পাকিস্তানে পেশোয়ার পুলিশ লাইনস এলাকার একটি মসজিদে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫৭ জন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে বিস্ফোরণটি ঘটে।
লেডি রিডিং হাসপাতালের (এলআরএইচ) মুখপাত্র মোহাম্মদ অসিম হতাহতের এই সংখ্যার তথ্য নিশ্চিত করেন। আহত বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলেও জানান তিনি।
পেশোয়ারের কমিশনার রিয়াজ মেহসুদ বলেছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক লোক চাপা থাকায় মসজিদের ভেতরে উদ্ধার অভিযান চলছে।
এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, শহরের হাসপাতালগুলোতে জরুরি পরিস্থিতি জারি করা হয়েছে। আহতদের সর্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পেশোয়ার ক্যাপিটাল সিটি পুলিশ কর্মকর্তা (সিসিপিও) মুহাম্মদ ইজাজ খান গণমাধ্যমে বলেন, বিস্ফোরণের পড়ে মসজিদের ছাদ ভেঙে পড়ে। বেশ কয়েকজন এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। উদ্ধারকারীরা তাদের বের করে আনতে চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, মসজিদের প্রধান অংশ যাতে ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষের সংকুলান হতো, সেই অংশটিই ভেঙে পড়েছে। বাকি অংশ অক্ষত রয়েছে।
কী ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছে- জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, বিস্ফোরকের গন্ধ শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
খান জানান, বিস্ফোরণের সময় ৩০০ থেকে ৪০০ পুলিশ সদস্য ওই অঞ্চলে উপস্থিত ছিলেন। এটি স্পষ্ট যে, নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল।
তিনি জানান, হতাহতদের লেডি রিডিং হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
খানের পাশে দাঁড়িয়ে কেপি গভর্নর হাজি গুলাম আলি এই বিস্ফোরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান। আহতদের রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে পেশোয়ারবাসীর প্রতি তিনি আহ্বান।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) কর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ পেশোয়ারে এসেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ।
পেশোয়ারে পুলিশ সদরদপ্তর হলো শহরের অন্যতম নিয়ন্ত্রিত এলাকা। এই এলাকায় ইন্টেলিজেন্স ও কাউন্টার টেররিজম ব্যুরো। এর কাছেই আঞ্চলিক সচিবালয়।
এটি এখনও অনিশ্চিত যে, বোমা বা বিস্ফোরকটি মসজিদের ভেতরেই রাখা ছিল কি না। নাকি এটি কোনো আত্মঘাতী হামলা ছিল। কোনো গোষ্ঠী এখনও এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
ডনের সংবাদদাতা বিস্ফোরণস্থল থেকে জানান, স্থানীয় সময় সোমবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বিস্ফোরণটি ঘটে। তখন জোহরের নামাজ চলছিল। তিনি বলেন, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ স্কোয়াডের সদস্যরা মসজিদের ভেতরে ছিল।
এই সংবাদদাতা বলেন, মসজিদ ভবনের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। নামাজে যারা সামনের সারির দিকে ছিলেন তারাই এর নিচে চাপা পড়েন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একটি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, লোকজন ওই মসজিদের ভাঙা দেয়ালের চারপাশে ভিড় করছেন।
ওই এলাকায় গভর্নরস হাউজ, মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে যাওয়ার সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী ডনকে বলেন, তিনি মসজিদ চত্বরে ওযু করছিলেন। এমন সময় বিস্ফোরণটি ঘটে। তিনি ছিটকে গিয়ে সড়কে পড়েন। তিনি বলেন, আমার কান স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণে মসজিদ সংশ্লিষ্ট ভবনের জানালা ভেঙে যায়।
বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে যাওয়া শহিদ আলি নামে ৪৭ বছর বয়সী এক পুলিশ সদস্য বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ইমাম নামাজ শুরু করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরণটি ঘটে। আমি দেখলাম আকাশে কালো ধোঁয়া। দৌড়ে আমি নিজের জীবন রক্ষা করি।
তিনি বলেন, লোকজনের চিৎকার এখনও আমার কানে বাজছে। তারা সাহায্য চেয়ে চিৎকার করছিল।
এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই বিস্ফোরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, এই ঘটনায় দায়ী হামলাকারীদের ইসলামের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, যারা পাকিস্তানকে রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন, তাদের লক্ষ্য করে জঙ্গিরা ভয় সৃষ্টি করতে চায়।
এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসলামাবাদে নিরাপত্তার উচ্চ-সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইসলামাবাদের ইন্সপেক্টর জেনারেল আকবর নাসির খান এক এক নির্দেশনায় সতর্কতা জারি করেন। ইসলামাবাদ পুলিশ এক টুইটে এই কথা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
এমএইচএস