ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

আইসিটি ওয়ার্ল্ডে খণ্ডকালীন কাজ

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১১
আইসিটি ওয়ার্ল্ডে খণ্ডকালীন কাজ

ঢাকা:  ‘আমাদের অনেকেরই মানসিকতা হলো হোটেলের ওয়েটার, সেলসম্যান, ব্রান্ড প্রমোটর এসব কাজকে বাঁকা চোখে দেখা। কিন্ত দিন বদল হয়েছে।

শুধু টিউশন ছাড়াও ছাত্র জীবনে আরো অনেক কিছু করা যায়। ’ কথাগুলো বলছিলেন, বাংলালায়নের পার্ট টাইম ব্রান্ড প্রমোটরের কাজ করা তরুণী ইরা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে ৫ দিনব্যাপী ‘বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড। ’ মেলায় বিভিন্ন প্রযুক্তির পণ্যের বর্ণিল পসরা নিয়ে বিশ্বের ও দেশের নামকরা ব্রান্ডগুলো তাদের স্টল সাজিয়েছে। ইরার মতোই এসব স্টলে কাজ করছেন বেশ কিছু তরুণ-তরুণী।

ইরা ইডেন কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। ইরার ভাষায়, ‘বাঁকা দৃষ্টিভঙ্গির ফলে একটা ছেলে বা মেয়ে একটা রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, সুপারমার্কেট বা মেলায় কাজ করতে লজ্জা পান, হীনমন্যতায় ভোগেন। অথচ কোনও ভাবেই আমাদের সেটা মনে করা উচিত নয়। ’

ইরার সাথে কাজ করেন মিরপুর বাঙলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী  রিদিকা। রিদিকা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফরিদপুর থেকে ঢাকায় আসার পর আমার কোনও কাজ ছিলোনা। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মে আমার কয়েকজন বন্ধু কাজ করে। তাদের মাধ্যমেই বাংলালায়নে কাজ পেয়েছি। ’

ইরা ও রিদিকা জানালেন, প্রতিদিন সবর্নিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা তারা পান। কাজের উপর ভিত্তি করে এ টাকা দেয়া হয়।

এ ব্যপারে বাংলালায়নের ইনডাইরেক্ট সেলস এক্সিবিউটিভ এ এফ এম জিয়া হাসান বলেন, ‘আমাদের স্টলে এবার প্রায় ১০ জন ব্রান্ড প্রমোটর কাজ করছেন। তাদের অনেকেই বছরের অন্যান্য সময়ও কাজ করে থাকেস। আমাদের সাথে স্টুডেন্টরা যে কোনও সময় যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা মূলত ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়েন, স্মার্টনেস আছে, গুছিয়ে কথা বলতে পারেন এসবকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। ’

খ-কালীন কাজ শিক্ষার্থীদের জন্য কতটুকু দরকারি এ ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, লেখাপড়ার ক্ষতি না করে পার্টটাইম কাজ অবশ্যই ইতিবাচক। আমাদের মতো ছোট দেশগুলোর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা তথা চাকরির বাজারের সীমিত সুযোগ-সুবিধার কারণে এখানে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ-সুবিধা কম।

কিন্ত খণ্ডকালীন পেশা প্রথাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকায় প্রচলিত। বিদেশে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ভ্যাকেশনে এবং অনেকেই প্রায় নিয়মিত পার্টটাইম কাজ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সময়ের দাবি। এতে করে অনেক ছাত্র-ছাত্রী কাজ করতে পারেন, টিউশনির ওপর চাপ কমাতে পারেন, তারা স্বাবলম্বী হতে পারেন, হতাশা কমতে পারে, পরিবারের ওপর চাপ না দিয়েও পরিশ্রম করে একজন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। ’

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সহ সভাপতি ও বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড এর আহ্বায়ক কাজী আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন মেলায় অনেকে পার্টটাইম কাজ করেন, আমরা এ ব্যাপারটাকে উৎসাহ দেই। কারণ, তথ্যপ্রযুক্তির নেতৃত্ব দেবে তরুণরাই। তরুণরা স্বাবলম্বী হলে তা ভালো ব্যাপার বলে আমি মনে করি। ’

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যারিয়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আবিদ আহসান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘অধ্যয়ণরতদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা তো প্রাপ্ত বয়স্ক। এই বয়সে কেবলই পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। যদিও কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে নেয়া অত্যন্ত কঠিন তথা শ্রমসাধ্য বিষয়। এবং সবার পক্ষে একত্রে দুটি দিক সামাল দেওয়াও সম্ভব না।

তিনি বলেন, তবে যাদের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা আছে, তারা এভাবেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির মধ্য দিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছেন এবং এক পর্যায়ে অনায়াসেই পূর্ণকালীন উন্নত চাকরি বা ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। ’

ওরিয়েন্টালের স্টলে কয়েকজন তরুণকে দেখা গেল কাজ করতে। তারা প্রায় সবাই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদেরই একজন সেলিম আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে অধ্যয়নরতদের খণ্ডকালীন কাজের একটাই সুযোগ, আর সেটা হচ্ছে টিউশনি।

অনেক ছেলে টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ যোগাচ্ছেন, অনেকে বাড়িতেও পরিবারের জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন। এখন আরও নানা ধরনের কাজের  সুযোগ হচ্ছে। আমরা জব মার্কেটের সাথে পরিচিত হচ্ছি।  

ওরিয়েন্টালের এসিসটেন্ট ব্রান্ড ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদ বলেন, মেলায় এই সময়ের তরুণ যারা তারা একটু খোঁজখবর করলে নিজেদেরকে এ ধরনের পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারবেন সহজেই।

মনে রাখতে হবে, তরুণ বয়সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে পরবর্তী জবসলাইফে তা উপরে ওঠার সিঁড়িতে বাড়তি প্রেরণা যোগাবে। সময়ের সেই সুযোগ নেয়াই তারুণ্যের ধর্ম।

ঢাবির ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) পরিচালক অধ্যাপক জি এম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আজ যে ছেলে দেশে বাপ-মায়ের উপর জেঁকে বসেছিলো, সেই বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। কারণ, বিদেশে যাওয়ার পরে তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। অথচ দেশে একই কাজ করলে নিজের এবং পরিবারের উভয়েরই উপকার হতো, সহযোগিতা হতো। তাই জমিদারী মানসিকতা বদলিয়ে যে কোনও ধরণের কাজ করা উচিত। আমি আমার ছাত্র জীবনে তাই করেছি। ’

ইউনাইটেড কম্পিউটার সেন্টারে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অতশী। তিনি বলেন, কাজ করতে ভালো লাগছে, তবে মাঝে-মধ্যে ক্রেতারা একটু বিরক্তও করে।

একপযার্য়ে ফোন নম্বর ঠিকানা এসব জিজ্ঞেস করে, তখন একটু বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সবার একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা হওয়া উচিত, ছাত্রজীবনেই পার্টটাইম কাজের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন। সমাজ যদি এটাকে পজিটিভলি দেখে, তবে ছাত্র-ছাত্রীরা খণ্ডকালীন কাজে উৎসাহ পাবেন।

তিনি আরও বলেন, সামজিক নিরাপত্তা ও কর্ম ক্ষেত্রের পরিবেশ কর্মানুকূল করতে হবে। তাই আমরা যেন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করি, পজিটিভলি ভাবি। আর উদ্যোক্তারা অধ্যয়নরতদের কাজের সুযোগ করে দিয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।