্মার্টফোন থেকে এ সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে। এ সিস্টেম ব্যবহারে গাড়িতে একটি ওয়াইফাইযুক্ত সেন্সর কার ডিভাইসও সংযুক্ত করতে হবে।
এ সিস্টেম উদ্ভাবক সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকগুলো কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে চালকের অসর্তকতা, রাস্তার অপরিকল্পিত বিন্যাস, ট্রাফিক আইন অমান্য, মহাসড়কে অবৈধভাবে গাড়ি পাকিং এবং গাড়ির দূর্বল ফিটনেসকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন।
এত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি দেশের পরিবহন খাতে যথেষ্ট লোকবল এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চালকের জন্য কমিউনিকেটরের মতো দিকনিদের্শনামূলক সফটওয়্যার বেশ কার্যকর হবে বলে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ সময়ে ১৬৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১১