ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

সবাইকে নিয়ে সবার ‘উই আর বাংলাদেশ’

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯
সবাইকে নিয়ে সবার ‘উই আর বাংলাদেশ’

ঢাকা: ‘সবাইকে নিয়ে সবার বাংলাদেশ’ শীর্ষক ধারণাকে সামনে রেখে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠত হয় ফেসবুকভিত্তিক কমিউনিটি গ্রুপ ‘উই আর বাংলাদেশ’ বা ওয়াব। প্রতিষ্ঠার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে গ্রুপটি। বিশেষ করে ‘মানবতার দেয়াল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনলাইন-অফলাইন দুই জায়গায়ই আলোচিত নাম হয়ে ওঠে ওয়াব।

বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য মোহাম্মদ আলী আকবরের হাতে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রুপটি। চালুর অল্পদিনের মধ্যেই গ্রুপে সদস্য সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়।

বর্তমানে প্রায় পৌনে দুই লাখ সদস্য রয়েছে ওয়াব’র।  

গত বছরের নভেম্বরে নেত্রকোণা জেলায় গ্রুপের এক সদস্য ‘মানবতার দেয়াল’ প্রতিষ্ঠা করলে দ্রুত ভাইরাল হয় বিষয়টি। সেইসঙ্গে পরিচিতি বাড়তে থাকে প্ল্যাটফর্মটির। পরে সরাসরি গ্রুপের উদ্যোগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয় মানবতার দেয়াল। এসব দেয়ালে নিজেদের অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যেতে পারেন যেকোনো ব্যক্তি। আর সেসব জিনিস যার প্রয়োজন তারা নিয়ে নিতে পারেন অনায়াসেই। এভাবেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মানবতার দেয়াল। রাজধানীর বনানী বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনির পাশে এবং কয়েকটি এলাকায় আছে এমনি মানবতার দেয়াল।  

সদস্য সংখ্যা এবং কাজের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওয়াব’র অ্যাডমিন প্যানেলে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাহমুদ, সুলতান মাহমুদ সুজন, মাহবুব কবির মিলন, মুফতি মায়ীদ রহমান, নাহিদ ইসলাম, খালিদ সাইফুল্লাহসহ ২৫ জনের একটি অ্যাডমিন ও মডারেটর প্যানেল রয়েছে ওয়াবের।  সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনে সাহায্য-সহযোগিতা করা, আইনি সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া, চিকিৎসাসেবাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করে যাচ্ছেন অ্যাডমিন প্যানেলের সদস্যরা। গ্রুপ সদস্যদের বাইরের কমিউনিটির জন্যও অন্যান্য উদ্যোগ আছে ওয়াবের।  

ওয়াব প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য নিয়ে মোহাম্মদ আলী আকবর বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের একটি গ্রুপ নিয়ে কাজ করতাম আমি। সেসময়েই পরিকল্পনা আসে সব পেশা ও প্ল্যাটফর্মের মানুষকে একটি গ্রুপের আওতায় নিয়ে আসা। এতে করে নেটওয়ার্কিং যেমন বাড়বে, তেমনি একে অপরের সাহায্যে বা প্রয়োজনে অন্যরা এগিয়ে আসতে পারবেন।  

ওয়াবের অ্যাডমিন খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, প্রতিদিন গ্রুপে সাহায্য চেয়ে শতাধিক পোস্ট আসে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ পোস্ট আসে রক্তের সন্ধান চেয়ে। মাসে গ্রুপটিতে সদস্যদের মোট পোস্ট সংখ্যা তিন হাজারের ওপরে। তবে অনুমোদনের বেলায় কঠোর নিয়ম অনুসরণ করা ওয়াব শেষ পর্যন্ত চার থেকে সাড়ে চারশ’ পোস্ট অনুমোদন দেয়। মাসে সদস্যরা প্রায় ৮ মিলিয়ন মন্তব্য প্রকাশ করে থাকেন এই গ্রুপটিতে।  

খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, অনেকেই ফেসবুকে ভাইরাল বা বিখ্যাত হওয়ার জন্য অনেক সময় ভুয়া, বিভ্রান্তিমূলক বা সাজানো ঘটনা পোস্ট করেন। আমাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যেন কোনো গুজব ছড়ানো না হয় সেজন্য কঠিন নিয়ম অনুসরণ করি আমরা। যখন কোনো বিষয়ে পোস্ট পাই আমরা সেটিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করি। সত্যতা পেলে তবেই পোস্ট অনুমোদন করা হয়।  

সম্প্রতি দু’টি অপহরণের ঘটনায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভিকটিমদের উদ্ধারে কাজ করে ওয়াব। এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে সংঘঠিত বিভিন্ন সাইবার ক্রাইম ইস্যুতেও ভিকটিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসে গ্রুপটি। পুলিশ, র‍্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা আছেন গ্রুপটিতে। ফলে সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যা বা হয়রানিমূলক পোস্টে পাওয়া যায় দ্রুত সমাধান। আর এসব সমাধানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে অ্যাডমিনরা কাজ করে বলে দাবি করেন গ্রুপ প্রতিষ্ঠাতা আলী আকবর।  

তবে সমস্যার সমাধান হওয়া এবং সবার প্রশংসাই কাজের প্রধান উৎস বলে জানান ওয়াবের অ্যাডমিন প্যানেলের সদস্যরা।  

নাহিদ ইসলাম বলেন, ওয়াবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনকল্যাণে কাজ করা, যেকোনো নিপীড়িত মানুষের পাশে থেকে সাহায্য করা। একজন সাহায্য বা সমাধান পাওয়া ব্যক্তি যে মানসিক প্রশান্তি পান সেটিই আমাদের কাজের উদ্দেশ্য। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের যারা আছেন তাদের কাছে যখন আমরা কোনো সাহায্যের জন্য যাই, অর্থ্যাৎ কোনো সদস্যের সমস্যা সমাধানে যাই, তারা আমাদের কাজের ব্যাপক প্রশংসা করেন। আমাদের বাহবা দেন। এগুলো আমাদের আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহ দেয়। আমরা স্বপ্ন দেখি ওয়াব একদিন প্রতিটি বাঙালির ভরসার প্রতীক হবে।  

সবশেষে অ্যাডমিন প্যানেলের সদস্যরা বলেন, এই দেশটা আমাদের সবার। তাই আমরা সবাই মিলেই বাংলাদেশ। আর তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই আমরা।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।