ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হওয়ার উপায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হওয়ার উপায় ছবি: প্রতীকী

সময় নিয়ে সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনা করা
আপনার ই-কমার্স ব্যবসাটি যেহেতু ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হবে, তাই কখনই ওয়েবসাইট তৈরির ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না। কম খরচে কম সময়ের মধ্যে ওয়েবসাইট তৈরি করে পরে দেখবেন সেই ওয়েবসাইটে হয়তো আপনার ব্যবসা করার উপযোগী ফিচার তৈরি করার সুযোগ হচ্ছে না, বা হয়তো দেখবেন আপনার ওয়েবসাইটটি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে, কিংবা ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ফিচার ঠিকমতো কাজ করছে না।

তখন ওয়েবসাইটটি ফেলে দিয়ে নতুনভাবে তৈরি করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই, সময় নিন, প্লান করুন, শুধু আজকে না, ভবিষ্যতে আপনার ওয়েবসাইটে কী কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা আনতে চাইছেন সেগুলোর প্লান করুন এবং এখনই তৈরি না করলেও ভবিষ্যতে সেগুলো করবার সুযোগ রাখুন।

ওয়েবসাইট তৈরির টেকনোলজি নির্বাচন
মাঝারি বা বড় ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির জন্য পিএইচপি টেকনোলজি ব্যবহার করা ভালো, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই র-পিএইচপি-তে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন না কারণ, তাতে পরবর্তীতে ওয়েবসাইটে পরিবর্তন আনা ও মেইন্টেইন করা মুশকিল হয়ে পড়ে এবং সিকিউরিটি রিস্কও বেশি থাকে।  
আপনার ব্যবসার মডেল যদি গতানুগতিক ই-কমার্সের মতো হয় তাহলে সিএমএস যেমন মাজেন্টো বা ওপেনকার্ট, আর আপনার ব্যবসার ধরন যদি গতানুগতিক ই-কমার্সের মতো না হয়ে একটু ভিন্ন ধাচের হয় তাহলে কাস্টোমভাবে তৈরির জন্য ভালো কোনো ফ্রেমওয়ার্ক যেমন লারাভেল বা কোডইগনাইটার ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব টেকনোলজিতে ওয়েবসাইট তৈরি করলে আপনার ওয়েবসাইট আপগ্রেড ও ম্যানেজ করা অনেক সহজ হয়। তাছাড়া অন্যান্য টেকনোলজির তুলনায় এসব টেকনোলজিতে কাজ করে এমন মানুষ পাওয়াও সহজ হয়। এসব সিএমএস ও ফ্রেমওয়ার্কগুলো নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত।

ওয়েবসাইটের ডিজাইন প্লান করা
ওয়েবসাইট ডিজাইন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে ডিজাইনটি যেনো খুব সুন্দর হয়, কিন্তু অতিরিক্ত রঙের ব্যবহার বা জটিলতা না থাকে। পাশাপাশি, অনলাইনে কেনাকাটার পুরো প্রসেসটি যেনো খুব সহজ হয়। যতো কম ক্লিকে আপনি কাস্টোমারকে আপনার পণ্যগুলো দেখা থেকে শুরু করে অর্ডার সাবমিট করার পর পেমেন্ট করা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন ততো আপনার ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। আপনার ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রেশন বা অর্ডার ফর্মে যতো কম তথ্য টাইপ করতে হবে কাস্টোমার ততোই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
আপনার ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে হাই কোয়ালিটির ইমেজ। পণ্যের ছবি, ব্যানার এবং ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা ছবি যতো সুন্দর, স্পষ্ট ও আকর্ষণীয় হবে কাস্টোমার ততো বেশি আকৃষ্ট হবে।

