ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নিজের হাতে ছেলের লাশ সরিয়েছি, বাড়ি নিয়ে যাবো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৩
নিজের হাতে ছেলের লাশ সরিয়েছি, বাড়ি নিয়ে যাবো

শুক্রবার রাতে ওড়িশার বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মারা গেছেন সাগাইয়ের বড় ছেলে সুন্দর। তারা চেন্নাইগামী সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের সাধারণ কোচে উঠেছিলেন।

সাগাই চেন্নাইয়ে কাজ করতেন, পাশাপাশি ছেলের জন্যও কাজ খুঁজছিলেন। তাই তাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

এ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন সাইগাইয়ের শ্যালক দিলীপ। কোনোভাবে বেঁচে যান সাগাইয়ের ছোট ছেলে। ছেলে-শ্যালক হারিয়ে সাগাইয়ের অনুভূতি হারিয়ে গেছে। বালেশ্বরের সোরোতে কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে (সিএইচসি) দুই পরমাত্মীয়ের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।

বালেশ্বরে তিন ট্রেনের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অনেকেই। সাগাইয়ের মতো আরও বহু মানুষ তাদের স্বজনদের মরদেহের পাশি দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ বিলাপ করছেন; কেউ অপেক্ষা করছেন কখন আত্মীয়ের দেহ পাবেন, কখন বাড়ি ফিরবেন আর কখনই বা দেহভষ্ম করবেন।

সিএইচসি হাসপাতালে সাগাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সাগাই ভারতীয় এ সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘আমরা নয়জনের একটি দল চেন্নাই যাচ্ছিলাম। আমি সেখানে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করি। ডাবল ডিউটি করলে ১৭ হাজার রুপি মাইনে পাই। আমাদের গ্রামে কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ নেই। তাই আমি আমাদের পরিবারের জন্য অতিরিক্ত আয় নিশ্চিত করতে  দুই ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমার শ্যালকও আমার সঙ্গে ছিল।

কিন্তু নিয়তি আমাদের জন্য অন্য কিছু পরিকল্পনা করেছিল যা আমি অনুমান করতে পারিনি। দুর্ঘটনায় আমার ছেলে ও শ্যালক মারা গেছে। নিজের হাতে ছেলের লাশ সরিয়েছি। আমার কাছে তেমন অর্থ নেই। কিন্তু আমি তাদের দেহ আমাদের গ্রামে নিয়ে যাবো। ’

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশ থেকে ১১ জনের একটি দল নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরে গিয়েছিলেন হাওড়ার তাপসী সর্দার (২২)। প্রায় সাত মাস এ অঞ্চলে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করের তারা। বাড়ি ফিরছিলেন যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসে (সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস) ট্রেনে চড়ে। যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটে হাওড়া স্টেশন সেখান থেকে চার ঘণ্টা দূরের পথ। পরিবারের সঙ্গে মিলিত হরে মুখিয়ে ছিলেন তাপসী। কিন্তু হঠাৎ দুলে ওঠে সব কিছু। স্তম্ভিত হয়ে পড়ে কিছু সময়।

সিএইচসি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাপসী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানান, তাদের বগি উল্টে গিয়েছিল। সম্বিৎ ফিরে পেতেই লোকজনের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় শরীরের কিছু অংশে ব্যথা অনুভব করেন। তিনি বলেন, আমার মাথায় ও মুখে আঘাত লেগেছে, তবে আমি ভালো আছি। আমাদের গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরাও ভালো আছেন। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে পৌঁছেতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি।

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলার গোপাল মিরধা (৪০) ও তার স্ত্রী অঞ্জু দেবীও সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের সাধারণ কোচে চড়ে বেঙ্গালুরু থেকে ফিরছিলেন। তারা দুই মাস আগে একটি নার্সারিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। গোপালের ছেলে ও অসুস্থ মা বাড়িতেই ছিলেন। এ দুর্ঘটনায় গোপাল তার পায়ে ও মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তার স্ত্রীও ভালো আছেন। তবে তাদের বগির অনেক লোক ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।

গোপাল জানান, তার মা বাড়িতে, অসুস্থ; ঘটনাটি সম্পর্কে তাকে জানাতে চান না গোপাল। দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে যান।

মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে সোরো সিএইচসি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা সুভাষ শেখ (৪৩)। তিনি কাজ করতেন কেরালার পট্টম্বিতে একটি পাথরের কারখানা। চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়েছিলেন তিনি।

তিন ট্রেন দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি আহত রোগী ভর্তি হয়েছেন সোরোতে কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে (সিএইচসি)। রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ে চিকিৎসকদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তাই হাসপাতালে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রদের নিযুক্ত করেছে রাজ্য সরকার।

ওড়িশায় ট্রিপল ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৬১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযানও শেষ হয়েছে। এখন সেখানকার রেললাইন পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে। ভারতীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এ তথ্য জানিয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে এএনআই।

ঘটনাটি কেন ও কীভাবে ঘটলো সেটি জানতে উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।

শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গা বাজার এলাকায় তিন ট্রেনের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাটি ঘটে। ট্রেনগুলোর একটি শালিমার থেকে চেন্নাইগামী সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস, অপরটি বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং অন্যটি মালবাহী ছিল।

কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি স্পষ্ট নয় এখনও। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়, কয়েকটি বগি বিপরীত লাইনে আড়াআড়িভাবে পড়ে যায়। এ সময় হাওড়া থেকে আসা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস সেখানে পৌঁছায়। পরে সেটির সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বগিগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। একই সিগনালে থাকা একটি মালবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে এ ট্রেনটির ভূমিকা কি ছিল সেটিও নিশ্চিত নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।