ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

দেশিয় সফটওয়্যার নিয়েই উত্তম কুমার পালের স্বপ্ন-পরিকল্পনা ‌

আইসিটি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৬
দেশিয় সফটওয়্যার নিয়েই উত্তম কুমার পালের স্বপ্ন-পরিকল্পনা  ‌ উত্তম কুমার পাল

উত্তম কুমার পাল, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের এক গৌরবজ্জল্য নাম। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নানা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন।

দেশের জনপ্রিয় অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ‘ত্রয়ী’র উদ্ভাবক তিনি।

আসন্ন বেসিসের ২০১৬-১৯ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন উত্তম কুমার পাল। বেসিসে থাকা অবস্থায় কমিটির বিভিন্ন কার্যক্রম, এবারের প্রতিশ্রুতি এবং ব্যক্তিগত প্রকল্পসহ তথ্যপ্রযুক্তি জুড়ে তার স্বপ্ন, পরিকল্পনার কথাগুলো প্রকাশ করেছেন।

যা পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো।

উত্তম কুমার পালের স্বপ্ন-পরিকল্পনা পুরোটাই দেশের তথ্যপ্রযুক্তির বাজারকে ঘিরে, দেশিয় সফটওয়ারই যেন তার ধ্যান-জ্ঞান। বেসিসে দুই মেয়াদে তিনি এ খাতের বিকাশে গুরুত্ব দিয়েছেন। এবারের নির্বাচনকে ঘিরেও তার প্রতিশ্রুতি দেশীয় সফটওয়ারের পক্ষে কাজ করার।

প্রায় এক দশক আগে একজন সাধারন উদ্যোক্তা হিসেবে উত্তম কুমার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রবেশ করেন। বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় অ্যাকাউন্টিং সফটওয়ার ত্রয়ী দিয়ে যাত্রা শুরু করা আজকের উত্তম কুমার চতুর্থ প্রজন্মের এনএফসিভিত্তিক রেলওয়ে ই-টিকেটিংয়ের সফটওয়্যার বানাচ্ছেন।

দেশের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের সমাধান তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই দেয়ার প্রত্যাশা তার।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় আসার আগে ১১ বছর চাকরি করেছেন উত্তম কুমার পাল। বিভিন্ন খাতের সেই অভিজ্ঞতা ব্যবসার গোড়াপত্তনেও সহায়তা করছে বলে জানান উত্তম কুমার।

চাকরি জীবন ছেড়ে ২০০১ সালে ব্যবসা শুরুর প্রয়াসে গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) মনোনিবেশ করেন। ২০০৫ সালে স্বল্প মূলধন নিয়েই খুলে বসেন নিজের কম্পানি ‘বেস্ট বিজনেস বন্ড লিমিটেড (থ্রিবিএল)। বিশ্বমানের অ্যাকাউন্টিং ইনভেন্টরি প্যাকেজ সফটওয়্যার ত্রয়ী দিয়ে যার শুরু।

ব্যবসা শুরুর সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে বেসিসের এই সাধারন সম্পাদক বলেন, ‘আসলে তখনই আমি গবেষণার মাধ্যমে জেনেছিলাম, দেশের বিশাল বাজারের পুরোটাই বিদেশি কম্পানিগুলোর দখলে। তখনই দেশের বাজারে মনোনিবেশের প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।

শুরুতে প্রতিকূল নানা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। দেশে ভালোমানের সফটওয়্যার আছে এবং বিক্রেয়োত্তর সেবাও হাতের নাগালে বিষয়টি বাজারে নিয়ে যেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

বর্তমান কাজ সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, সরকার ও জাইকার অর্থায়নে পুরো মেট্রো রেলের অটোমেশনের কাজের দায়িত্ব পেয়েছে দুটি জাপানি প্রতিষ্ঠান। আর ই-টিকিটিংয়ের জন্য সফটওয়্যার তৈরির কাজ করছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান।

যার মধ্যে একটি আমাদের জয়েন্ট ভেঞ্চার কম্পানি এবং আরেকটি ডাটা সফট। প্রায় ১৪ মাস আগে আমরা এই কাজটি শুরু করি, জানুয়ারিতে শেষ করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে কিছু সংশোধনী আসায় আমরা চলতি জুনের মধ্যে এই কাজটি শেষ করে হস্তান্তর করতে যাচ্ছি।

এরইমধ্যে মেট্রো রেলের যাত্রীদের টিকিট কাটার জন্য ৠাপিড পাস কার্ড তৈরির কাজ শুরু করেছে জাপানি ইলেকট্রনিক জায়ান্ট সনি করপোরেশন। আর জুনের মধ্যে ই-টিকিটিং সফটওয়্যারের কাজ শেষ হবে।

ই-টিকেটিং সম্পর্কে তিনি বলেন, মেশিন এমবেডেড এনএফসি (নেয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে এতে। জাপান, হংকং এবং সিঙ্গাপুর এটি ব্যবহার করে। মেট্রো রেলের টিকেটের পেমেন্টের জন্য জাপানের সনি করপোরেশনের সেলিকা কার্ড বাংলাদেশে আসবে। এই কার্ডের নামও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত করে দিয়েছেন। ৠাপিড পাস নামের এই কার্ডে আটটি পকেট থাকবে, যা ডেবিট কার্ডের মতো মেট্রো রেলের টিকিট ক্রয় থেকে কেনাকাটসহ নানা কাজে ব্যবহার করা যাবে।