ওয়েবসাইটের ফিচার ও ফ্যাসিলিটি নির্ধারণ করা
সব ই-কমার্স ওয়েবসাইটেই প্রোডাক্ট থাকে, কেনাকাটা হয়, অনলাইনে পে করা যায়, ডেলিভারিও পাওয়া যায়। তাই শুধু এগুলো থাকলে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটকে কাস্টোমারের কাছে বিশেষভাবে তুলে ধরতে পারবেন না। আপনার চাই ইউনিক কিছু ফিচার ও ফ্যাসিলিটি:
•    কাস্টোমার যেনো সুন্দরভাবে অনলাইনে শপিং করতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনে ওয়েবসাইটে শপিং প্রসেসের ভিডিও রাখুন, যেনো কাস্টোমার প্রথমবার আসার পর কীভাবে শপিং করতে হয় তা সুন্দরভাবে বুঝে যেতে পারেন।
•    কাস্টোমারকে ডিস্কাউন্ট কুপন অফার করুন।
•    অর্ডার করার পর কাস্টোমারকে মেইল এবং এসএমএস-এর মাধ্যমে পেমেন্ট বা অর্ডারের কনফার্মেশন দিয়ে তাকে আপনার উপর আস্থা রাখতে সাহায্য করুন।
•    কাস্টোমারকে তার কেনাকাটার উপর পয়েন্ট দিন, যেনো পরে তিনি এই পয়েন্টের বদলে আপনার কাছ থেকে পণ্য বা উপহার পেতে পারেন।
•    রেজিস্ট্রেশনের সময় কাস্টোমারের জন্মতারিখ নিয়ে নিন এবং পরে তার জন্মদিনে গিফট পাঠান। দেখবেন, আপনার ষ্টোরের প্রতি তার বিশেষ ধরনের আগ্রহ জন্মাবে।
•    অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর ব্যবস্থা চালু করুন। আপনার প্রোডাক্ট অনলাইনে কিনতে কেউ যদি অন্যদেরকে রেফার করে, তাহলে যিনি রেফার করলেন তাকে ক্যাশব্যাক অফার করুন।

কাস্টোমার সাপোর্টের ভালো ব্যবস্থা করা
কাস্টোমারকে শপিং-এর জন্য সব ধরনের সাহায্য করা আপনার দায়িত্ব। আপনি কাস্টোমারকে যতো বেশি সাপোর্ট দেবেন, কাস্টোমার ততো বেশি আপনার স্টোর থেকে কিনতে পছন্দ করবেন।
•    অর্ডার করার সময় কাস্টোমার যেনো আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান, আর পণ্য বা ডেলিভারি সম্পর্কে জানতে পারেন- সেজন্য ওয়েবসাইটেই চ্যাটিংয়ের ব্যবস্থা রাখুন
•    অর্ডার সাবমিট হওয়ার পর কাস্টোমারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন এবং তার অর্ডার প্রসেসটি সুন্দরভাবে শেষ হতে সাহায্য করুন
•    কাস্টোমার যদি পেমেন্টের পর অর্ডার বাতিল করে, তাহলে যতো দ্রুত সম্ভব তার পেমেন্ট রিটার্নের ব্যবস্থা করুন। আপনি হয়তো ভাবছেন, কাস্টোমার তো কিনছেই না, দেরিতে পেমেন্ট রিটার্ন হলে কী-ই-বা ক্ষতি। কিন্তু কাস্টোমার যদি দ্রুত রিটার্ন পান, দেখবেন পরবর্তীতে তিন আবার অর্ডার করার সাহস এবং আগ্রহ পাবেন।

