ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

এ দেশেও ইন্টেল প্ল্যান্ট হবে

শেরিফ আল সায়ার, ই-এশিয়া থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১১
এ দেশেও ইন্টেল প্ল্যান্ট হবে

ইন্টেল সহসভাপতি জন ই. ডেভিস বাংলাদেশে। উদ্দেশ্য ই-এশিয়া২০১১।

তাকে ঘিরে দেশের তরুণ প্রযুক্তিবিদদের প্রত্যাশাও আকাশছোঁয়া। এ প্রত্যাশায় তাই নতুন প্রাণসঞ্চারও করলেন ডেভিস।

কাজের শুরুতে দেশের মজবুত দিক এবং দূর্বল দিক খুজে বের করতে হবে। তারপর দূর্বল জায়গা নির্বাচন করে কাজ শুরু করা উচিত। ই-এশিয়ায় ‘মিট দ্য টেকনোলজি লিডারস’ বক্তা ইন্টেলের সহসভাপতি এবং ইন্টেল ওয়ার্ল্ড অ্যাহেড প্রোগ্রামের প্রধান জন ই. ডেভিস এ কথাগুলোই বললেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ইন্টেলের মাননিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সকাল সাড়ে নয়টায় (৩ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের ‘হল অব ফেম’ হয়ে ওঠে দর্শকপূর্ণ। ঠিক সে মুহূর্তে ড.জাফর ইকবাল মঞ্চে উঠেন জন ই. ডেভিসকে নিয়ে। মিট দ্য টেকনোলজি লিডারস মঞ্চে ড. জাফর ইকবাল তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে জন ই. ডেভিসকে পরিচয় করিয়ে দেন।

দীর্ঘ এক ঘণ্টার ভাষণে ই. ডেভিস ইন্টেলের বিভিন্ন কারিগরি সাফল্যেও দিক তথ্যচিত্র দিয়ে উপস্থাপন করনে। ইন্টেল সর্বপ্রথম ১৯৭৫ সালে মেমোরি নিয়ে কাজ শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে আইবিএমকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় ইন্টেল।

১৯৮৫ সালের দিকে ব্যবসায়ীয় বিপর্যয়ে পড়ে এ প্রতিষ্ঠানটি। সবাই তখন চিন্তায় পড়ে যায়। সেই মুহূর্তে ‘মাইক্রোপ্রসেসর’ নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইন্টেল। প্রতিষ্ঠানটি এর কিছুদিন পরই আবারও ঘুরে দাঁড়ায়।

ই. ডেভিস প্রাণবন্ত ভাষায় বলেন, দিন যত বাড়তে থাকে ইন্টেল ততই নিত্যনতুন ভাবনা (আইডিয়া) নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। ইন্টেল হার্ডওয়্যার সংশ্লিষ্ট সমাধানে কাজ করে। তবে মানুষের ঘরে ঘরে কম্পিউটার কী করে আরও সহজে পৌঁছে দেওয়া যায় তা নিয়ে কাজ করতে গিয়েই ‘ইন্টেল ওয়ার্ল্ড অ্যাহেড প্রোগ্রাম’ এর জন্ম।

তবে তার আগে ‘ইনসাইড’ নামে নতুন প্রকল্প শুরু করে ইন্টেল। তখন সময়টা ১৯৯১। ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ব্র্যান্ড তৈরির উদ্যোগ নেয় ইন্টেল। আর সেটাই এখন সবার কাছে ‘পেন্টিয়াম’ নামে পরিচিত।

ইন্টেল ওয়ার্ল্ড অ্যাহেড সম্পর্কে ই. ডেভিস বলেন, মোট চারটি বিষয় নিয়ে এ প্রোগ্রাম কাজ করে। এগুলো হচ্ছে অ্যাকসেস, কানেক্টিভিটি, শিক্ষা এবং কনটেন্ট। বাংলাদেশে ইন্টেল এখন অ্যাকসেস নিয়ে কাজ করছে।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে যাতে কমপিউটার পৌঁছাতে পারে এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে ইন্টেল কাজ করছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইন্টেল অবদান রাখার চেষ্টা করছ। তবে কানেক্টিভিটি নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করা এখনও সম্ভব হয়নি। এর কারণ বাংলাদেশে এখনও থ্রিজি চালু হয়নি। এটা যত দ্রুত চালু হবে ইন্টেল তত দ্রুতই কানেক্টিভিটি নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবে।

জন ই. ডেভিস মানুষের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, ইন্টেল অনেক দেশেই কাজ করছে। চেষ্টা করছি একে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে। ইন্টেল বিশ্বেও প্রতিটি দেশের জীবনমান উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়।

বক্তব্যের একেবাওে শেষদিকে জন ই. ডেভিস বলেন, ইন্টেল বিশ্বেও প্রতিটি মানুষের কাছে কমপিউটার পৌঁছে দিতে চায়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উন্নত করতে যা যা করা প্রয়োজন তার সব কিছুই করতে ইন্টেল সচেষ্ট থাকবে।

আলোচনা শেষে শুরু হয় প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। ড. জাফর ইকবাল দর্শকদের কাছ থেকে প্রশ্ন নেন। শুরুতেই একজন ফ্রিল্যান্সার ডেভিসকে প্রশ্ন করে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ইন্টেলের সব পণ্যের দাম কমানো যায় কি না। এ প্রসঙ্গে ডেভিস বলেন, ইন্টেল এ বিষয়ে কাজ করছে। ভিয়েতনামে ইন্টেল এ ধরনের একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও এ প্রকল্প নিয়ে ইন্টেল কাজ করবে।

ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার পর বাইরের দেশ থেকে ৫০০ ডলারের বেশি টাকা দেশে আনা যায় না। সরকার এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? এ প্রশ্ন নিয়ে হল অব ফেমে দর্শক সারিতে থেকে করতালি দিয়ে এ প্রশ্নকে স্বাগত জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান মঞ্চে উঠে আসেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অনলাইন অর্থ বিনিময়ে পেপলের সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা আসতে রাজি হয় নি।

এখানে তো সরকারের কিছু করার নেই। তবে একটা সমাধান তো বের করতেই হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে এর একটি সমাধান দিতে। প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, আজকের এ আয়োজন তরুণ প্রজন্মের জন্যই। তাদের প্রশ্ন শুনতেই আমি এখানে এসেছি। এবং মনে করি, এ দেশটা বদলে দেওয়ার জন্যই তোমরা জন্ম।

অপর এক দর্শক ডেভিসকে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে ইন্টেল পণ্য উৎপাদন শুরু হবে কি না। এ বিষয়ে ই. ডেভিস বলেন, অনেক বাংলাদেশি ইন্টেলের সঙ্গে কাজ করেন। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ছয়টি দেশে ইন্টেলের পণ্য উৎপাদন কারখানা আছে। বাংলাদেশও একদিন ইন্টেলের উৎপাদন কারখানা হিসেবে অবশ্যই পরিচিতি পাবে।

অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ পর্যায়ে প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এ সেমিনারের সঞ্চালক ড.জাফর ইকবাল এবং জন ই. ভেডিসকে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বহুল আলোচিত প্রতীক্ষিত এ সেশনের ইতি টানেন।

বাংলাদেশ সময় ১৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১১    

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।