ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ভারত দর্শনেই স্টিভের অ্যাপল সৃষ্টি!

সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১১
ভারত দর্শনেই স্টিভের অ্যাপল সৃষ্টি!

মহাবিশ্বের নিয়মে প্রতিদিনই প্রকৃতিতে সূর্যোদয় হবে। আবার সূর্য অস্তও যাবে।

শুধু থাকবে না এ পৃথিবীর ‘সূর্যশক্তি’ স্টিভ জবস। সূর্যের মতো স্টিভও পুরো বিশ্বকে তাঁর উদ্ভাবনী শক্তিতে নতুন প্রাণসঞ্চার আর কর্মস্পৃহা যুগিয়েছেন আমৃত্যু।

স্টিভ যেন কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না। সদাই হাস্যোজ্জ্বল এ ব্যক্তিটির মধ্যে কোথায় যেন লুকিয়ে ছিল এক আধ্যাত্মিক শক্তি। চোখেমুখে এর দীপ্তি দেখতে পেয়েছিলেন অনেকেই। তবে গল্প মনে হলেও এ দীপ্তি তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন ভারতবর্ষে।

আজ থেকে ৩৫ বছর আগে। স্টিভ এসেছিলেন ভারতে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর সে সময়ের প্রিয় বন্ধু ড্যান কটকি। স্টিভের বয়স তখন ২১ হবে। সময়টা ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ এর মধ্যে। সব মিলিয়ে ১ বছর ৩ মাসের এক নাটকীয় ভারত সফরে বদলে যায় স্টিভের দিকদর্শন।

জন্ম নেয় আধ্যাত্মিক স্টিভ। কর্মই সাফল্য। আর নিজের আত্মার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে অসামান্য হয়ে উঠার দৈবশক্তি তা স্টিভ খুব অল্প সময়েই উপলব্ধি করেছিলেন।

উত্তর ভারতের এসে নিজের অচেনা মায়ের সন্ধানে নেমেছিলেন স্টিভ। গোয়েন্দাগিরিও করেছেন খানিকটা সময়। তবে দেখা মেলেনি তাঁর সন্ধানের। কিন্তু পেয়েছিলেন সমাজ পরিবর্তনের দৈবমন্ত্র। সময়টা ছিল বেশ উত্তাল। চাকরি আর অর্থহীন এক অস্থির যুবক কিছু একটা উদ্ভাবনার নেশায় মত্ত। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না এ থেকে পরিত্রাণের উপায়।

বন্ধু ড্যানের ভাষ্যমতে, স্টিভ ভারতে আসার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। অনেকটা মাথায় ভূত চেপে যাওয়ার মতো অবস্থা। বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ভবঘুরে হলে গেলাম স্টিভ আর আমি। কিন্তু ঠিক কি খুঁজছিল স্টিভ তা আজও তাঁর কাছে অস্পষ্টই রয়ে গেছে। মূলত বিজ্ঞানের কিছু অমিমাংসিত তত্ত্বের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা খুঁজে পেতেই স্টিভ ভারতে এসেছিল। সঙ্গে ছিল তার ব্যক্তিউদ্দেশ্যও।

পরে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যকে ছেড়ে স্টিভ সমাজব্যবস্থার নানামুখী পরিবর্তনে আগ্রহী হয়ে উঠেন। যেমন ভাবদর্শন, আধ্যাত্মিকতা এবং জীবনের মৌলিক তত্ত্ব। এ জন্য কখনও কাটিয়েছেন রাস্তায়। কখনও আশ্রমে। আবার কখনও অতি দরিদ্র মানুষের সঙ্গে থেকেছেন দিনরাত।

এ সবই গল্প মনে হলেও এটা স্টিভের জীবনের অপ্রকাশিত সত্য। সাফল্যের এভারেস্টে পৌঁছে যিনি বিশ্বকে দিয়েছেন একের পর এক উদ্ভাবনী চমক। তাঁর অতীত জীবনের এমন ঘটনাপ্রবাহ সত্যিই অবিশ্বাস্য। কিন্তু ভারতের এ ভবঘুরে জীবন ছিল স্টিভের জীবনের সবচে মূল্যবান অভিজ্ঞতা।

এরপর নয়াদিল্লি। এখানেও স্টিভ দলে দলে ভিক্ষুকদের সঙ্গে বহুরাত কাটিয়েছেন। হয়ত নিজের প্রকৃত অচেনা মাকে খুঁজে পেতেই এমন বিচ্ছিন্ন জীবনে পা বাড়িয়েছিলেন স্টিভ। এমনকি ব্যক্তিগত গোয়েন্দাও নিয়োগ দিয়েছিলেন অচেনা মায়ের সন্ধানে।