আপনার ওয়েবসাইটের মার্কেটিং প্লান করুন
প্রোমোশন ও মার্কেটিং ছাড়া আপনার ই-কমার্স ব্যবসাকে বাড়ানো অসম্ভব। তাই আপনাকে সঠিক মার্কেটিং প্লান করতে হবে:
•    যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তারাই অনলাইনে কেনাকাটা করবেন- এটাই স্বাভাবিক। তাই আপনার অনলাইন স্টোরের মার্কেটিং আপনি অনলাইনেই সবচেয়ে বেশি করুন।
•    না জেনে-বুঝে ফেসবুকে শুধু টাকা দিয়ে অ্যাড দিলেই চলবে না। এলাকাভিত্তিক এবং পছন্দভিত্তিক ফেসবুক প্রোমোশন করুন।
•    প্রিন্ট মিডিয়ার চাইতে বরং ডিজিটাল মিডিয়া এবং পত্রিকার ডিজিটাল ভার্সনে অ্যাড দিন।
•    আপনার প্রোডাক্ট যে জনগোষ্ঠীর জন্য, তাদের উদ্দেশ্যে নানান অনলাইন বা ফিজিক্যাল কাম্পেইন করুন। উদাহারণস্বরূপ, আপনার পণ্য যদি ইয়ং জেনারেশনের জন্য হয় তাহলে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে স্টল বা ক্যাম্প করুন। আপনার ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানান, নানারকম অফার দিন।
•    বিভিন্ন ফোরাম, গ্রুপ, ব্লগে আপনার ওয়েবসাইট সম্পর্কে লিখুন।
•    এসইও করার মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের সামনের সারিতে নিয়ে আসুন।

বিজনেস অ্যানালাইসিস করুন
আপনি যখন একটি বিজনেস চালাচ্ছেন, অবশ্যই আপনার বিজনেস অ্যানালাইসিস করার ডিজিটাল সিস্টেম থাকতে হবে। বিজনেস অ্যানালাইসিস ছাড়া আপনি কখনই সঠিক বিজনেস প্লান করতে পারবেন না:
•    এলাকাভিত্তিক, সময় বা ইভেন্টভিত্তিক, বয়সভিত্তিক বা লিঙ্গভিত্তিক অর্ডার ডাটা এনালাইসিস করুন। তাহলে কারা কিনছেন, কেন কিনছেন, কোথা থেকে কিনছেন, কেনাকাটা কম-বেশি হওয়া, এ সবকিছুই আপনি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। এর উপর ভিত্তি করে আপনি প্রোডাক্ট এবং অফার প্ল্যান তৈরি করতে পারবেন।
•    ওয়েবসাইটে ভিজিটরদের কাছ থেকে মন্তব্য নেওয়ার ব্যবস্থা রাখুন (ফর্ম এবং পুলের মাধ্যমে) যেনো ক্রেতার পছন্দ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী প্ল্যান করতে পারেন।
•    যারা কার্টে প্রোডাক্ট অ্যাড করছে, কিন্তু কিনছে না, তাদের ট্র্যাক করার ব্যবস্থা করুন এবং তারা কেন কিনছেন না সেটি জানার জন্য প্রয়োজনে তাদের কল করুন।
•    আগে কেনাকাটা করতেন কিন্তু এখন কেনাকাটা করা ছেড়ে দিয়েছেন, এমন ক্লায়েন্টদের ট্র্যাক করুন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, তাদের নানান অফার দিন।
•    ওয়েবসাইটের ভিজিটর অ্যানালাইসিস করার বাবস্থা রাখুন, কোন সোর্স থেকে ভিজিটর কম আসছে বা বেশি আসছে সেটি বের করুন এবং সে অনুযায়ী মার্কেটিং প্ল্যান করুন।

সর্বোপরি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলো দেখুন এবং সেগুলোর বিজনেস মডেল অ্যানালাইসিস করুন। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী সাইটগুলোর সঙ্গে আপনার ওয়েবসাইটের তুলনামূলক চার্ট তৈরি করুন এবং বের করুন কী কী বিশেষ সুবিধা তারা দিচ্ছে কিন্তু আপনি দিতে পারছেন না।  

আশা করি সঠিক প্ল্যান করলে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিলে আপনার ই-কমার্স ব্যবসা অবশ্যই সফলতা লাভ করবে।  

নির্ঝর আনজুম
টেকনিক্যাল লিড (সফটওয়্যার অ্যানালিস্ট), ওয়েব ডেভেলপমেন্ট টিম, এসএসএল ওয়্যারলেস
ফ্যাকাল্টি প্রধান ও কনসালটেন্ট, পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।