এই কাজের লেনদেনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক বিভিন্ন স্থানে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে কার্ডে টাকা রিচার্জ করে দেবে। লেনদেন নিস্পত্তির জন্য এই সফটওয়্যারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় হবে এছাড়া ভবিষ্যতে এনএফসি সমৃদ্ধ মোবাইলেও ব্যবহার করা যেতে পারে এটি।

থ্রিবিএলের ত্রয়ী প্রোডাক্ট সম্পর্কে বলেন, ব্যবসায়ের ধরণ যাই হোক না কেন ব্যবসায়ী তার ক্রয়-বিক্রয়, লাভ-লোকসান, রিসিভ-পেমেন্ট, ট্রায়াল ব্যালেন্স, ব্যালেন্স-সীট সব রিপোর্ট তৈরি করতে পারবেন। ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনশীলতা যাতে বৃদ্ধি পায় সে লক্ষ্যেই তৈরি হয়েছে এটি।

এরইমধ্যে ওষুধ কেনা-বেচার বা ফার্মেসির ব্যবসা পরিচালনার উপযোগী করে ‘ত্রয়ী ফর্মা’র একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে। ২১০টি ওষুধ কম্পানির ১৪ হাজার ওষুধের নাম, ইউনিট (মাল্টিপল ইউনিট-বক্স, কার্টুন ও পিস), ফরমুলেশন, ক্রয়মূল্য, বিক্রয়মূল্য ইত্যাদি সন্নিবেশিত রয়েছে এ সফটওয়্যারে। ব্যবহারের স্বাচ্ছন্দ্যতার জন্য বিক্রয় কর্মীদের আইডি বা পাসওয়ার্ড তৈরি করা, তৈরি করা বিল মুছে ফেলতে না পারা, প্রয়োজনে বিক্রীত ওষুধ ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করা, দিন শেষে সরবরাহকৃত মজুদ অনুযায়ী প্রাপ্ত টাকার হিসাব করা, কম্পানিগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি বিদ্যমান মজুদের অবস্থা দেখে নতুন করে অর্ডার দেওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

যেহেতু ওষুধের ব্যবসা অন্যান্য ব্যবসা থেকে আলাদা। ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন রোগ চিকিৎসা ও প্রতিরোধের জন্য দেশী-বিদেশী ওষুধ কম্পানিগুলোর রয়েছে অনেক ধরনের ওষুধ। হাজার হাজার ওষুধের ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদের সঠিক হিসাব রাখা কষ্টসাধ্য। মজুদ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বা স্বল্পমেয়াদের ওষুধ খুঁজে বের করে সরিয়ে ফেলা আরো কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে সফটওয়্যারের মাধ্যমেই এসব হিসাব রাখা অনেক সহজ। এজন্য আমরা নিয়ে এসেছে ত্রয়ী ফার্মা।

বর্তমানে দেশে তৈরি সফটওয়্যার প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সেবা (আইটিইএস) খাতের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেড় হাজারের বেশি। এর মধ্যে বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠান ১০৭৫। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই দেশীয় সফটওয়্যারের বাজার ধরতে ব্যবহারকারীদের উপযোগী করে নতুন নতুন সফটওয়্যার নিয়ে আসছে। এদেশে সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি বাজার রয়েছে যা বেশিরভাগই এখন বিদেশী কম্পানির দখলে।

দেশিয় কম্পানিগুলোর যথেষ্ট সক্ষমতা সত্বেও টেন্ডার ও ক্রয় নীতিমালার নানা বেড়াজালে বড় বড় সফটওয়ার সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে আমরা বেসিসের পক্ষ থেকে সরকারের সাথে বারবার কথা বলেছি, লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি সমাধানের। আশা করছি, বেসিসের নতুন কমিটি এ বিষয়টি বাস্তবায়নের পর্যায়ে নিয়ে যাবেন।

এছাড়া স্থানীয় বাজারে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার বাজার সম্প্রসারণে ব্যক্তি খাতকে ডিজিটালাইজেশন ত্বরান্বিত করা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারের জন্য নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও বেসিসের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ রয়েছে।

‌আমরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সচেতনতা তৈরিতে নানা সম্মেলনের আয়োজন করেছি। সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ ইন্টারনেট উইক, কানেক্টিং স্টার্টআপসহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আইসিটি খাতের জন্য জন্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স রহিতকরণ, ই-কমার্স থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল পলিসি, সাইবার সিকিউরিটি পলিসি, আইসিটি কম্পানির আইপিওতে অংশগ্রহণের জন্য স্মল ক্যাপ পলিসিসহ বেশ কিছু পলিসি তৈরিতে বেসিস প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে।

বেসিসে নতুন নির্বাচিত নেতারা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির বাজার সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন উত্তম কুমার পাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, জুন ১৯,২০১৬
এসজেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।