এ খোঁজে ভারতের কাঞ্চি নামক স্থানে তিনি এক আধ্যাত্মিক নিম বাবার দর্শন পান। হয়ে উঠেন তাঁর ভক্তশ্রেষ্ঠ। পরিকল্পনা করেন একটি আলোকিত দর্শনের জন্য ধর্মাশ্রম তৈরি করবেন। কাজও শুরু করেন। কিন্তু এরই মধ্যে নিম বাবার প্রতারণাচক্রের কথা জানতে পারেন স্টিভ। আশ্রম নির্মাণের ইতি এখানেই।

পরে স্টিভ ড্যানকে বলেছিলেন, দূরে, জনশূণ্য এবং কোলাহল মুক্ত কোনো পরিবেশে তারা (স্টিভ আর নিম বাবা) আশ্রম তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেখানে মাসখানেক থেকে আলোকিত জীবনের স্বাদ পেতে চেয়েছিলেন।

এ নির্বাসিত জীবনের মাধ্যমে স্টিভ টমাস এডিসনের অনেক অমীমাংসিত তত্ত্বকে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছিলেন। সমাজব্যবস্থায় কার্ল মার্কসের দর্শনের সঙ্গে নিম বাবাব ভাবদর্শনের প্রতিফলন খুঁজতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু এ আশায় গুড়েবালি। ভাগ্য তখন স্টিভের কপালে সাফল্যের পালক তুলে দিতে মরিয়া। স্বপ্ন আর ঘোর ভাঙ্গতেই কিছু একটা করার অদম্য তাগিদে আবারও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন স্টিভ। তখনও ‘অ্যাপল’ সৃষ্টির অপেক্ষায়।

যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবার আগে ভারতে গ্রীষ্মের দাবদাহে স্টিভ এবং ড্যান দুজনেই ডায়রিয়া পরবর্তী অবসাদে ভোগেন। কঠিন এ রোগে পড়ে দুবন্ধুই স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেন তারা আরোগ্য হলে ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবেন। জনমানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।

এরপর স্টিভ আগের কর্মস্থল আটারিতে যোগ দেন। তখন তিনি ছিলেন পুরোপুরি ‘বুদ্ধিষ্ট’। এখানে তিনি কাজে একান্ত মনোযোগে নিরলস পরিশ্রম করতে থাকেন। এদিকে স্কুলবন্ধু স্টিভ ওজনিয়াকের সঙ্গে আবারও সুসম্পর্ক তৈরি হয় স্টিভের। ওজনিয়াক ওই সময় এইচপির কারিগরি বিভাগে কাজ করেন।

দীর্ঘদিন পর কাছের বন্ধুকে পেয়ে এবং ওজনিয়াকের কাজ দেখে স্টিভ মুদ্ধ হন। এরই মধ্যে ভারতদর্শনে পাওয়া ‘অ্যাপল’ সৃষ্টির কর্মযজ্ঞ তাকে অস্থির করে তোলে। অবশেষে বন্ধুকে রাজি করিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আজকের বিশ্ব কাঁপানো ‘অ্যাপল’ প্রতিষ্ঠান।

ওজনিয়াকের কারিগরি দক্ষতা আর স্টিভের ভবিষ্যৎ ভাবনায় দ্রুতই পরিচিতি পেতে থাকে ‘অ্যাপল’। এরপর শুধুই চড়াই-উতরাই। আর সাফল্যের সৌভাগ্য দুয়ার যখন খুলল তখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অ্যাপলকে।

ক্যালিফোর্নিয়ার পল অ্যাটলো শহরে অবস্থিত একটি ছোট্ট গাড়ির মেরামতখানা থেকেই এখনকার ৩৫ হাজার কোটি (৩৫০ বিলিয়ন) ডলার মূল্যমানের ‘অ্যাপল’ সৃষ্টি। অ্যাপল জন্মের অর্থই যেন শুধুই সৃষ্টি।

গত এক দশকে অ্যাপল শুধুই এগিয়েছে। পেছনে ফেলেছেন বন্ধু বিল গেটসের মাইক্রোসফটকেও। হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আর এ অকল্পনীয় সাফল্য আর বিশ্ব পরিচিতির সঙ্গে জুড়ে আছে ভারতে পাওয়া স্টিভের আধ্যাত্মিক সব দর্শন তত্ত্ব আর অলৌকিক ভবিষ্যৎ ভাবনার ক্ষমতা।

বাংলাদেশ সময় ০৬০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।